এস এম বদরুল আলম : নকল ও ভেজালের বিভিন্ন অভিযোগের পরও ওষুধশিল্পে বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা অব্যাহত আছে। দেশীয় চাহিদার প্রায় ৯৮ ভাগ মেটানোর পর বিদেশে রপ্তানি হচ্ছে বাংলাদেশের তৈরি ওষুধ। বর্তমানে বিশ্বের প্রায় ১৬৮টি দেশে ওষুধ রপ্তানি করা হচ্ছে। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে এ খাতে রপ্তানি হয়েছে ১৩ কোটি ডলার বা ১০৯২ কোটি টাকা। রপ্তানি বেড়েছে ২৬শতাংশ। স্বাস্থ্যমন্ত্রী জানান, গত কয়েক দশকে ধাপে ধাপে উন্নতি করে ওষুধশিল্পে বাংলাদেশ অনন্য উচ্চতায় পৌঁছেছে। নিজেদের চাহিদার প্রায় ৯৮ ভাগ মিটিয়ে ১৬৮টির মতো দেশে ওষুধ রপ্তানি করা হচ্ছে। ভবিষ্যতে তা আরও বাড়বে।
অন্যদিকে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় গঠিত একটি বিশেষজ্ঞ দল ৭৩টি ওষুধ কোম্পানি সরেজমিন পরিদর্শন করে ২০১৪ সালের অক্টোবরে একটি প্রতিবেদন দেয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ওষুধ প্রযুক্তি বিভাগের অধ্যাপক ড. আবম ফারুকের নেতৃত্বে কমিটির প্রতিবেদনে ২৯টি কোম্পানির ওষুধের কার্যকারিতা ও উপযুক্ত মান নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করে এসব কোম্পানির ওষুধ জনস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর ও দুর্ঘটনা ঘটার আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর ২৯ কোম্পানির ওষুধ উৎপাদন বন্ধের নির্দেশ দেয়। এসব কোম্পানির মধ্যে রয়েছে, চট্টগ্রামের রয়েল ফার্মাসিউটিক্যালস, ফার্মিক ল্যাবরেটরিজ ও স্ট্যান্ডার্ড ল্যাবরেটরিজ, চুয়াডাঙ্গার এজটেক ফার্মাসিউটিক্যালস, দিনাজপুরের বেঙ্গল টেকনো ফার্মা, গাজীপুর কোনাবাড়ীর ব্রিস্টল ফার্মা, বরিশালের ইন্দো-বাংলা ফার্মাসিউটিক্যালস, রাজধানীর মিরপুরের ইনোভা ফার্মাসিউটিক্যালস, এবলেশন ল্যাবরেটরিজ, বিকল্প ফার্মাসিউটিক্যালস, যাত্রাবাড়ীর ডলফিন ফার্মাসিউটিক্যালস, পোস্তগোলার মিল্লাত ফার্মাসিউটিক্যালস, শ্যামলীর ট্রপিক্যাল ফার্মাসিউটিক্যাল ও তেজগাঁওয়ের রেমো কেমিক্যালস, নারায়ণগঞ্জের ন্যাশনাল ল্যাবরেটরিজ, সাভারের সুনিপুণ ফার্মাসিউটিক্যালস ও এভার্ট ফার্মা, কেরানীগঞ্জের ইউনিক ফার্মাসিউটিক্যালস, সিরাজগঞ্জের ওয়েসিস ল্যাবরেটরিজ ও রাসা ফার্মাসিউটিক্যালস, পাবনার ইউনিভার্সেল ফার্মাসিউটিক্যালস, সিলেটের জালফা ল্যাবরেটরিজ, নওগাঁর নর্থ বেঙ্গল ফার্মাসিউটিক্যালস, বরিশালের প্যারাডাইস ফার্মা, কুষ্টিয়ার কোয়ালিটি ফার্মাসিউটিক্যালস, ফরিদপুরের বেলসেন ফার্মাসিউটিক্যালস, ময়মনসিংহের স্পার্ক ফার্মাসিউটিক্যালস ও সেভ ফার্মাসিউটিক্যালসের বিরুদ্ধে নকল ও ভেজাল ওষুধ তৈরির অভিযোগ রয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের সনদ বাতিলের পরও তারা উচ্চ আদালতে রিট করে ওষুধ উৎপাদন অব্যাহত রেখেছে।
