">
এস এম বদরুল আলমঃ সরকার-সমবায় অংশীদারিত্বে প্রতিষ্ঠিত সমবায় আর্থিক প্রতিষ্ঠান নারায়ণগঞ্জ সেন্ট্রাল কো-অপারেটিভ ব্যাংক লি:, বাংলাদেশ সমবায় শিল্প সংস্থা লি: ও বাংলাদেশ কো-অপারেটিভ ইন্সুরেন্স লি:-কে মাসুদা বেগম এন্ড ফ্যামিলি ব্যক্তিগত প্রতিষ্ঠানে পরিণত করে লুটপাট, অর্থ আত্মসাৎ, দুর্নীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহার করে শুন্য থেকে ধনকুবেরে পরিণত হয়েছেন বলে সম্প্রতি দুর্নীতি দমন কমিশনে দায়েরকৃত এক অভিযোগে দাবি করা হয়েছে।
অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে এখন তার নারায়নগঞ্জ শহরে তিনটি বহুতল বাড়ি। ঢাকায় একাধিক বিলাসবহুল ফ্লাট ও দামি প্রাইভেট কার। নরসিংদির গ্রামের বাড়িতে প্রচুর সম্পদ। বিশাল অংকের ব্যাংক ব্যালেন্স। মাসুদা বেগম ও তার পরিবারের সদস্যদের জাতীয় পরিচয় পত্রের বিপরীতে সম্পদের অনুসন্ধান করলে অভিযোগের প্রমান পাওয়া যাবে বলে আবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
আঙ্গুল ফুলে কলা গাছ বনে যাওয়া মাসুদা বেগম এর সদ্য প্রয়াত স্বামী আলহাজ আবুল কাশেম একাধারে নারায়নগঞ্জ সেন্ট্রাল কো-অপারেটিভ ব্যাংক , নারায়নগঞ্জ ভুমি উন্নয়ন ব্যাংক, বাংলাদেশ কো-অপারেটিভ ইন্সুরেন্স লি: এর সাবেক চেয়ারম্যান ও বাংলাদেশ জাতীয় সমবায় ইউনিয়নের সেক্রেটারি এবং বাংলাদেশ সমবায় শিল্প সংস্থার চেয়ারম্যান ছিলেন। বাংলাদেশ কো-অপারেটিভ ইন্সুরেন্স লি: এ মাসুদা বেগম বর্তমানে আইন বহির্ভূতভাবে চেয়ারম্যান পদে আছেন। বাংলাদেশ কো-অপারেটিভ ইন্সুরেন্স লি: এ প্রয়াত স্বামী ৩ মেয়াদ চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করায় আইনী বাধার কারনে তার স্ত্রী মাসুদা বেগম কে চেয়ারম্যান বানিয়েছেন। পূর্বে বাংলাদেশ সমবায় শিল্প সংস্থার চেয়ারম্যান ছিলেন মাসুদা বেগম। উপরোক্ত চারটি সমবায় প্রতিষ্ঠানে আইনের তোয়াক্কা না করে ঘুরেফিরে তার পরিবারের সদস্যরা চেয়ারম্যান পদে ছিলেন। এসব অপকর্মে তাকে সহযোগিতা করেছেন সমবায় অধিদপ্তরের কিছু অসাধু কর্মকর্তা।
সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় গড়ে উঠা সমবায় মাসুদা বেগমের পরিবার লিজ নিয়েছিলেন। মাসুদা বেগম এর পরিবারের সদস্যরা কোন চাকরি করেন না আবার কোন ব্যবসাও করেন না। সমবায় প্রতিষ্ঠান সমুহে অবৈতনিক দায়িত্ব পালন করছেন। তার সম্পদের উৎস উপরোক্ত সমবায় প্রতিষ্ঠানসমুহ। বাংলাদেশ সমবায় শিল্প সংস্থা লি:, নারায়ণগঞ্জ সেন্ট্রাল কো-অপারেটিভ ব্যাংক লি: ও নারায়ণগঞ্জ ভুমি উন্নয়ন ব্যাংকে সরকারের ৪৯ শতাংশ শেয়ার রয়েছে। তিনি বিএনপির সময় বিএনপি আবার আওয়ামী লীগের সময় আওয়ামী লীগ বনে