• বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ০৩:১২ অপরাহ্ন |
  • Bangla Version
নিউজ হেডলাইন :
করোনা শনাক্তের হার ১৫ শতাংশের বেশি, মৃত্যু ১ ফের আগ্রাসনের চেষ্টা করলে ইসরায়েলকে শক্তিশালী জবাবের হুঁশিয়ার ইরানের গাজায় এক গণকবরেই মিলল ৩০০ লাশ ইসরায়েলের গভীরে হামলার দাবি হিজবুল্লাহর বেনজীরের সম্পদ অনুসন্ধানে দুদক দুর্নীতির একটা সীমা থাকে, এটা সাগরচুরি বেনজীরের দুর্নীতির অনুসন্ধান চেয়ে হাইকোর্টে রিট প্রভাবমুক্ত থেকে দুদককে অনুসন্ধান করতে হবে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কাতারের আমিরের বৈঠক কাতারের সঙ্গে পাঁচটি চুক্তি ও পাঁচটি সমঝোতা স্মারক সই রেয়াত সুবিধা বাতিল, ঢাকা থেকে ১৫ রুটে যত বাড়ছে ট্রেনের ভাড়া চলমান তাপপ্রবাহ আরো কতদিন থাকবে, যা জানা গেল রংধনুর রফিকের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ অনুসন্ধানে দুদক বেনজীরের বিরুদ্ধে দুদকের অনুসন্ধান, অগ্রগতির প্রতিবেদন চেয়েছেন হাইকোর্ট পদে থেকেই ইউপি চেয়ারম্যানরা উপজেলা নির্বাচন করতে পারবেন : হাইকোর্ট উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের চতুর্থ ধাপের তফসিল ঘোষণা

ওএমএসের আটার দাম কেজিতে বাড়ছে ৮ টাকা

বিশেষ প্রতিনিধি খাদ্যশস্যের বাজারমূল্যের ঊর্ধ্বগতি কমাতে সরকার খোলাবাজারে (ওএমএস) খাদ্যশস্য বিক্রি শুরু করে। নিম্ন আয়ের মানুষকে এ খাদ্য সহায়তা দেওয়া হয়। কিন্তু এবার চাল, আটাসহ খাদ্যশস্যের বাজারমূল্যের ঊর্ধ্বগতির মধ্যে ওএমএসের আটার দাম প্রতি কেজিতে আট টাকা বাড়ানোর প্রস্তাব করেছে খাদ্য অধিদপ্তর। এতে গরিব মানুষের কষ্ট আরো বাড়বে বলে মনে করছেন খাদ্য বিতরণের সঙ্গে জড়িত ডিলাররা।খাদ্য অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, বর্তমানে ওএমএসের প্রতি কেজি আটা বিক্রি করা হয় ১৮ টাকা দরে। তা বাড়িয়ে ২৬ টাকা করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। মূল্যবৃদ্ধির সিদ্ধান্তটি কার্যকর হলে নিম্ন আয়ের পরিবারগুলোকে প্রতি কেজি আটা কিনতে বাড়তি আট টাকা গুনতে হবে। একই সঙ্গে দুই কেজির প্যাকেট আটা ৪৩ টাকা থেকে ৬০ টাকা নির্ধারণের প্রস্তাব করা হয়েছে। এতে দুই কেজি প্যাকেট আটা কিনতে বাড়তি গুনতে হবে ১৭ টাকা। এক কেজি প্যাকেট আটার মূল্য ২৩ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৩২ টাকা করার প্রস্তাব দিয়েছে খাদ্য অধিদপ্তর। চলতি অর্থবছরে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির ১০ টাকা কেজি দরের চালের দাম বাড়িয়ে ১৫ টাকা করা হয়েছে। ৫০ লাখ মানুষের মধ্যে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির চাল বিক্রি করা হয়। জ্বালানি তেল, গ্যাস, পানি ও সারের দামও বাড়িয়েছে সরকার।আটার মূল্যবৃদ্ধির এই প্রস্তাব অনুমোদনের জন্য আগামীকাল মঙ্গলবার দুপুরে খাদ্য পরিকল্পনা ও পরিধারণ কমিটির (এফপিএমসি) বৈঠকে উপস্থাপন করা হবে। কমিটি প্রস্তাবে সায় দিলে দাম বাড়ানোর প্রস্তাবটি চূড়ান্ত করা হবে। একই সঙ্গে ওএমএসের চাল ও আটার পরিমাণ নির্ধারণ নিয়ে আলোচনা করা হবে। এ ছাড়া বর্তমান খাদ্য পরিস্থিতি, নিরাপত্তা মজুদ পুনর্নির্ধারণ, চালের আমদানির বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে কমিটি। আমন ধান ও চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা এবং দাম নির্ধারণ করা হবে। বৈঠকে সভাপতিত্ব করবেন খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার। কৃষি, অর্থ, স্থানীয় সরকার, স্বাস্থ্য, বাণিজ্য, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রীসহ বৈঠকে ১০ জন সচিব উপস্থিত থাকবেন।