এদিকে ফেনীর জেনিত ফার্মাসিউটিক্যালস, বগুড়ার এ্যাডরুক ফার্মাসিউটিক্যালস ও মেডিকো ফার্মাসিউটিক্যালস, নোয়াখালীর সেন্টার ফার্মাসিউটিক্যালস, বরিশালের রেপকো ফার্মাসিউটিক্যালস, ইন্দো-বাংলা ফার্মাসিউটিক্যালস, হাজারীবাগের ইউনিয়ন ফার্মাসিউটিক্যালস, চট্রগ্রামের ফার্মিক ফার্মাসিউটিক্যালস, সিরাজগঞ্জ রাসা ফার্মাসিউটিক্যালস, কুষ্টিয়ার কোয়ালিটি ফার্মাসিউটিক্যালস, ফরিদপুর বেলসন ফার্মাসিউটিক্যালস, নরসিংদীর মিস্টিক ফার্মাসিউটিক্যালস, পাবনার ইউনিভার্সেল ফার্মাসিউটিক্যালস, গাজীপুরের ভেরিটাস ফার্মাসিউটিক্যালস কোং, এপেক্স ফার্মাসিউটিক্যালস, কনকর্ড ফার্মাসিউটিক্যালস ও জেসন ফার্মাসিউটিক্যালস, নোয়াখালীর প্রিমিয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস, কুমিল্লার বেসিক শিল্পনগরীর বেঙ্গল ফার্মাসিউটিক্যালস ও ক্রিস্টাল ফার্মাসিউটিক্যালস, রবাটসন্সগঞ্জ, আলমনগর, রংপুরের এ্যালকার্ড ফার্মাসিউটিক্যালস। এসমস্ত কোম্পানী মিডফোডের খোলা বাজার থেকে নিম্নমানের মানের কেমিকেল ক্রয় করে ওষুধ উৎপাদন ও বাজার জাত করছে , ফলে ওষুধের নির্ধারিত মূল্যের থেকে অনেক কম দামে বিক্রয় করছে, এ কারনেই মুড়ির মত মিডফোর্ডসহ সারা দেশে পত্রিকা ও ফেসবুকে উচ্চ লাভ দেখিয়ে ডিলার নিয়োগের মাধ্যমে এ সমস্ত কোম্পানী নিম্নমানের ওষুধ বিক্রয় করছে। এদিকে ব্রিস্টল ফার্মাসিটিক্যালস উচ্চ আদালতে রিট করে ঔষধ উৎপাদন করলেও দ্বিতীয়বার ড্রাগ টেস্টিং ল্যাবে ঔষধ পরীক্ষা করালে ওষুধে ভেজাল ধরা পড়ায় ওষুধ প্রশাষন কোম্পানির ঔষধ উৎপাদন বন্ধ করে দিলেও বিক্রয় বন্ধ নেই।
ইতিমধ্যে গত ২২/১২/২০ইং তারিখে ঔষধ প্রশাসন কর্তৃক টাঙ্গাইলের গোপালপুর উপজেলার নন্দনপুর এলাকার মেসার্স মনোমেদী বাংলাদেশ লি. নামে কোম্পানির উৎপাদন লাইসেন্স (ঝেব-৩৬৬) সাময়িক বাতিল করা হয়। সরকারি প্রতিষ্ঠান রাজধানীর মহাখালীর জনস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের উৎপাদন লাইসেন্স (জৈব-১৭৭) সাময়িক বাতিল করা হয়েছে। গাজীপুরের কালিয়াকৈরের কামালপুর এলাকার মেসার্স মার্কার ফার্মাসিউটিক্যালস এবং একই জেলার কুড়িবাড়ি এলাকার মেসার্স বায়োস ফার্মাসিউটিক্যালস, পিপলস ফার্মা, বিস্ট্রল ফার্মা, হলমার্ক ফার্মাসিউটিক্যালস, সাভারের তেঁতুলঝোড়া এলাকার নোভাস ফার্মাসিউটিক্যালসের উৎপাদন লাইসেন্স (জৈবও অজৈব) বাতিল করা হয়েছে। গাজীপুরের শ্রীপুরের দক্ষিণ ধনুয়া এলাকার মনিকো ফার্মার সব ধরনের ওষুধ উৎপাদন ও বাজারজাতকরণ সাময়িক স্থগিত করা হয়েছে। নরসিংদীর ১৬/১ ভাগদী এলাকার ফিনিক্স কেমিক্যাল ল্যাবরেটরিজের (বাংলাদেশ), একই জেলার শিবপুরের বিসিক শিল্প এলাকার কারারচরের টেকনো ড্রাগসের (ইউনিট-৩) সব ধরনের ওষুধ উৎপাদন ও বাজারজাতকরণ স্থগিত করা হয়েছে। এ ছাড়া গাজীপুরে বিস্ট্রল ফার্মার বিস্ট্রল ডেল্টা ট্যাবলেটের নিবন্ধন বাতিল করা হয়েছে।
ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মাহবুবুর রহমান বলেন, তিনি যোগদানের পরপরই প্রথম নকল ও ভেজাল ওষুধের বিরুদ্ধে অভিযানে নামেন। সেই অভিযান আরও জোরালো করা হয়েছে। নকল-ভেজাল ওষুধ উৎপাদনকারী কোনো কারখানা বা দোকানের সন্ধান পাওয়া গেলে সঙ্গে সঙ্গে অভিযান চালানো হবে।