রাজবাড়ী প্রতিনিধি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নিয়ে কটূক্তি করার অভিযোগে রাজবাড়ীর রক্তকন্যা খ্যাত সোনিয়া আক্তার স্মৃতিকে (৩৫) গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। স্মৃতি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন রাজবাড়ী ব্লাড ডোনার্স ক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি, রাজবাড়ী থিয়েটারের একজন সক্রিয় কর্মী এবং রাজবাড়ী জেলা মহিলা দলের একজন সক্রিয় সদস্য বলেও জানা গেছে।বুধবার দুপুরে রাজবাড়ী থানার পুলিশ তাকে আদালতে পাঠিয়েছে। এর আগে মঙ্গলবার রাত ১২টার দিকে তাকে রাজবাড়ী জেলা শহরের ৩ নম্বর বেড়াডাঙ্গার নিজ বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করে।গ্রেপ্তারকৃত স্মৃতি সৌদিপ্রবাসী খোকনের স্ত্রী।এর আগে সোনিয়া আক্তার স্মৃতির বিরুদ্ধে থানায় লিখিত অভিযোগ করেন জেলা বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোটের সদস্যসচিব আরিফিন চৌধুরী। তিনি রাজবাড়ী সদর উপজেলার মিজানপুর ইউপির গঙ্গাপ্রসাদপুরের মৃত আখতার উদ্দিন চৌধুরী ছেলে।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, আরিফিন চৌধুরী রাজবাড়ী জেলা বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোটের সদস্যসচিব এবং মিজানপুর ইউপি আওয়ামী লীগের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক। (৩১ আগস্ট) দুপুরে তিনি তার নিজস্ব ফেসবুক আইডি দিয়ে ফেসবুক চালানোর সময় সোনিয়া আক্তার স্মৃতি নামের একটি আইডিতে ‘একজন প্রধানমন্ত্রী হয়ে সাবেক ৩ বারের প্রধানমন্ত্রীকে যেভাবে কুরুপূর্ণ বক্তব্য দিলেন। দিলেন বললে ভুল হবে, উনি মাঝে মাঝেই এমন দুর্গন্ধ যুক্ত কথা বলেন। তাকে আপনি আপনার জায়গা মানুষ হিসাবে কোন জায়গায় রাখবেন। ?? এই কথাগুলো শুনে তার মন্ত্রী মহোদয়েরা হাত তালি দেয়। ভদ্রতা পারিবারিক শিক্ষা, যেটা ওনাকে কেউ শিখাতে পারে নাই। বাবা/মা সুসন্তান জন্ম না দিলে কবরে গিয়েও গালি শুনতে হয়। ’ এই রকম পোস্ট দেখতে পান। এতে আওয়ামী লীগ ও অন্যান্য দলসহ বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মাঝে বিদ্বেষ সৃষ্টি হয় এবং এই পোস্টের মাধ্যমে বিভিন্ন শ্রেণির জনসাধারণের মাধ্যমে শত্রুতা ও বিদ্বেষ সৃষ্টি করার চেষ্টা করেছেন সোনিয়া আক্তার স্মৃতি―এমনটাই মনে করে স্থানীয় আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতাকর্মীদের সাথে আলোচনা করে মামলা করেছেন আরিফিন চৌধুরী।মামলার বাদী আরিফিন চৌধুরী জানিয়েছেন, (২৮ সেপ্টেম্বর) প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার শুভ জন্মদিনে সোনিয়া আক্তার স্মৃতি তার ফেসবুক আইডি থেকে শুভ জন্মদিন প্রিয় লিখে একটি সাপের ছবি পোস্ট করেন। তখন তিনি তার প্রফাইল ঘেঁটে দেখেন (৩১ আগস্ট) প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে কটূক্তি করে আরেকটি পোস্ট দিয়েছেন। আওয়ামী লীগের একজন একনিষ্ঠকর্মী হিসেবে এই পোস্ট তাকে ব্যথিত করেছে। যার কারণে (৩ অক্টোবর) রাজবাড়ী সদর থানায় সোনিয়া আক্তার স্মৃতির নামে এজাহার দায়ের করেন। যার প্রেক্ষিতে পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করেছে এবং ওই মামলাটি আজ রেকর্ড হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে কটূক্তিকারী এই নারীর সর্বচ্চো শাস্তি হওয়া উচিত।
স্মৃতির বিরুদ্ধে মামলা ও গ্রেপ্তার প্রসঙ্গে জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ও সাবেক এমপি আলী নেওয়াজ মাহমুদ খৈয়ম জানিয়েছেন, রক্তকন্যা স্মৃতি রাজবাড়ী জেলা মহিলা দলের অন্যতম একজন সদস্য এবং সক্রিয় একজন বিএনপি কর্মী। অথচ মধ্যরাতে তার বাড়িতে অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তিনি আরো জানিয়েছেন, স্মৃতি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন রাজবাড়ী ব্লাড ডোনার্স ক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি। জেলা ও জেলার বাইরে রক্তদান সংগঠনের মধ্যে অন্যতম রাজবাড়ী ব্লাড ডোনার্স ক্লাব। স্মৃতি একনিষ্ঠভাবে অসংখ্য প্রসূতি মাসহ হাজারো মানুষের রক্ত সংগ্রহ করে দিয়ে জীবন বাঁচিয়ে আসছেন। তার এই কর্মকাণ্ড সর্বজন প্রসংশিত। যে কারণে সাধারণ মানুষ তাকে রক্তকন্যা হিসেবে ডাকে। যে ব্যক্তি স্মৃতির বিরুদ্ধে মামলা করেছেন, তিনি ও তার সহযোগীরা দীর্ঘদিন ধরে স্মৃতি ইসলামের ইতিবাচক এই কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লেখালেখি করছেন। তাকে প্রতিহত করতে না পেরে হিংসাত্মকভাবে এই মামলা দায়ের করেছেন। তিনি এই ঘটনার তীব্র নিন্দা এবং মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছেন।
রাজবাড়ী সদর থানার ওসি মোহাম্মদ শাহাদাত হোসেন বলেন, কটূক্তি ও গুজব ছড়ানোর অভিযোগে স্মৃতি নামের এক নারীকে গ্রেপ্তার করে বুধবার দুপুরে আদালতে পাঠানো হয়েছে।