• বৃহস্পতিবার, ০৭ ডিসেম্বর ২০২৩, ১১:৪১ অপরাহ্ন |
  • Bangla Version
নিউজ হেডলাইন :
করোনা শনাক্তের হার ১৫ শতাংশের বেশি, মৃত্যু ১ বরিশাল আইএইচটি কলেজের শিক্ষিকা ডাঃ সানজিদার পদত্যাগে ছাত্র-ছাত্রীদের আন্দোলন ৪২ বছরেই চলে গেছেন অভিনেত্রী নওশীন লিজেন্ডস ক্রিকেটে শ্রীশান্তের সঙ্গে তর্কে জড়ালেন গম্ভীর ২০৩৪ বিশ্বকাপেও মেসিকে চান ফিফা সভাপতি টাকা, ডলারের তীব্র সংকট, সার আমদানি বাধাগ্রস্ত হিজবুত তাহরীরের শীর্ষ নেতা তৌহিদুর গ্রেপ্তার: সিটিটিসি বাংলাদেশে মার্কিন নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধে থাকবে রাশিয়া: রাষ্ট্রদূত সব রাজনৈতিক দলকে সহনশীল হওয়ার আহ্বান মানবাধিকার কমিশনের ৩৩৮ ওসিকে বদলি, কে কোথায় যাচ্ছেন ভবিষ্যতে একাত্তরের মতোই বাংলাদেশের পাশে থাকবে ভারত: হাই কমিশনার শক্তিশালী শ্রম আইন ও এর বাস্তবায়ন দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের জন্য গুরুত্বপূর্ণ জাহাঙ্গীরের ‘মুখোশ’ খুলে দিল এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তি  মিগজাউমের দাপটে তৃতীয় দিনেও বিপর্যস্ত ভারতের অনেক এলাকা এবার বেলারুশের উপর নতুন নিষেধাজ্ঞা দিল যুক্তরাষ্ট্র ভি-২২ অস্প্রে উড়োজাহাজের কার্যক্রম স্থগিত করলো যুক্তরাষ্ট্র

কেউ বেচেন পান, কেউবা দারোয়ান

বিশেষ প্রতিনিধি ছাত্রদল নেতা ইসমাইল হোসেন মিঠু খুলনার সরকারি ব্রজলাল (বিএল) কলেজ থেকে অনার্স করেছেন রাষ্ট্রবিজ্ঞানে। ছাত্রজীবন শেষে বিয়েও সেরেছেন সম্প্রতি। পাইকগাছায় ছোটখাটো ব্যবসার পাশাপাশি মাঝেমধ্যে সময় দিতেন পৌর ছাত্রদলের রাজনীতিতে। এখন গ্রেপ্তারের ভয়ে ফেরারি। ঢাকায় এসে নিজেকে লুকিয়েছেন, ধরেছেন ছদ্মবেশ। রাজধানীর রাজপথে একবেলা চালান রিকশা, আরেক বেলা হকারি করে বেচেন পান-সিগারেট।এ রকমই আরেকজন নীলফামারীর জলঢাকার কলেজছাত্র আমিজুল ইসলাম। দুই ভাই এক বোনের মধ্যে সবার বড় তিনি। ২৮ অক্টোবরের পর তাঁর নামে হয় প্রথম মামলা। গ্রেপ্তার এড়াতে জলঢাকা ছেড়ে এখন তাঁর ঢাকায় বাস। রামপুরা ও মগবাজার এলাকায় রিকশার প্যাডেলে রাখছেন পা। পুলিশের ভয়ে মেসে থাকারও সাহস নেই। রাত কাটছে গ্যারেজেই।মামলা-হামলা আর গ্রেপ্তার আতঙ্কে ইসমাইল, আমিজুলের মতো আরও অনেকেই এখন এলাকা ছেড়ে ঢাকামুখী। কথা হয় সাতক্ষীরার আশাশুনির মিরাজ, ফয়েজ, আব্দুল্লাহ ও খালেকের সঙ্গে। তারা সবাই বিএনপির মিছিল-সমাবেশে যেতেন। ২০১৪ সালে সরকারবিরোধী আন্দোলনে মামলায় ঘরছাড়া হয়েছেন। এখনও এলাকায় যেতে পারেন না। তবু এবারের মামলার আসামি তারা। লেখাপড়া তেমন করেননি বলে চাকরিও পাননি। তাই বাধ্য হয়ে রিকশা চালান। কেউ কেউ করছেন দারোয়ানের চাকরি। 