আগের দামেই আমন ধান, চাল ও গম সংগ্রহের পরিকল্পনা

গত বছর আমন ধানের সরকারি ক্রয়মূল্য প্রতি কেজি ২৭ টাকা, চালের মূল্য প্রতি কেজি ৪০ টাকা এবং গমের মূল্য প্রতি কেজি ২৮ টাকা নির্ধারণ করা হয়। এ বছরও একই দাম নির্ধারণের পরিকল্পনা নিয়েছে খাদ্য মন্ত্রণালয়। তবে উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়ায় কৃষক ও মিল মালিকরা বাড়তি মূল্য নির্ধারণের দাবি করেছেন।

বাংলাদেশ অটো মেজর অ্যান্ড হাসকিং মিল মালিক সমিতির সভাপতি আবদুর রশিদ বলেন, বিদ্যুৎ ও ডিজেলের মূল্যবৃদ্ধি করেছে সরকার। তাই ধান, চাল ও গমের সংগ্রহ মূল্য বৃদ্ধি করতে হবে। এ বছর খাদ্যশস্যের দাম না বাড়ালে কৃষক ও মিল মালিকদের লোকসান হবে। এতে সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা পূরণও কঠিন হতে পারে। খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার কালের কণ্ঠকে বলেন, কৃষক ও ক্রেতা উভয়ের জন্য ন্যায্য মূল্য নিশ্চিত করতে চায় সরকার। পাশাপাশি খাদ্যের নিরাপত্তা মজুদও বাড়াতে চায়। চাল ও গম আমদানির বিষয়েও বৈঠকে অলোচনা করা হবে। এরপর এসব বিষয় নিয়ে আজকের বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।খাদ্য অধিদপ্তর মহাপরিচালক মো. শাখাওয়াত হোসেন কালের কণ্ঠকে বলেন, ওএমএসের আটার মূল্যবৃদ্ধির প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন এফপিএমসি কমিটির সদস্যরা। বাজারমূল্যের ঊর্ধ্বগতির মধ্যে আটার দাম কেন বাড়ানো হচ্ছে—এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, খোলাবাজারে আটার দাম বেশি হওয়ায় ওএমএসের আটার দাম বাড়ানো হচ্ছে। কারণ খোলাবাজারে বেশি দাম হলে ওএমএসের কম মূল্যের আটাতে অনিয়ম হওয়ার আশঙ্কা থাকে। কেউ এক কেজি আটা সেভ করতে পারলে তার অনেক লাভ হবে।এএমএস কর্মসূচির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলেন, ওএমএস সরকারের একটি মানবিক সহায়তা কর্মসূচি। এর মাধ্যমে সরকার কম দামে দেশের দরিদ্র পরিবারগুলোর মধ্যে খাদ্যপণ্য বিতরণ করে। এই কর্মসূচির মাধ্যমে মূলত দরিদ্র ও অতিদরিদ্রদের স্বাভাবিক জীবনধারা অব্যাহত রাখার চেষ্টা করা হয়। যখন বাজারে চাল ও আটার দাম বেড়ে যায়, তখন সরকার বাজার নিয়ন্ত্রণের জন্য অন্যান্য কর্মসূচির সঙ্গে ওএমএস চালু করে।খাদ্য অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, ২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে ওএমএসের আটার দাম ১৫ থেকে বাড়িয়ে ১৭ টাকা কেজি নির্ধারণ করা হয়। এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় তৎকালীন অর্থমন্ত্রীর ডিও পত্রের আলোকে। পরবর্তী সময়ে ডিলারদের কমিশন এক টাকা বাড়িয়ে আটার কেজি ১৮ টাকা করে সরকার। এ ছাড়া ওএমএসের প্রতি কেজি চালের দাম ২০১৭ সালে ২৮ টাকা ৫০ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ৩০ টাকা করা হয়েছে।

