এস এম বদরুল আলম॥ চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে রাজস্ব আয়ে উর্ধমুখী হলেও সেপ্টেম্বরে তা কমে গেছে। ফলে সামগ্রিকভাবে আলোচ্য অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে রাজস্ব আহরণে ছন্দঃপতন ঘটেছে। এর কারণ, ভ্যাট-ট্যাক্স আদায়ে সরকারের নেওয়া অনেকগুলি যুগান্তকরী পদক্ষেপ নিলেও মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের অদক্ষতা ও মাসোয়ারী ভিত্তিক অসততার কারনে তা ভেস্তে যেতে বসেছে। আমদানি নিয়ন্ত্রণসহ নানা পদক্ষেপ গ্রহণ সত্ত্বেও বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ অব্যাহতভাবে কমে যাচ্ছে। এর ফলে বাড়ছে দুশ্চিন্তা। সর্বশেষ গত বুধবার রিজার্ভ ৩৫ বিলিয়ন ডলারের ঘরে নেমে এসেছে। ওইদিন রিজার্ভের পরিমাণ দাঁড়ায় ৩৫ দশমিক ৯৮ বিলিয়ন ডলার। এটি গত কয়েক বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন। অন্যদিকে রাজস্ব-আদায়-ও-সঞ্চয়পত্র-বিক্রি-কমছে-বাড়ছে-সরকারের-ঋণ। চলতি অর্থবছরের ১৬ অক্টোবর পর্যন্ত সাড়ে তিন মাসে ব্যাংক থেকে সরকার প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকা ঋণ নিয়েছে। গত বছরের একই সময়ে নিয়েছিল পাঁচ হাজার কোটি টাকার মতো।
জানা যায়, ভ্যাট-ট্যাক্স ও কর ফাঁকি রোধে সরকার জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের তত্বাবধানে আয়কর, মূসক ও শুল্ক ফাঁকি রোধে সেন্ট্রাল ইন্টেলিজেন্স সেল বা সিআইসি গঠন করে। পাশাপাশি শুল্ক ফাঁকি ও চোরাচালানের মাধ্যমে দেশের অর্থনীতি ও স্থানীয় বাজারের স্থিতিশীলতা বিনষ্টকারী ব্যবসায়ীগণকে চিহৃিত করে রাষ্ট্রিয় কোষাগারকে আরও সমৃদ্ধ করতে কাস্টমস গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরকে আরও গতিশীল করা হয়েছে। মূলত গোপন তথ্যের ভিত্তিতে রাজস্ব বোর্ডের এই দুটি সংস্থা তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করছে। কিন্তু কতিপয় অসাধু কর্মকর্তা ও কর্মচারী সিআইসি ও কাস্টমস গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর থেকে নথিপত্র কপি করে সংশ্লীষ্ট এরিয়ার ইন্সপেক্টরের কাছে পাচার করে বলে সংশ্লীষ্ট গোপন সূত্রে জানা যায়। এর ফলে আগেভাগেই মূসক-কর-ভ্যাট ফাঁকিবাজরা সতর্ক হয়ে যায়। অন্যদিকে সংশ্লীষ্ট দপ্তরের কাছে তথ্যদাতাগণও মিথ্যা তথ্যদাতা হিসাবে চিহৃিত হয়। এমনকি কোন কোন ক্ষেত্রে তথ্যদাতাদের পরিচয়ও প্রতিপক্ষের কাছে প্রকাশ করে দেওয়া হয়। ফলে মূসক-কর-ভ্যাট ফাঁকিবাজ কর্তৃক অনেকেই হয়রানী ও লাঞ্চনার শিকার হয়। এ সমস্ত কারনে গোপন সূত্রের তথ্য দাতাদের সংখ্যা কমে যাচ্ছে। যার কারণে সরকার প্রতি বছর হাজার হাজার কোটি টাকার রাজস্ব হারাচ্ছে বলে জানা যায়।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সবশেষ তথ্যে দেখা যায়, চলতি অর্থবছরের জুলাই-আগস্টে রাজস্ব আয় আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ২৩ শতাংশ বৃদ্ধি পায়। সেপ্টেম্বর শেষে সেই প্রবৃদ্ধি ১৩ শতাংশে নেমে এসেছে। গত অর্থবছরের এই তিন মাসে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) রাজস্ব আদায় বেড়েছিল প্রায় ১৭ শতাংশ। সে তুলনায় চলতি অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে রাজস্ব আয়ে ভাটার টান লক্ষ করা যাচ্ছে।
এনবিআরের কর্মকর্তারা বলছেন, জুলাই-আগস্টের তুলনায় সেপ্টেম্বরে আমদানি কমে আসায় রাজস্ব আহরণে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। এ ছাড়া বৈশ্বিক পরিস্থিতির কারণে অভ্যন্তরীণ বাজারে জিনিসপত্রের দাম বেড়ে যাওয়ায় মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমে গেছে। স্থানীয় পর্যায়ে মূল্য সংযোজন কর-ভ্যাট আহরণে তার প্রভাব পড়েছে। ফলে সামগ্রিকভাবে আলোচ্য অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে রাজস্ব আহরণে ছন্দঃপতন ঘটেছে।
অর্থনীতিবিদরা বলছেন, রাজস্ব আয়ে এবার যে লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে তা অর্জন করতে হলে আদায় বাড়াতে হবে কমপক্ষে ৩১ শতাংশ। যদিও এই লক্ষ্যমাত্রা অত্যন্ত ‘উচ্চাভিলাষী’ বলে উল্লেখ করেছেন তারা।
চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরে এনবিআরের মাধ্যমে মোট রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৩ লাখ ৭০ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে জুলাই-সেপ্টেম্বর সময়ে আদায় হয়েছে ৬৫ হাজার ৭৩৭ কোটি টাকা।
যেখানে বেড়ায় ক্ষেতের ফসল খেয়ে ফেলে সেখানে ফসল রক্ষা করা সম্ভব নয়। সরকারের রাতারাতি ২/৩ গুন বেতন-ভাতা বৃদ্ধি তথা ঘুষ সরকারী কর্মকর্তা কর্মচারীদের লোভের মাত্রাকে আকাশচুম্বী করে ফেলেছে। তাদের অধিকাংশই এখন সরকারের খেয়ে নিজের পকেটের স্বাস্থ্য বৃদ্ধির চেষ্টায় সদা নিরত। তাই এদের কাছে ভালো কিছু আশা করা যায় না।