বিশেষ প্রতিনিধি দেশে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে। বাড়ছে মৃত্যুও। সরকারি তথ্য অনুযায়ী, গত এক মাসের ব্যবধানে ঢাকার বাইরে রোগী বেড়েছে চার গুণ।গতকাল শুক্রবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তর নতুন করে আরো ২৪০ জন ডেঙ্গু রোগীর হাসপাতালে ভর্তির তথ্য দিয়েছে।এ নিয়ে চলতি বছর ডেঙ্গুতে আক্রান্তের সংখ্যা ১৬ হাজার ৯২-তে পৌঁছল। এর মধ্যে ৯ হাজার ৯১১ জন আক্রান্ত হয় সেপ্টেম্বরে। বর্তমানে এক হাজার ৯১৬ জন ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তাদের মধ্যে ৪৬৮ জন ঢাকার বাইরে চিকিৎসাধীন।সরকারের দেওয়া তথ্য মতে, গত আগস্টে ঢাকার বাইরে আক্রান্ত রোগী ছিল ৬৫৩ জন। সেপ্টেম্বরে আক্রান্ত হয় দুই হাজার ৭২০ জন। এতে এক মাসের ব্যবধানে ঢাকার বাইরে ডেঙ্গু রোগী প্রায় চার গুণ বেড়েছে।সেপ্টেম্বরে দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি ছিল ৯ হাজার ৯১১ জন। আগস্টে ভর্তি ছিল তিন হাজার ৫২১ জন। এতে রোগী বেড়েছে ১৮১ শতাংশ। একই সময় মৃত্যু বেড়েছে ২০৯ শতাংশ। গত মাসে আক্রান্ত হয়ে মারা যায় ৩৪ জন। এর আগের মাসে মৃত্যুবরণ করে ১১ জন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যে বলা হয়, গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন আক্রান্ত রোগীদের নিয়ে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বেড়ে ১৬ হাজার ৯২-তে পৌঁছেছে। এ পর্যন্ত মোট ১৪ হাজার ১২০ জন রোগী হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়েছে। চলতি বছর ডেঙ্গুতে সারা দেশে ৫৫ জন মারা গেছে। এর মধ্যে ২৭ জন ঢাকার, ১৮ জন কক্সবাজারের, চারজন বরিশালের এবং ছয়জন চট্টগ্রামের বাসিন্দা।চলতি বছরের শুরু থেকে ২৯ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত হাসপাতালে ভর্তি সাত হাজার ৪৮২ জন ডেঙ্গু রোগীর তথ্যের ভিত্তিতে একটি জরিপ করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। এতে দেখা গেছে, আক্রান্ত রোগীদের ৪৭.৮ শতাংশ ঢাকা দক্ষিণের। উত্তরের ৩৬.৯ শতাংশ। ঢাকার বাইরে ১৫.৩ শতাংশ। আক্রান্ত ব্যক্তিদের মধ্যে শিশু ও তরুণ বেশি।স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের জরিপে ঢাকার ঝুঁকিপূর্ণ এলাকার মধ্যে রয়েছে মুগদা, মিরপুর, উত্তরা, খিলগাঁও ধানমণ্ডি, যাত্রাবাড়ী ও কেরানীগঞ্জ।জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ বে-নজির আহমেদ বলেন, ডেঙ্গু পরিস্থিতি ধীরে ধীরে আরো খারাপ হবে। এর দুটি কারণ। এক. ডেঙ্গু এখন আর ঢাকাকেন্দ্রিক নয়। দ্বিতীয় হলো জলবায়ুর পরিবর্তন। এ কারণে অক্টোবর মাসজুড়েই এ অবস্থা চলবে। এতে এটি যে অক্টোবরে আবার রেকর্ড করবে না, তা বলা যাবে না। এমনটি নভেম্বর-ডিসেম্বর পর্যন্ত চলতে পারে। এ জন্য আমাদের প্রয়োজনে জাতীয় কর্মকৌশল প্রণয়ন করতে হবে। সেখানে সর্বোচ্চ পলিটিক্যাল কমিটমেন্ট দরকার।
তিনি বলেন, ২২ বছর ধরে ঢাকায় ডেঙ্গু হচ্ছে। অর্থাৎ ঢাকার মানুষ এক-দুই তিন সেরুটাইপ ডেঙ্গু দ্বারা এরই মধ্যে আক্রান্ত হয়েছে। একমাত্র সেরুটাইপ চার হলে তাদের হবে। ঢাকার বাইরে এখনো একটা সেরুটাইপ দ্বারা অনেকে আক্রান্ত হয়নি। ফলে তাদের সম্ভাবনা আছে চারবার আক্রান্ত হওয়ার।বে-নজির আহমেদ বলেন, ঢাকা শহরে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার সক্ষমতা রয়েছে, কিন্তু ঢাকার বাইরে চট্টগ্রাম, রাজশাহী, রংপুর, সিলেট সেখানে সক্ষমতা শূন্যের কাছাকাছি। ফলে কার্যকর ব্যবস্থা না নিলে পরিস্থিতি আরো জটিল আকার ধারণ করতে পারে।কীটতত্ত্ববিদ ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক কবিরুল বাশার বলেন, বাংলাদেশে ১০ হাজারের বেশি হাসপাতাল রয়েছে। এর সবই স্বাস্থ্য অধিদপ্তরকে সব হাসপাতাল তথ্য দেয় না। ফলে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর প্রকৃত সংখ্যা জানা যাচ্ছে না। আবার অনেক ডেঙ্গু রোগী বাসায় চিকিৎস নেয়। তার তথ্যও স্বাস্থ্য অধিদপ্তর পায় না।তিনি বলেন, ‘আমরা যদি হটস্পট ম্যানেজমেন্ট করতে না পারি, আগামী ১৫ দিনে সেটি কমবে বলে মনে হচ্ছে না। ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা কমাতে হলে হটস্পট ম্যানেজমেন্ট দরকার। অর্থাৎ হাসপাতাল থেকে ডেঙ্গু রোগীর ঠিকানা সংগ্রহ করে রোগীর এলাকায় মশা নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা করা এবং জনসচেতনতা বাড়াতে হবে। ’