• বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১১:৫৪ অপরাহ্ন |
  • Bangla Version
নিউজ হেডলাইন :
করোনা শনাক্তের হার ১৫ শতাংশের বেশি, মৃত্যু ১ ক্যাবরেরার টেকনিক নিয়ে প্রশ্ন ব্রাজিলের ভয়ংকর তিন কাতারের আমির ঢাকায় আসছেন ২২ এপ্রিল  অ্যানেসথেসিয়াজনিত দুর্ঘটনা প্রতিরোধে মন্ত্রণালয়ের ৬ দফা নির্দেশনা নকশায় ‘ত্রুটি নিয়ে’ গণশুনানিতে ক্ষোভ আড়ত ভাঙলে পাঁজর ভাঙবে ব্যবসায়ীদের গ্রামে সর্বজনীন পেনশন নিবন্ধন সহজ হচ্ছে ২৯ রমজান কি অফিস খোলা? বাংলাদেশ ইউনানী মেডিকেটেড কসমেটিক এর সম্ভাব্না শীর্ষক সেমিনার” ২০২৪ ইং। বাইডেনের শীর্ষ অগ্রাধিকারে বাংলাদেশের গণতন্ত্র সীমান্তে হত্যা বন্ধে আগেই অনুরোধ করা হয়েছে: পররাষ্ট্রমন্ত্রী জিম্মি নাবিকদের উদ্ধারে আলোচনা অনেকদূর এগিয়েছে: পররাষ্ট্রমন্ত্রী সেনেগালে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন: ৫৪ শতাংশের বেশি ভোট পেয়ে জয়ী ফায়ে কেজরিওয়ালকে গ্রেফতারসহ ভারতের বিভিন্ন ইস্যু নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে যুক্তরাষ্ট্র নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড্যানিয়েল কাহনেম্যান আর নেই

ওষুধই হয়ে উঠেছে রোগের কারণ মিটফোর্ড থেকে ভেজাল ওষুধ ছড়ায় সারাদেশে

এস এম বদরুল আলমঃ

ওষুধ জীবনরক্ষা করে। মানুষকে মুক্তি দেয় অসুস্থ্যতা থেকে। রোগ সংক্রমণের ব্যাপকতায় বেশ কিছু ওষুধের চাহিদাও বাজারে বেশ। গ্যাস্ট্রিক, প্রেসার ডায়াবেটিস, কিডনী রোগের ওষুধ অন্যতম। অতি মুনাফার লোভে এইসব ওষুধই নকল করছে জালিয়াত চক্র। রোগের জন্য খেতে হয় ওষুধ। কিন্তু ইদানীং কিছু ‘ওষুধ’ই হয়ে উঠেছে রোগের কারণ। রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় তৈরি হচ্ছে ভেজাল ওষুধ। কারখানা বানিয়ে অসাধু ব্যবসায়ীরা যা ছড়িয়ে দিচ্ছে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে। অনেক ফার্মেসি মালিক জেনেশুনেই রোগীর হাতে তুলে দিচ্ছে ভেজাল ওষুধ। এ নিয়ে ওষুধ প্রশাসন অধিদফতরের দৃশ্যমান তৎপরতাও নেই।

গোয়েন্দা কর্মকর্তারা জানান, নকল ওষুধ উৎপাদনকারীরা বিভিন্ন এলাকায় কারখানা বানায়। তবে তাদের পাইকারি বাজার মিটফোর্ড। এখান থেকেই ভেজাল ওষুধ ছড়ায় সারাদেশে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে অনেক ফার্মেসি মালিক কম টাকায় ওষুধ কিনতে মিটফোর্ড আসেন। নকল ওষুধ উৎপাদনকারীরা তাদের প্রস্তাব দেয়। বেশি লাভের আশায় ফার্মেসি মালিকরা রাজি হলে কুরিয়ারের মাধ্যমে ওষুধ পাঠানো হয়।