বাড়তি মূল্য কার্যকর হলে বাড়বে গরিবের কষ্ট 

রাজধানীর কদমতলী এলাকার ওএমএস ডিলার শাহ আলম কালের কণ্ঠকে বলেন, আটার দাম বাড়ালে গরিব মানুষের কষ্ট হবে। খোলাবাজারে আটার দাম আরো বেড়ে যেতে পারে। বাজারমূল্যের ঊর্ধ্বগতির মধ্যে এমন সিদ্ধান্ত কার্যকর হলে গরিব মানুষের জন্য খারাপ হবে। একইভাবে ১০ জনের বেশি ডিলার কালের কণ্ঠকে বলেন, গরিব মানুষের কথা বিবেচনা করলে এখন আটার দাম বাড়ানো যৌক্তিক হবে না।মোহাম্মদপুরের ময়ূর ভিলা বেড়িবাঁধ এলাকার ওএমএস ক্রেতা নজরুল ইসলাম বলেন, ‘বাজারে সব কিছুর দাম বেড়ে গেছে। ওএমএসের আটার দাম কিছুটা কম হওয়ায় বেশির ভাগ সময় রুটি খেয়ে দিন কাটাচ্ছিলাম। এখন আটার দাম বেড়ে গেলে কী করব তা জানি না। ’ বছরের মার্চ, এপ্রিল, সেপ্টেম্বর, অক্টোবর ও নভেম্বর—এই পাঁচ মাস গরিব মানুষের কাজের অভাব থাকে। এই সময়েই কম দামে ওএমএসে খাদ্যপণ্য বিক্রি করা হয়। সারা দেশে ওএমএস কার্যক্রমে দুই হাজার ৩৭১টি কেন্দ্রে দৈনিক দুই হাজার ৭৬৪ টন চাল বিক্রি করা হচ্ছে। ১৭ অক্টোবর শুরু হওয়ায় এ কর্মসূচি চলবে আগামী ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত। বর্তমানে ঢাকা মহানগরীতে প্রতিটি কেন্দ্রে এক টন আটা এবং প্রতিটি ট্রাকে সাড়ে তিন টন চাল ও ৫০ কেজি আটা এবং অন্যান্য সব সিটি করপোরেশনে ও শ্রমঘন চারটি (ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর ও নরসিংদী) জেলা প্রতিটি কেন্দ্রে এক টন চাল ও ৫০০ কেজি আটা বিক্রি করা হচ্ছে। একইভাবে জেলা ও পৌরসভায় চাল-আটা বিক্রির পরিমাণ নির্ধারণ করা আছে। প্রতিদিন একজন ব্যক্তি সর্বোচ্চ পাঁচ কেজি করে আটা এবং পাঁচ কেজি করে চাল কিনতে পারে।খাদ্য অধিদপ্তরের একাধিক কর্মকর্তা কালের কণ্ঠকে বলেন, বর্তমানে প্রতি কেজি গমের ওএমএস দর ১৪ টাকা। অথচ বাজারদর ৪৮ টাকা। ওএমএস দরের চেয়ে বাজারদর ৩৪ টাকা বেশি। খোলা আটার ওএমএস দরের চেয়ে বাজারদর ৩২ টাকা বেশি। এভাবে বাজারদর পর্যালোচনা করে খাদ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা জানান, বাজারদর বৃদ্ধি পেলেও ওএমএস কার্যক্রমে গম ও খোলা আটার দর আগের অবস্থানেই রয়েছে। এ অবস্থায় খাদ্য অধিদপ্তর প্রতি কেজি গমের মূল্য ২২, ডিলারের কাছে খোলা আটা ২৪ ও ভোক্তা পর্যায়ে ২৬ টাকা দর নির্ধারণের প্রস্তাব পাঠিয়েছে। একই সঙ্গে দুই কেজি প্যাকেট আটা ডিলার পর্যায়ে ৫৬ এবং ভোক্তা পর্যায়ে ৬০ টাকা নির্ধারণের প্রস্তাব করেছে, বর্তমানে ভোক্তা পর্যায়ে যা বিক্রি করা হয় ৪৩ টাকা দরে।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published.