বিনোদন ডেস্ক শুরু করেছিলেন অভিনয় দিয়ে, পরে পরিচালনার খাতাতেও নাম ওঠান। এখন অভিনয় ও নির্মাণ দুই–ই সমানতালে চালিয়ে যাচ্ছেন। তাঁর পরিচালনায় সোমবার থেকে এনটিভিতে শুরু হয়েছে ধারাবাহিক ‘গোলকধাঁধা’। অভিনয়, নির্মাণসহ নানা প্রসঙ্গে গত রোববার ‘বিনোদন’-এর সঙ্গে কথা বললেন শামীম জামান সুন্দর ও অন্তর নামের দুই যুবকের কর্মকাণ্ড ঘিরে গল্প, বিনা পরিশ্রমে শর্টকাটে যারা ধনী হতে চায়। একসময় তারা কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়। কিন্তু এর পরের গল্পটি মানবিকভাবে দর্শকদের যেমন বিনোদন দেবে, তেমনি বার্তা দেবে। এই সময়ের গ্রামীণ পটভূমির গল্প। এর মধ্যে উঠে এসেছে গ্রামের সাময়িক নানা বিষয়। আপনার বেশির ভাগ নাটকে দেখা যায় মোশাররফ করিমকে…আপনার প্রশ্ন বুঝেছি। এটা নিয়ে অনেকেই মনে করেন, মোশাররফ করিম আমার বন্ধু; যে কারণে তাকেই কাস্টিং করি বা সে আমাকে শিডিউল দেয়। কিন্তু ঘটনা তা না। মোশাররফ করিমকে অভিনেতা হিসেবে চরিত্রের জন্য দরকার হয়। একজন নির্মাতা হিসেবে তার জন্য অপেক্ষা করি। এমন হয়, তিন কি চার মাস তাঁর শিডিউলের জন্য অপেক্ষা করি। আমি জানি, তার মতো সহযোগিতা করা ও চরিত্রকে ধারণ করার মতো শিল্পী খুব কমই আছেন। সে ষোলোআনা দিয়েই কাজটি করে। এর মধ্যে চঞ্চল চৌধুরীসহ আরও কয়েকজন আছেন, যারা জাত অভিনেতা। কিন্তু নতুন অনেকের ওপর সেই ভরসা করতে পারি না। ‘আলতা সুন্দরী’, ‘ভবের হাট’, ‘জামাই মেলা’, ‘জোয়ার ভাটা’, ‘হাড়কিপটে’সহ অনেক জনপ্রিয় নাটকে অভিনয় করেছি। আমার চরিত্রের প্রশংসা করেছেন ভক্তরা, সারা দেশের মানুষ চিনেছে। রাস্তাঘাটে ঘিরে ধরছে মানুষ। কিন্তু পরিচালকেরা আমাকে কাজ দিচ্ছিলেন না। অনেকের কাছে কাজের জন্য গেলেও তাঁরা আমার টি–শার্টের সমালোচনা করছিলেন। সেই পরিচালক মুখের ওপর বলেছিলেন, ‘এই টি–শার্ট পরে হিরো হবা ক্যামনে।’ প্রধান চরিত্রের অভিনেতা নাকি আমি হতে পারব না। আশাহত হইনি। তখন ভিন্ন কিছু চিন্তা করছিলাম। সেটা অভিনয় নিয়েই। অতীত আমাকে অনেক অনুপ্রেরণা দিয়েছে। তখন ভালো পোশাক কেনার অর্থ ছিল না। সংসার বাঁচানোই কঠিন ছিল। আবার কেউ কাজ থেকেও বাদ দিচ্ছিলেন। কিন্তু আমি লবিং করে কোনো দিন কাজ করতে চাইনি। একের পর এক সংগ্রাম করতে হয়েছে। নিজেকে প্রমাণ করতে হয়েছে। পেছনে কে কী বলল, ফিরে তাকাইনি। কিন্তু কখনোই মনে হয়নি অভিনয় ছেড়ে দেব। পরে প্রযোজক হলাম। তখন দেখলাম, সালাউদ্দিন লাভলু বাদে অনেকেই ঠকায়। মোশাররফ করিম আমার বন্ধু। একসঙ্গে থিয়েটার করেছি। সে আমাকে প্রেরণা দিল পরিচালক হতে। এখনো শিল্পীদের নিয়ে কাজ করতে ভালো লাগে। আমার বেশির ভাগ নাটক গ্রামকে নিয়ে। কিছু নাটক ছাড়া বেশির ভাগ পরিচালকের গ্রাম নিয়ে নাটকই হিট। কিন্তু দুঃখজনকভাবে এখন সেই নাটকের পরিচালকেরা সেই অর্থে কাজ পাচ্ছেন না। অনেকেই মেধা নিয়ে বসে আছেন। আমরা নিয়মিত কাজ করে গেলেও ভালো বাজেট পাচ্ছি না। এখন গল্প, চিত্রনাট্যের সংকট; অভিনেতার সংকট। তারপরও আমার গ্রামকে ভালো লাগে। যে কারণে একের পর এক গ্রামের নাটক করে যাই। নির্মাতা হিসেবে এখানেই আনন্দ খুঁজি। ধারাবাহিকে এই সময়ের তরুণ কিছু অভিনয়শিল্পী অভিনয় করতে চায় না। তারা মনে করে, গ্রামের নাটক স্মার্ট না। শহরের গল্পে ভালো পোশাক পরে থাকা যায়, সেগুলো স্মার্ট। পোশাক কখনোই স্মার্টনেস প্রকাশ করে না। আমার কাছে মনে হয়, এই শ্রেণির শিল্পীরা ললিপপ স্টার। তাদের মধ্যে অনেকে যোগ্যও না। কারণ, তাদের অনেকের অভিনয়ের ব্যাকগ্রাউন্ড নেই। অভিনয় নিয়ে শিক্ষা নেই। কারণ, মোশাররফ–চঞ্চলেরা কখনোই বলে না, গ্রামের নাটক করব না। ধারাবাহিক আর ঈদের কাজ নিয়েই ব্যস্ত। এখন বয়স, অর্থ, খ্যাতি সবই হয়েছে। যে কারণে ললিপপ টাইপের কাজ করতে চাই না। মান বজায় রেখে ভালো কাজ করতে চাই। গত ঈদে আমার নাটক ‘নদী ভাঙা’য় সুবিধাবঞ্চিত মানুষদের গল্প তুলে ধরেছি। সামনে সিনেমা নির্মাণ করতে যাচ্ছি। সব ঠিকঠাক। শিগগিরই ঘোষণা দেব। ওটিটি প্ল্যাটফর্মগুলোতে কাজ করতে চাই। কারণ, এখন প্রায়ই শুনতে হয় ‘অ্যালেন স্বপন’ বা ‘মহানগর’–এর মতো অমুক নাটক হচ্ছে না। প্রায় কোটি টাকার কাজের সঙ্গে তিন–চার লাখ টাকার কাজের তুলনা হয় না, এটা কেউ বুঝতে চায় না।