নীলফামারী প্রতিনিধি মধ্য আফ্রিকা প্রজাতন্ত্রে শান্তিরক্ষা মিশনের নিহত তিন সেনা সদস্যের মধ্যে একজন জাহাঙ্গীর আলম। মারা যাওয়ার কয়েক ঘণ্টা আগেও তিনি কথা বলেছিলেন পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে। এ সময় স্ত্রী শিমু আক্তারকে তিনি বলেছিলেন, ‘চিন্তা করিও না, আমি ভালো আছি। শীঘ্রই বাড়ি যাব, তখন অনেক কথা হবে।একইভাবে তিনি কথা বলেছিলেন মা গোলেনুর বেগমের সঙ্গে। মা ছেলেকে (জাহাঙ্গীর) বলেছিলেন, ‘বাবা বাড়ি আইসো, অনেক দিন তোমাকে দেখি নাই। ’ উত্তরে ছেলে বলেছিলেন, ‘মা আর দুই মাস পর বাড়ি আসব। ’সেই জাহাঙ্গীর আলম বাড়িতে আসবেন ঠিকই, কিন্তু আসবেন পেরেক ঠোকা কফিনে নিথর দেহ হয়ে। তাকে শেষ একনজর দেখবেন স্ত্রী, বাবা-মা, ভাই-বোন, প্রতিবেশী, আত্মীয়-স্বজনসহ সকলে। কিন্তু মনে গেঁথে রাখা অনেক কথা আর বলা হলো না স্ত্রী, মা-বাবাসহ আপনজনদের।গত মঙ্গলবার মধ্য আফ্রিকা প্রজাতন্ত্রে শান্তিরক্ষা কার্যক্রম পরিচালনাকালে পুঁতে রাখা বোমা বিস্ফোরণে তিন বাংলাদেশি শান্তিরক্ষী নিহত হন। তাদের মধ্যে একজন সৈনিক জাহাঙ্গীর আলম। নীলফামারীর ডিমলা উপজেলা সদরের দক্ষিণ তিতপাড়া গ্রামের লতিফর রহমানের ছেলে তিনি। পাঁচ ভাইয়ের মধ্যে তিনি ছিলেন চতুর্থ।
জাহাঙ্গীর আলমের বড় ভাই সেনা সদস্য আবুজার রহমান জানান, ২০১৫ সালের ২৪ জানুয়ারি বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে যোগ দিয়েছিলেন জাহাঙ্গীর। তিনি এক বছর আগে বিয়ে করেছেন এবং ১০ মাস আগে (২০২১ সালের ডিসেম্বর মাস) মধ্য আফ্রিকান প্রজাতন্ত্রে শান্তিরক্ষা মিশনে যান। সেখানে ব্যানব্যাট-৮ এলাকার উইক্যাম্পে ছিলেন তিনি। শান্তিরক্ষা মিশনের দায়িত্ব পালনের সময় সোমবার রাতে মাটিতে পুঁতে রাখা বোমা বিস্ফোরণে তিনি আহত হন। পরে মঙ্গলবার দুপুরের দিকে জাহাঙ্গীর মারা যান।জাহাঙ্গীরে মৃত্যুর খবরে বাড়িতে চলছে শোকের মাতম। মঙ্গলবার শুরু হওয়া সে মাতম থামছে না কোনোভাবেই। আজ বুধবার সকালেও ওই বাড়িতে স্ত্রী শিমু আক্তারসহ পরিবারের সদস্যদের আহাজারি দেখা গেছে।
বিয়ের মাত্র এক বছরের মধ্যে স্বামীকে হারানোর শোকে পাগলপ্রায় জাহাঙ্গীরের স্ত্রী শিমু। এ সময় কান্নার প্রলাপে তিনি বলেন, ‘ও আল্লাহ, এমন কেন হলো! ও আমাকে বলেছিল তুমি চিন্তা করিও না, আমি ভালো আছি। দ্রুত বাড়ি যাব, তখন কথা হবে। ও আল্লা এখন কে কথা কইবে আমার সঙ্গে?’পরিবারের সদস্যরা জানান, গত সোমবার রাত ১০টার দিকে স্ত্রী, বাবা-মাসহ পরিবারের অন্য সদস্যদের সঙ্গে কথা হয় জাহাঙ্গীরের। এ সময় তার স্ত্রী বলেছিলেন, ‘তুমি তো ব্যস্ত থাকো, ফ্রি হলে ফোন দিও, নিজের প্রতি খেয়াল রাখিও। ’
ছেলের অকালমৃত্যুতে বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েছেন বাবা লতিফর রহমান। মা গোলেনুর বেগমের কান্না থামছে না কোনোভাবেই। তিনি কান্নার প্রলাপে বলেন, ‘চাকুরি থাকি মোর ছাওয়া যে বাড়ি আসিবার আগোত লাশ হইল। ও আল্লাহ এই শোক মুই এলা সইম কেমন করি?’ এ সময় তিনি দ্রুত ছেলের লাশ দেশে আনার দাবি জানান।ডিমলা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. লাইসুর রহমান জানান, নিহত জাহাঙ্গীর আলমের এক ভাই সেনা সদস্য। তিনি থানায় জাহাঙ্গীর আলমের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু জানানো হয়নি থানায়।