কলেজছাত্র আমিজুল ইসলাম বলেন, ‘রাজনীতি করি, কোনো অপরাধ করি না। তবে অন্য নেতাকর্মীর সঙ্গে আমাকে আসামি করে যে মামলা দেওয়া হয়েছে, তা গায়েবি। আমি ঘটনার কিছুই জানি না। ককটেল বিস্ফোরণের কোনো ঘটনাও ঘটেনি। এজন্য গ্রেপ্তার এড়াতে ঢাকায় এসেছি। বেঁচে থাকতে রিকশা চালাচ্ছি।ছাত্রদল নেতা ইসমাইল হোসেন মিঠু জানান, এলাকায় থাকলে পুলিশের সঙ্গে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরাও হয়রানি করেন। ঢাকায় থাকলেও মন পড়ে আছে এলাকায়। মামলার গ্যাঁড়াকলে সারাদেশের বিএনপি নেতাকর্মীরা। দলটির প্রায় নেতাকর্মীর নামেই রয়েছে একাধিক মামলা। ২৮ অক্টোবর ঢাকায় মহাসমাবেশের পর এখন তা আরও গতি পেয়েছে। সঙ্গে চলছে গ্রেপ্তার আর তল্লাশি। বিএনপির দাবি, মহাসমাবেশের পর সারাদেশে ৭০৭টি মামলায় ১৬ হাজার ৭০১ নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ওইসব মামলায় আসামি হয়েছেন ৫৯ হাজার ৬০৮ জন।নেতাকর্মীরা জানান, এর পরও অনেকে এলাকায় মাটি কামড়ে রয়েছেন। তবে তারা সবাই বাড়িছাড়া। বনে-জঙ্গলে, বাগানে, পুকুরের মাচা, ধানক্ষেত কিংবা মাঝনদীতে নৌকায় রাতযাপন করছেন। 

খোলা আকাশের নিচে পান বরজের পাশের ক্ষেতে গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন বরিশালের উজিরপুর যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক শফিকুল ইসলাম খান লিমনসহ তিনজন। এ রকম একটি ছবি ছড়িয়ে পড়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে।শফিকুল ইসলাম খানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, তারা তিনজনই যুবদলের নেতাকর্মী। এলাকায় বিএনপির কেউ বাড়িতে থাকতে পারেন না। দিনে আওয়ামী লীগ আর রাতে পুলিশ তল্লাশি করতে আসে। ২৮ অক্টোবরের পর তাঁর বাড়িতে পুলিশ চারবার এসেছে। গ্রেপ্তার এড়াতে তারা বাড়িঘর ছেড়ে দিয়েছেন। মাঝেমধ্যে ৫ থেকে ১০ মিনিটের জন্য বাড়িতে ছুটে যান ছোট তিন সন্তানকে দেখতে। তিনি জানান, তাঁর নামে আটটি মামলা। ২৮ অক্টোবরের পর একটি মিথ্যা ও গায়েবি ককটেল বিস্ফোরণের মামলা দেওয়া হয়েছে। এলাকায় স্টেশনারি দোকানের ব্যবসা আছে। তবে এই মামলার কারণে দোকানও খুলতে পারছেন না। তবে এত কিছুর পরও এক দফার আন্দোলন থেকে তাদের পিছু হটানো যাবে না। 

