">
বিশেষ প্রতিনিধি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান পরিবেশবান্ধব হলে এর উৎপাদন বাড়ার পাশাপাশি ব্যয় সাশ্রয় হবে। প্রতিষ্ঠান হবে টেকসই। তবে এ জন্য অর্থ, দক্ষতা ও গবেষণার প্রয়োজন। এ ক্ষেত্রে নীতি সহায়তার পাশাপাশি সবুজ বা পরিবেশবান্ধব হতে কোম্পানিগুলোকে বিভিন্ন উপায়ে প্রণোদনা দিতে পারে সরকার। তা হতে পারে আর্থিক, কর বা সামাজিক প্রণোদনা।গতকাল রোববার রাজধানীর হোটেল র্যাডিসন ব্লুতে ‘গ্রিন ভ্যালু চেইন’ শীর্ষক আলোচনায় বক্তারা এসব কথা বলেন। ফরেন ইনভেস্টরস চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এফআইসিসিআই) ৬০ বছর পূর্তি উদযাপন এবং দুই দিনব্যাপী বিনিয়োগ মেলা উপলক্ষে এই আলোচনার আয়োজন করে এফআইসিসিআই।এতে প্রধান অতিথি ছিলেন স্মার্ট বাংলাদেশ নেটওয়ার্কের সহসভাপতি এবং প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এসডিজি-বিষয়ক মুখ্য সমন্বয়ক মো. আবুল কালাম আজাদ।এফআইসিসিআইর ইএসজি কমিটির সভাপতি ও পরিচালক জাভেদ আখতারের সঞ্চালনায় এতে বক্তব্য দেন বিল্ডের সভাপতি ও মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এমসিসিআই) ঢাকার সাবেক সভাপতি ব্যারিস্টার নিহাদ কবির, বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) সদস্য মোহসিনা ইয়াসমিন, ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ডিসিসিআই) সভাপতি ব্যারিস্টার সামীর সাত্তার, জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচির (ইউএনডিপি) আঞ্চলিক প্রতিনিধি স্টেফান লিলার, গ্রামীণফোনেরে প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ইয়াসির আজমান প্রমুখ.।মিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টস বাংলাদেশের উপাচার্য অধ্যাপক ইমরান রহমান। তিনি কৃষি জমির ক্ষতি, পানীয় জলের অভাব, ঘূর্ণিঝড়সহ বিভিন্ন জলবায়ু ঝুঁকির বিষয় তুলে ধরে বলেন, সবুজায়নের ক্ষেত্রে প্রধান বাধা হলো সমন্বয়ের অভাব, পরিবেশগত লক্ষ্যমাত্রা না থাকা, জ্বালানি নিরাপত্তার অনিশ্চয়তা সমাধান না হওয়া, দুর্বল পর্যবেক্ষণ ব্যবস্থা, সরকারি সংস্থাগুলোর মধ্যে সমন্বয়হীনতা, সচেতনতার অভাব, অর্থায়ন সুবিধা এবং সবুজ প্রযুক্তিতে দক্ষতার অভাব।
অধ্যাপক ইমরান রহমান বলেন, গ্রিন ভ্যালু চেইনের নানামুখী সুবিধা রয়েছে। যেমন– এতে দূষণ ও অপচয় কমে। বিদ্যুৎ সাশ্রয় হয়। উৎপাদন ও উদ্ভাবনও বাড়ে। সামাজিকভাবেও নানা সুবিধা পাওয়া যায়। তবে প্রতিকূল জলবায়ু পরিস্থিতিজনিত অর্থনৈতিক ঝুঁকি মোকাবিলায় যথোপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ, গবেষণা ও বিনিয়োগ দরকার। সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টাও থাকতে হবে। এ ক্ষেত্রে সরকারকে সবুজ বিনিয়োগ নীতি প্রণয়ন, কর সুবিধাসহ প্রয়োজনীয় সহায়তা নিশ্চিত করতে হবে। একই সঙ্গে কর্মীদের দক্ষ করে গড়ে তুলতে উদ্যোক্তাদের এগিয়ে আসা উচিত।আবুল কালাম আজাদ বলেন, অর্থ সাশ্রয়ের জন্য ব্যবসা প্রক্রিয়াকে সবুজ করতে হবে। উদ্যোক্তারা ব্যবসা করেন অর্থ উপার্জনের জন্য। কিন্তু সবুজ প্রক্রিয়া ব্যয়বহুল হলে তা ব্যবসায়ীদের জন্য মঙ্গল হবে না। তিনি বলেন, সবুজায়নের জন্য ব্যবসা প্রতিষ্ঠানকে নানাভাবে প্রণোদনা দেওয়া যেতে পারে। ব্যবসা প্রতিষ্ঠানকেও প্লাস্টিকের ব্যবহার কমানো, ছাদের ওপরে সোলার থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন, গবেষণা এবং দক্ষতা বাড়ানোর বিষয়ে চেষ্টা করতে হবে।
পণ্য বাজারজাত ও বিক্রি করার পর এর ব্যবহার নিয়ে উদ্যোক্তারা সতর্ক থাকেন না বলে উল্লেখ করেন ব্যারিস্টার নিহাদ কবির। তিনি বলেন, উৎপাদিত পণ্য ব্যবহারের পর সেটি যে পরিবেশ দূষণকারী বর্জ্যে পরিণত হতে পারে, সে বিষয়ে উদ্যোক্তারা খেয়াল রাখেন না। তাই গুণগত মান রক্ষা করে পণ্যের সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিতে ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানগুলোকে সজাগ থাকতে হবে।ব্যারিস্টার সামীর সাত্তার বলেন, বড় শিল্প মালিকরা সবুজায়নে সক্ষম হলেও এসএমইতে এখনও এটি প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে। কারণ তাদের জন্য অর্থের প্রাপ্যতা, সচেতনতা, জ্ঞান ও দক্ষতার অভাব রয়েছে। সবুজায়নের মাধ্যমে তাদের ব্যবসা টেকসই করার জন্য যে অতিরিক্ত তহবিল দরকার, তা এক ধরনের ব্যয় বা বিনিয়োগ। তবে প্রাথমিক পর্যায়ে এ অর্থ খরচ বলে মনে হয়। এটি বিনিয়োগ হবে তখনই, যখন তাদের পণ্যের ক্রেতারা টেকসই প্রক্রিয়া গ্রহণের জন্য উচ্চ মূল্য প্রদান করবে। পোশাক খাতে সবুজায়ন হওয়ার পরও উদ্যোক্তারা এখনও ন্যায্য দাম পাচ্ছেন না।গ্রিন ভ্যালু চেইনে অন্যান্য দেশে কী ধরনের প্রণোদনা দেওয়া হয় তা নিয়ে গবেষণা করতে সরকারি-বেসরকারি ও অন্যান্য সংস্থার মধ্যে নীতিগত আলোচনার পরামর্শ দেন স্টেফান লিলার। তিনি বলেন, এলডিসি গ্র্যাজুয়েশনের পর বাংলাদেশে সবুজায়নের জন্য আরও চাপ আসবে। সে জন্য এখনই সবাইকে প্রস্তুত হতে হবে।মহসিনা ইয়াসমিন বলেন, সবুজ বিনিয়োগের জন্য প্রয়োজনীয় নীতি বা প্রণোদনা নেই। তবে বর্তমানে এনবিআর কিছু কর সুবিধা দিচ্ছে। সরকার সবুজ বিনিয়োগ বাড়ানোর জন্য একটি বিনিয়োগ নীতির খসড়া তৈরি করতে যাচ্ছে।
Leave a Reply