সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি অন্যের বাড়ি থেকে সুতা এনে দর্জির কাজ করে শরিফকে বড় করেছিলেন তার মা। শরিফ চাকরি পাওয়ায় পর পরিবারের একমাত্র অবলম্বন ছিলেন তিনি। কিন্তু শান্তিরক্ষা মিশনের দায়িত্ব পালনের সময় সোমবার রাতে মাটিতে পুতে রাখা বোমা বিস্ফোরণে আহত হয়ে পরে মঙ্গলবার দুপুরে মারা যান তিনি। বুধবার সকালে সিরাজগঞ্জের বেলকুচি উপজেলার পৌর শহরের বেঁড়াখারুয়া গ্রামে শরিফের বাড়িতে যাওয়ার পর তার মা এসব কথা জানান।
গ্রামের লোকজন বাড়িতে এসে পরিবারের সদস্যদের সান্তনা দেওয়ার চেষ্টা করছেন।নিহত ছেলের ছবি বুকে জড়িয়ে শোকে কাতর মা পাঞ্জুয়ারা বেগম শুধু কান্না করছেন। তিনি বলেন, ‘অন্যের বাড়ি থেকে সুতা এনে দর্জির কাজ করে ছেলেকে বড় করেছিলাম। আমার ওই ছেলেও তাঁতের কাজ করতো, ওর বাবা বেকার, ছোট ছেলেও তাঁতের কাজ করে। ছোট মেয়ে লাকি এইচএসসিতে পড়ছে। চাকুরী নেওয়ার পর বড় ছেলের ওপরই ভরসা ছিল আমার। সেই ছিল পরিবারের একমাত্র অবলম্বন। বিদেশ থেকে এসে ছোট বোনকে বিয়ে দিতে চেয়েছিল, আমরা পাত্রও ঠিক করে রেখেছি। কিন্তু চাকুরী করা অবস্থায় বিদেশে গিয়ে সে মারা গেছে। আমার এ সংসার এখন কেমনে চলবে, সরকার যদি সহযোগীতা না করে, তাহলে আমাদের পরিবার ধ্বংস হয়ে যাবে। ‘মাত্র এক বছর আগে সেনা সদস্য শরিফ বিয়ে করেছেন। সংসারে এখনো কোনো সন্তান হয়নি। স্বামীর শোকে পাথর স্ত্রী সালমা খাতুন শুধু কান্না করছেন আর বলছেন, ‘আল্লাহ আমার স্বামীরে নিয়ে গেছে, আমি এখন কি করমু। ‘
নিহত শরিফের ছোট ভাই তাঁত শ্রমিক কাওসার তালুকদার বলেন, ‘বড় ভাইয়ের আয় দিয়েই আমাদের সংসার চলতো। সে মারা গেছে। সেনাবাহিনী বা সরকার যদি আমাকে একটা চাকুরী দিতো, তাহলে আমি পরিবারের হাল ধরতে পারতাম। ‘এদিকে শরিফের বাবা লেবু তালুকদারের কান্না যেন থামছে না। তিনি বলছেন, ‘আমরা গরীব মানুষ, আমি নিজেও বেকার, সেনাপ্রধান যদি আমার ছোট ছেলেকে একটা চাকুরী দিতো, তাহলে বাঁচতাম। হয়তো সংসারটা চলতো। তা না হলে আমরা একেবারে পথে বসে যাব। ‘
প্রতিবেশী মাহমুদুল হাসান বলেন, ‘বুধবার সকালে বগুড়া ক্যাম্পের সেনাবাহিনীর একটি টিম বাড়িতে এসেছিল। তারা সেনাপ্রধানের পক্ষ থেকে শরিফের শোকাহত পরিবারকে সান্তনা দিয়েছেন এবং নগদ এক লাখ টাকা সহায়তা প্রদান করেছেন। এ ছাড়াও শরিফের কর্মস্থল সিলেট সেনাবাহিনীর একটি টিম এসে তার পরিবারের সাথে সাক্ষাত করেছেন। ‘দুই ভাই ও এক বোনের মধ্যে শরিফ ছিল সবার বড়। এসএসসি পাশের পর ২০১৭ সালে তিনি সৈনিক হিসেবে সেনাবাহিনীতে যোগ দেন। সিলেট সেনানিবাসে তার কর্মস্থল ছিল। এক বছরের জন্য মধ্য আফ্রিকায় শান্তিরক্ষা মিশনে যোগ দিতে গত বছরের ২ ডিসেম্বর দেশত্যাগ করেন শরিফ।