যান। ক্ষমতাসীনদের ছত্র ছায়ায় থেকে স্বার্থসিদ্ধি করেন। সমবায় যেন তার পারিবারিক সম্পদ। বাংলাদেশ কো-অপারেটিভ ইন্সুরেন্স লি:, নারায়নগঞ্জ সেন্ট্রাল কো-অপারেটিভ ব্যাংক লি: , নারায়নগঞ্জ ভুমি উন্নয়ন ব্যাংক, বাংলাদেশ সমবায় শিল্প সংস্থা লি: সমবায়ী প্রতিষ্ঠান হলেও তা মাসুদার পরিবার ব্যক্তিগত কোম্পানীতে পরিনত করেছিলেন। সময়ের পালাক্রমে বাংলাদেশ কো-অপারেটিভ ইন্সুরেন্স লি: ব্যতিত অন্য সমবায় সমিতি এখন তার পরিবারের হাত ছাড়া হয়েছে।
অন্যদিকে সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় পাটচাষীদের পাটের ন্যায্য মূল্য প্রদানের নিমিত্তে একটি পুর্নাঙ্গ পাটকল স্থাপন করার উদ্দেশ্যে বাংলাদেশ সমবায় শিল্প সংস্থা লিঃ ১৯৪৯ সালে যাত্রা শুরু করে। কাগজে সমিতির সদস্য সংখ্যা ৩৩৬টি। এর মধ্যে একটি সরকার, ৫৫টি কেন্দ্রীয় সমবায় সমিতি এবং ২৮০টি প্রাথমিক সমবায় সমিতি। সরকারের শেয়ার ৪৯ শতাংশ। তবে সদস্য সমিতিগুলোর অধিকাংশই নাম সর্বস্ব টিকে আছে। সংস্থার রয়েছে প্রচুর ভূ-সম্পদ। পাটের বেইলিং এর কাজ থাকায় শিল্পসংস্থা এখনও সচল আছে। রয়েছে বিশাল স্থাপনা। পাটের বেইলিং কাজে ব্যবহৃত ওয়্যার হাউজ আছে। আছে প্রচুর আয়ের সুযোগও।কিন্ত আয়ের ছিটেফোটাও সদস্য সমিতির ভাগ্যে জোটে না। তাদের দায়িত্বকালে সব উদরস্থ করেন মাসুদা বেগমের পরিবার।
একই অবস্থা নারায়নগঞ্জ সেন্ট্রাল কো-অপারেটিভ ব্যাংক লি: এর ক্ষেত্রে । বৃটিশ আমলে সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় প্রতিষ্ঠিত এই ব্যাংকের প্রচুর সম্পদ রয়েছে। নারায়ণগঞ্জ শহরের চাষাড়ায় ব্যাংকের ৫তলা মার্কেট ভবন। কৃষি ঋণ কার্যক্রম বন্ধ। লক্ষ্য উদ্দেশ্যের বাইরে স্বর্ণ বন্ধকি ঋণ দিচ্ছে। বেআইনী ভাবে আমানত সংগ্রহ ও ঋণ প্রদান করছে। অবৈধ ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালনা করছেন। মার্কেটের ভাড়া সহ অন্যান্য আয়ের কিয়দংশও সদস্য সমিতি পায়না। মাসুদার পরিবারই সব ভোগ করতেন। এই ব্যাংকেই মাসুদার স্বামী কাসেমের পিতা পিওনের চাকরি করতো। প্রকৃত সমবায়িদের কায়দা কৌশল করে বাংকের নির্বাচনে অংশ নিতে দেয়া হতো না। নারায়নগঞ্জ সেন্ট্রাল কো-অপারেটিভ ব্যাংক লি: এ সরকারের শেয়ার ৪৯ শতাংশ।
উপরোক্ত চারটি সমবায় প্রতিষ্ঠানে মাসুদা বেগমের পরিবারের অতীত ও বর্তমান কালের লুটপাট, ক্ষমতার অপব্যাবহার, জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ, অনিয়ম,দুর্নীতি তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন করার দাবি জানানো হয়েছে আবেদনে।
এ বিষয়ে মাসুদা বেগমের বক্তব্য নেয়ার জন্যে তার ব্যবহৃত মুঠোফোনে কল দিলে তা বন্ধ পাওয়া যায়।
Leave a Reply