বিশেষ প্রতিনিধি বাজারে ক্রীড়াসামগ্রীর দাম অস্বাভাবিক বেড়ে গেছে। অনেকে বাজারে গিয়ে পণ্য না কিনেই ফিরে যাচ্ছে। আমদানিনির্ভর এই পণ্যের ব্যবসায়ীরা বলছেন, ডলারসংকটের কারণে পণ্যের আমদানি কমে গেছে। বেড়েছে পণ্যের দাম।আশানুরূপ ক্রেতা না পাওয়ায় লোকসানের আশঙ্কা করছেন তাঁরা।ব্যবসায়ী ও খেলাধুলার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, নভেম্বরের শুরু থেকে মার্চের মাঝামাঝি পর্যন্ত ক্রীড়া মৌসুম। এ সময় নানা ক্রীড়ার আয়োজন থাকে। পুরো শীত মৌসুমে ব্যাডমিন্টন, ফুটবলসহ নানা খেলাধুলার হিড়িক পড়ে। এবার বার্ষিক ক্রীড়া মৌসুমে নতুন মাত্রা যোগ করেছে ২০ নভেম্বর থেকে শুরু হতে যাওয়া ফুটবল বিশ্বকাপ। বর্তমানে অস্ট্রেলিয়ায় চলছে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট বিশ্বকাপ। এতে ব্যাডমিন্টন র্যাকেট, শাটলকক, ফুটবলসহ নানা ক্রীড়াসামগ্রীর চাহিদা বাড়ছে। সেই সঙ্গে দামও চড়া।দেশের বৃহত্তম ক্রীড়াপণ্যের বাজার রাজধানীর গুলিস্তানের বিভিন্ন দোকান ঘুরে জানা গেছে, বছরের শুরুতে ১২টি ব্যাডমিন্টন শাটলের এক বাক্সের দাম ছিল ২০০ টাকা। এখন দাম বেড়ে তা বিক্রি হচ্ছে ৩২০ থেকে ৩৫০ টাকায়। ব্যাডমিন্টন র্যাকেটের ব্র্যান্ডভেদে দাম বেড়েছে ২০০ থেকে ২৫০ টাকা। আমদানি কমে যাওয়ায় ভিক্টর, লি-নিং ও কার্লটনের মতো ব্র্যান্ডের ব্যাডমিন্টন র্যাকেট পাওয়া যাচ্ছে না। ডিয়ারের একটি ফুটবল বিক্রি হচ্ছে ৯৫০ টাকায়। কয়েক মাস আগেও এর দাম ছিল ৬০০ থেকে ৭০০ টাকা। বিভিন্ন ব্র্যান্ডের পাকিস্তানি ক্রিকেট ব্যাটের প্রতিটির দাম বেড়েছে ২২০ থেকে ৩০০ টাকা।দিনাজপুরের কারনাই এলাকার কলেজছাত্র রাশেদ গুলিস্তান স্পোর্টস মার্কেটে এসেছেন ব্যাডমিন্টন র্যাকেট ও শাটলকক কিনতে। বাড়তি দাম দেখে কিছুটা ঘাবড়ে গেছেন তিনি। কালের কণ্ঠকে তিনি বলেন, ‘শীত আসছে। একটু ভালো র্যাকেট-শাটলকক কিনতে ঢাকায় এসেছি। আগের মতো ভালো র্যাকেট দেখছি না। দোকানদার বলল, ডলারের জন্য মার্কেটে পণ্যের ঘাটতি। এক বাক্স শাটলের দাম দেড় শ টাকা বেড়ে গেছে। ’মওলানা ভাসানী হকি স্টেডিয়ামের দোকানগুলোতে ঘুরে বেড়াচ্ছিলেন রাজধানীর গোড়ানের বাসিন্দা হৃদয়। রিডেল ব্র্যান্ডের ফুটবল কিনতে দর-কষাকষি করছিলেন বিক্রেতার সঙ্গে। দামে বনিবনা না হওয়ায় না কিনেই বাড়ি ফেরেন তিনি। এর আগে কালের কণ্ঠকে তিনি বলেন, ‘ফুটবল, ক্রিকেট ব্যাট—সব কিছুর দাম বাড়তি। ৬০০ টাকা দিয়া ডিয়ারের বল কিনতাম, দোকানদার বলল, এখন এই দামে সম্ভব নয়। ’
শীতকাল ও দুটি বিশ্বকাপ সামনে রেখে যথেষ্ট লাভের সুযোগ থাকলেও আমদানি সংকটে লোকসানের শঙ্কার কথা জানালেন ব্যবসায়ীরা। গুলিস্তানের ইন্টারন্যাশনাল স্পোর্টসের মালিক তাইয়েব রহমান জানান, পণ্যের দাম বাড়ায় অন্তত ৪০ শতাংশ ক্রেতা হারিয়েছেন তাঁরা। এ ছাড়া ডলারসংকটে আমদানি কমেছে এক-তৃতীয়াংশ। মূল্যবৃদ্ধি ও পণ্যসংকটে আসন্ন মৌসুমে সুযোগ থাকলেও আশানুরূপ লাভ ঘরে তুলতে পারবেন না। তিনি বলেন, ‘ডলারের অভাবে এলসি খুলতে পারি না। শিপিং চার্জও বেড়ে গেছে। এ জন্য ক্রেতা ভিড়ছে না। ’বাংলাদেশ স্পোর্টস গুডস মার্চেন্টস ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড ইম্পোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মো. শামীম জানান, চলতি বছরের জুলাইয়ের পর থেকে ডলারের সংকটে আমদানি ব্যয় ২০ শতাংশ বেড়েছে। এর প্রভাব পড়েছে পণ্যের দামে।তিনি বলেন, ‘ব্যাংক এলসি খুলতে চায় না। আগে ২০ শতাংশ মার্জিনে এলসি খোলা যেত, এখন শতভাগ মার্জিনে এলসি খুলতে হয়। ডলারের সংকটের জন্য আমরা আরএমবিতে (চীনা মুদ্রা) এলসি খুলেছি। কিন্তু শিপিং চার্জও বেড়েছে। এই শীতে চাইলেও আর ব্যবসা ভালো হবে না। ’