শুধু জেলা পর্যায়েই নয়, ভালো নেই ঢাকা মহানগরের নেতাকর্মীরাও। বাসাবাড়িতে থাকতে পারছেন না কেউ। আত্মীয়স্বজনের বাসায়ও চলে হানা। নেতাকর্মীকে না পেলে পরিবারের সদস্য, আত্মীয়কে ধরে নেওয়ার অভিযোগও রয়েছে দলের পক্ষ থেকে।ঢাকার এক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন (আসল নাম নয়)। পুরান ঢাকায় একটি মেসে থাকতেন। ২৮ অক্টোবরের পর তিনি সেখানে থাকতে পারছেন না। বেশ কয়েকবার পুলিশ তাঁর বাসায় তল্লাশি করেছে। বাধ্য হয়ে নিজের বাসা ছেড়ে এক কাপড়ে বেরিয়ে পড়েন অজানা গন্তব্যে। দিনে হরতাল-অবরোধে রাজনৈতিক কর্মসূচি পালন করেন। রাত হলেই টেনশন বাড়ে থাকার জায়গা নিয়ে। কোথাও নিরাপদ নয়। একেক দিন একেক জায়গায় থাকতে হচ্ছে তাঁকে। শুক্র ও শনিবার কর্মসূচি না থাকায় ঢাকার বাইরে বোনের বাসায় চলে যান। সেখানে সপ্তাহের গোসল, ভালোমন্দ খাবার খেয়ে একটু তৃপ্তি নেন। 

হুমায়ুন জানান, তাঁর মতো বিএনপির প্রত্যেক নেতাকর্মীর একই অবস্থা। কেউ নিজের বাসাবাড়িতে থাকতে পারছেন না। অনেকের আত্মীয় হয়রানির ভয়ে তাদের এড়িয়ে চলেন। আরেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সহসভাপতি ইব্রাহীম জানান, জীবনকে হাতের মুঠোয় নিয়ে এখন তারা কর্মসূচি পালন করছেন। কারও কোনো নিরাপত্তা নেই। রাস্তায় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা পুলিশের সঙ্গে লাঠিসোটা নিয়ে বসে থাকলেও কোনো অপরাধ নেই। তবে তারা শান্তিপূর্ণ মিছিল বের করলেও হামলে পড়ে পুলিশ। গ্রেপ্তার হলে দিনের পর দিন রিমান্ডে নিয়ে চলে নির্যাতন।এ ব্যাপারে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী, সমর্থক এবং পুলিশ-র‍্যাব-গোয়েন্দারা ভোটাধিকারের দাবিতে আন্দোলনকারীদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়েছে। আওয়ামী নিপীড়নে বিএনপির নেতাকর্মীরা যেন মৃত্যু থেকে কয়েক মিনিট দূরে অবস্থান করছেন। এ অবস্থা থেকে মুক্তির জন্য লড়াই চালিয়ে যেতে হবে। বিজয় আমাদের হবেই। 

নেতাকে না পেয়ে স্বজনকে ধরছে পুলিশ

বিএনপি চেয়ারপারসনের বিশেষ সহকারী শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাসের ছেলে তানভীর রহমান মিথুনের বাসায় গত শনিবার রাতে অভিযান চালায় পুলিশ। এর আগে তাঁর পাবনার বাড়িতে অভিযান চালানো হয়। তাঁকে না পেয়ে তাঁর ছোট ভাইকে ধরে পুলিশ। বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মুমিনুল হককে না পেয়ে রাজনীতি না করলেও তাঁর ছেলে মোস্তফা কামাল সুমনকে শনিবার রাতে তুলে নিয়ে যায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। চট্টগ্রামের ভুজপুর থানা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক একরামুল হককে বাড়িতে না পেয়ে তাঁর বড় ভাই এমদাদুলকে গ্রেপ্তার করা হয়। রামগতির চরপোড়াগাছা ইউনিয়ন ছাত্রদলের সভাপতি মো. এলাহির বাড়িতে অভিযান চালায় পুলিশ। তাঁকে না পেয়ে তাঁর ছোট ভাই কলেজপড়ুয়া শাকিল আহমেদকে তুলে নিয়ে যায়। 


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published.