মিটফোর্ডের পাইকারি ওষুধ মার্কেটের কেমিস্ট অ্যান্ড ড্রাগিস্ট সমিতির এক পরিচালক জানান, তারাও নকল ওষুধ উৎপাদন এবং বিপণনের বিপক্ষে। এ জন্য ২০১৮ সালে ওষুধ প্রশাসন অধিদফতরকে একটি টাস্কফোর্স গঠনের প্রস্তাবও দিয়েছিলেন তারা। কিন্তু প্রশাসন পদক্ষেপ নেয়নি।
ওই ব্যবসায়ী স্বীকার করেছেন, কেউ কেউ আয়ুর্বেদিক লাইসেন্সের আড়ালে কারখানা বানিয়ে নকল ওষুধ তৈরি করছে। অনেকে বাসাবাড়িতেও ডাইস বানিয়ে ভেজাল ওষুধ বানাচ্ছে। এদের সংখ্যা কম। অল্প কয়েকজন অসাধু ব্যবসায়ীর জন্য পুরো মার্কেটের দুর্নাম হচ্ছে।

যোগাযোগ করা হলে মিটফোর্ডের ড্রাগিস্ট অ্যান্ড কেমিস্ট সমিতির সাবেক পরিচালক জাকির হোসেন রনি বলেন, ‘আমরা চাই নকল ওষুধ যারা তৈরি করে তাদের সর্বোচ্চ সাজা হোক। যারা বিপণন করে তাদের শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনার পাশাপাশি যাবতীয় লাইসেন্স বাতিল করে কালোতালিকাভুক্ত করা হোক।’
একই জেনেরিক নামের ওষুধ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান বাজারজাত করলেও একেকটির মান একেকরকম। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, তদারকির অভাবেই নিম্নমানের ওষুধ দেদার বিক্রি হচ্ছে।
ওষুধ প্রশাসন অধিদফতর ও সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, এখন দেশে ২৪১টি প্রতিষ্ঠান প্রায় ৩০ হাজার ব্র্যান্ডের ওষুধ বানাচ্ছে। যেকোনও ওষুধ বাজারজাত করার আগে ওষুধ প্রশাসন অধিদফতরের অনুমতি নিয়ে বাজারজাত করতে হয়। কিন্তু একবার বাজারজাত করার পর সেই ওষুধের গুণগত মান নিয়ে আর কোনও তদারকি হয় না। এই সুযোগেও অনেক নামসর্র্বস্ব প্রতিষ্ঠান ওষুধের মান কমিয়ে দেয়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ফার্মেসি মালিক বলেন, বড় ও নামকরা কোম্পানির ওষুধের দাম বেশি। কিন্তু অন্য আরেক কোম্পানি একই ওষুধ কমদামে বিক্রি করে। এজন্য অনেক ফার্মেসি মালিক প্রেসক্রিপশন দেখে জেনেরিক নাম ঠিক রেখে ব্র্যান্ড বদলে দেয়। তাদের কাছে লাভটাই বড়, মান নয়।
সংশ্লিষ্টরা জানান, ওষুধ প্রশাসন অধিদফতরের কাজ হলো মাঝে মাঝে বাজার থেকে ওষুধ সংগ্রহ করে মান পরীক্ষা করা। কিন্তু তাদের ল্যাবরেটরির সক্ষমতা কম। এই সুযোগ কাজে লাগায় অনেক কোম্পানি। লোকবলের অভাব ও ক্যাপাসিটি না থাকার দোহাই দিয়ে কর্তৃপক্ষ বিষয়টিকে গুরুত্ব দেয় না।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বাংলাদেশ ওষুধ শিল্প অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক ও হাডসন ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেডের কর্ণধার এসএম শফিউজ্জামান বলেন, ‘নকল ওষুধ উৎপাদন ও বিপণন প্রতিরোধে আমরা নিয়মিত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে চিঠি দিয়ে আসছি। এ ছাড়া আমরা নিয়মিত ড্রাগিস্ট, কেমিস্ট ও ফার্মাসিস্টদের নিয়ে সচেতনতামূলক সভা-সেমিনার করছি। এ কারণে আমরা মডেল ফার্মেসির ওপরও জোর দিচ্ছি।’

