বিশেষ প্রতিনিধি ফৌজদারি মামলায় সরকারি কর্মচারীদের গ্রেপ্তারে নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষের অনুমতি নেওয়ার বিধান বাতিল করা হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষকে আপিলের অনুমতি দিয়েছেন সর্বোচ্চ আদালত। প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন পাঁচ বিচারপতির আপিল বেঞ্চ আজ রবিবার রাষ্ট্রপক্ষের লিভটু আপিল গ্রহনে আদেশ দেন। আপিল নিষ্পত্তি পর্যন্ত হাইকোর্টের রায় স্থগিত থাকবে বলে জানিয়েছেন আইনজীবীরা।আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন অ্যাটর্নি জেনারেল এম আমিসন উদ্দিন।
রিটকারী পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মনজিল মোরসেদ। এর আগে, ২০১৮ সালের ১৪ নভেম্বর সরকারি চাকরি আইনের গেজেট জারি হয়। এরপর ২০১৯ সালের ২৬ সেপ্টেম্বরের গেজেটে বলা হয় ১ অক্টোবর থেকে এ আইন কার্যকর হবে। সে হিসাবে প্রায় তিন বছর ধরে আইনের এ বিধান কার্যকর আছে।আইনের ৪১ (১) ধারায় বলা হয়েছে, ‘কোনো সরকারি কর্মচারীর দায়িত্ব পালনের সহিত সম্পর্কিত অভিযোগে দায়েরকৃত ফৌজদারি মামলায় আদালত কর্তৃক অভিযোগপত্র গৃহীত হইবার পূর্বে, তাহাকে গ্রেপ্তার করিতে হইলে, সরকার বা নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষের পূর্বানুমতি গ্রহণ করিতে হইবে। ’আইনের এ ধারা চ্যালেঞ্জ করে ২০১৯ সালের ১৪ অক্টোবর জনস্বার্থে হাইকোর্টে রিট আবেদন করা হয়। রিটের প্রাথমিক শুনানির পর ২০১৯ সালের ২১ অক্টোবর রুল জারি করেন হাইকোর্ট। সরকারি চাকরি আইন, ২০১৮-এর ৪১ (১) ধারা কেন বেআইনি ও বাতিল করা হবে না এবং এ ধারা সংবিধানের ২৬(১) (২),২৭ ও ৩১ অনুচ্ছেদের পরিপন্থী ঘোষণা করা হবে না, জানতে চাওয়া হয় রুলে। এ রুলটিই যথাযথ ঘোষণা করে বিচারপতি মো. মজিবুর রহমান মিয়া ও বিচারপতি কাজী মো. ইজারুল হক আকন্দের হাইকোর্ট বেঞ্চ গত ২৫ আগস্ট এ রায় দেন।
রায়ে সরকারি চাকরি আইনের ৪১ (১) ধারা অবৈধ ঘোষণা করে বলা হয়, ফৌজদারি মামলায় সরকারি কর্মচারীদের গ্রেপ্তারে নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষের অনুমতি নেওয়ার বিধান সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক বলে তা বাতিল করা হলো।রায়ে আরো বলা হয়, সরকারি চাকরি আইনের এই ধারা ‘সংবিধান পরিপন্থি এবং মৌলিক অধিকারের পরিপন্থি। ’ সংবিধানের ২৬ অনুচ্ছেদে বলা আছে মৌলিক অধিকারের সঙ্গে অসামঞ্জস্য আইনের বিধান বাতিল হবে। আর ২৭ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, সব নাগরিক আইনের দৃষ্টিতে সমান এবং সব নাগরিক সমানভাবে আইনের আশ্রয় লাভের অধিকারী। সংবিধানের ৩১ অনুচ্ছেদে এ বিষয়টি আরো বিস্তৃত করা হয়েছে। কিন্তু সরকারি চাকরি আইনের ৪১(১) ধারায় বিশেষ একটি শ্রেণি বা গোষ্ঠীকে সুরক্ষা দেওয়া হয়েছে। ফলে তা সংবিধানের ২৬, ২৭ ও ৩১ অনুচ্ছেদের সঙ্গে সাংঘর্ষিক এবং বাতিলযোগ্য।
রায়ে আদলত বলেছেন, দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, ২০১৩-এর ৩২ (ক) ধারায় দুদক কর্মচারীদের এমন সুরক্ষা দেওয়া হয়েছিল। পরে হাইকোর্ট এ ধারাটি বাতিল করেছেন। কিন্তু সরকার এ রায়ের বিরুদ্ধে কোনো আপিল করেনি। সুতরাং একই বিধানে আবার আইন করার সুযোগ নেই। ’পরে এ রায় স্থগিত চেয়ে আপিল বিভাগের চেম্বার আদালতে আবেদন করে রাষ্ট্রপক্ষ। চেম্বার আদালত হাইকোর্টের রায়ে হস্তক্ষেপ না করে তা আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে শুনানির জন্য পাঠায়। আপিল বেঞ্জ রায় স্থগিত করে রাষ্ট্রপক্ষকে নিয়মিত লিভ টু আপিল করতে বলে। পরে রাষ্ট্রপক্ষ লিভটু আপিল করে। আজ (রবিবার) সেটি শুনানির জন্য উঠলে তা গ্রহন করে রাষ্ট্রপক্ষকে আপিলের অনুমতি দেন সর্বোচ্চ আদালত।