">
ভারত সোমবার তাদের কূটনীতিককে কানাডা থেকে প্রত্যাহারের ঘোষণা দিয়েছে। একই সঙ্গে কানাডার চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্সকে তলব এবং আরো পদক্ষেপের হুমকি দিয়েছে নয়াদিল্লি। এর আগে কানাডা রাষ্ট্রদূতসহ ভারতীয় কূটনীতিকদের ‘সন্দেহভাজন ব্যক্তি’ হিসেবে তদন্তের আওতায় এনেছে বলে জানায়, যার সূত্রপাত গত বছর এক শিখ বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতার হত্যাকাণ্ড থেকে।
২০২৩ সালে কানাডীয় নাগরিক হরদীপ সিং নিজ্জরের হত্যাকাণ্ডের পর ভারত ও কানাডার কূটনৈতিক সম্পর্ক ভেঙে পড়ে, যখন প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো বলেছিলেন, এ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে ভারতীয় গোয়েন্দাদের যুক্ত থাকার ‘বিশ্বাসযোগ্য অভিযোগ’ রয়েছে। সেই সময় ভারত অস্থায়ীভাবে কানাডার জন্য ভিসা বন্ধ করে এবং অটোয়াকে কূটনীতিক প্রত্যাহারের নির্দেশ দেয়।
এবার ভারতের রাষ্ট্রদূতের প্রত্যাহার এ দুই দেশের উত্তেজনাপূর্ণ সম্পর্কে একটি বড় ধাপ। নয়াদিল্লির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, ‘আমাদের কূটনীতিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিতের বিষয়ে বর্তমান কানাডীয় সরকারের ওপর আমাদের কোনো আস্থা নেই। তাই ভারত সরকার হাইকমিশনার ও অন্যান্য টার্গেটেড কূটনীতিকদের প্রত্যাহার করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।’
এর আগে ভারত জানায়, কানাডা থেকে কূটনৈতিক বার্তায় জানানো হয়েছে, চলমান তদন্তে ভারতীয় হাইকমিশনার ও অন্যান্য কূটনীতিকদের ‘সন্দেহভাজন ব্যক্তি’ হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে।
ভারত আরো জানিয়েছে, তাদের রাষ্ট্রদূত সঞ্জয় কুমার ভার্মা একজন সম্মানিত পেশাদার কূটনীতিক ও তার বিরুদ্ধে অভিযোগ ‘হাস্যকর ও ঘৃণার যোগ্য’। তিনি এর আগে জাপান ও সুদানে রাষ্ট্রদূত ছিলেন।
১৯৯৭ সালে কানাডায় অভিবাসী হওয়া নিজ্জর ২০১৫ সালে কানাডীয় নাগরিকত্ব পান।তিনি ভারতের ভেতরে ‘খালিস্তান’ নামে একটি আলাদা শিখ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পক্ষে আন্দোলন করছিলেন। ভারত তাকে সন্ত্রাসবাদ ও হত্যার ষড়যন্ত্রের অভিযোগে খুঁজছিল। ২০২৩ সালের জুনে কানাডার ভ্যাংকুভারে একটি শিখ মন্দিরের পার্কিং লটে নিজ্জরকে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় চারজন ভারতীয় নাগরিককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
ভারত সোমবার এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট থাকার অভিযোগকে ‘হাস্যকর’ ও ‘রাজনৈতিক স্বার্থে ভারতের বিরুদ্ধে কালিমা লেপনের কৌশল’ বলে অভিহিত করেছে।
পাশাপাশি আরো পদক্ষেপের হুমকি দিয়েছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, ‘কানাডার সরকার চরমপন্থা, সহিংসতা ও বিচ্ছিন্নতাবাদকে সমর্থন করছে এবং এর প্রতিক্রিয়ায় ভারত আরো পদক্ষেপ নেওয়ার অধিকার রাখে।’
এদিকে নয়াদিল্লিতে কানাডার চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্সকেও তলব করা হয়। তবে বৈঠকের পর তিনি জানান, ভারত যেসব প্রমাণ চেয়েছিল, তা কানাডা সরবরাহ করেছে। কানাডীয় চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স স্টুয়ার্ট হুইলার সাংবাদিকদের বলেন, ‘কানাডা নির্ভরযোগ্য ও অকাট্য প্রমাণ দিয়েছে, ভারতীয় সরকারের এজেন্টরা কানাডার মাটিতে একজন কানাডীয় নাগরিককে হত্যার সঙ্গে জড়িত।’
তিনি আরো বলেন, ‘এখন সময় এসেছে ভারতের তাদের প্রতিশ্রুতি পালন করার এবং সব অভিযোগ তদন্ত করার। উভয় দেশের ও তাদের জনগণের স্বার্থে এই ঘটনার মূল পর্যন্ত পৌঁছনো জরুরি। কানাডা এই তদন্তে সহযোগিতা করতে প্রস্তুত।’
কানাডায় প্রায় সাত লাখ ৭০ হাজার শিখের বসবাস, যা দেশটির মোট জনসংখ্যার প্রায় ২ শতাংশ। এদের মধ্যে কিছু অংশ খালিস্তানের পক্ষে সরব। এ ছাড়া ২০২৩ সালের নভেম্বরে যুক্তরাষ্ট্রের বিচার বিভাগ এক ভারতীয় নাগরিককে মার্কিন মাটিতে একটি হত্যাকাণ্ডের ষড়যন্ত্রের অভিযোগে অভিযুক্ত করে। ওই ব্যক্তি তখন চেক প্রজাতন্ত্রে বসবাস করছিলেন। যুক্তরাষ্ট্রের প্রসিকিউটররা আদালতের নথিতে উল্লেখ করেন, এই হত্যার পরিকল্পনায় একজন ভারতীয় সরকারি কর্মকর্তাও জড়িত ছিলেন।
সূত্র : এএফপি
Leave a Reply