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, মিটফোর্ডে পাইকারি ওষুধের বাজারে অবাধে বিক্রি হচ্ছে ন্যাশনাল ড্রাগস লি., বেনহাস ফার্মা, মেডিকো ফার্মাসিউটিক্যালস, কোয়ালিটি ফার্মাসিউটিক্যালস কোং, ইনোভা ফার্মা, প্রিমিয়ার ফার্মা, ফার্মিক লি., সেইভ ফার্মা লি., বিকল্প ফার্মা, চট্টগ্রামের রয়েল ফার্মাসিউটিক্যালস, ও স্ট্যান্ডার্ড ল্যাবরেটরিজ, চুয়াডাঙ্গার এজটেক ফার্মাসিউটিক্যালস, দিনাজপুরের বেঙ্গল টেকনো ফার্মা, গাজীপুর কোনাবাড়ীর ব্রিস্টল ফার্মা, বরিশালের ইন্দো-বাংলা ফার্মাসিউটিক্যালস, এবলেশন ল্যাবরেটরিজ, যাত্রাবাড়ীর ডলফিন ফার্মাসিউটিক্যালস, পোস্তগোলার মিল্লাত ফার্মাসিউটিক্যালস, শ্যামলীর ট্রপিক্যাল ফার্মাসিউটিক্যাল ও তেজগাঁওয়ের রেমো কেমিক্যালস, নারায়ণগঞ্জের ন্যাশনাল ল্যাবরেটরিজ, সাভারের সুনিপুণ ফার্মাসিউটিক্যালস ও এভার্ট ফার্মা, কেরানীগঞ্জের ইউনিক ফার্মাসিউটিক্যালস, সিরাজগঞ্জের ওয়েসিস ল্যাবরেটরিজ ও রাসা ফার্মাসিউটিক্যালস, পাবনার ইউনিভার্সেল ফার্মাসিউটিক্যালস, সিলেটের জালফা ল্যাবরেটরিজ, নওগাঁর নর্থ বেঙ্গল ফার্মাসিউটিক্যালস, বরিশালের প্যারাডাইস ফার্মা, ফরিদপুরের বেলসেন ফার্মাসিউটিক্যালস, ময়মনসিংহের স্পার্ক ফার্মাসিউটিক্যালস ও সেভ ফার্মাসিউটিক্যালসের ফেনীর জেনিত ফার্মাসিউটিক্যালস, বগুড়ার এ্যাডরুক ফার্মাসিউটিক্যালস ও, নোয়াখালীর সেন্টার ফার্মাসিউটিক্যালস, বরিশালের রেপকো ফার্মাসিউটিক্যালস, ইন্দো-বাংলা ফার্মাসিউটিক্যালস, হাজারীবাগের ইউনিয়ন ফার্মাসিউটিক্যালস, সিরাজগঞ্জ রাসা ফার্মাসিউটিক্যালস, ফরিদপুর বেলসন ফার্মাসিউটিক্যালস, নরসিংদীর মিস্টিক ফার্মাসিউটিক্যালস, পাবনার ইউনিভার্সেল ফার্মাসিউটিক্যালস, গাজীপুরের ভেরিটাস ফার্মাসিউটিক্যালস কোং, এপেক্স ফার্মাসিউটিক্যালস, কনকর্ড ফার্মাসিউটিক্যালস ও জেসন ফার্মাসিউটিক্যালস, কুমিল্লার বেসিক শিল্পনগরীর বেঙ্গল ফার্মাসিউটিক্যালস ও ক্রিস্টাল ফার্মাসিউটিক্যালস, রবাটসন্সগঞ্জ, আলমনগর, রংপুরের এ্যালকার্ড ফার্মাসিউটিক্যালস। ইনট্রাফুড ইন্ড্রাট্রিজ লিমিটেডসহ বেশ কিছু কোম্পানির নিন্ম মানের ওষুধ।
রাজধানীর মিটফোর্ডের হাবিব মেডিকেলের ইস্রাফিল, দালাল তারেক, শরীফ মেডিসিনের মালিক রজ্জব শরীফ, মামুন ট্রেডার্সের অপু চন্দ্র ঘোষ, নায়না মেডিসিনের সবুর ও জসিম সার্জিকেলের আফজাল হোসেন যৌন উত্তেজক, শক্তিবর্ধক, ভিটামিন, ক্যান্সার প্রতিরোধক, গর্ভপাত ঘটানো, অজ্ঞান করার বিভিন্ন ইনজেকশন ও সিরাপসহ নানা নিন্ম মানের ওষুধ আমদানি করেন এবং দেশি ওষুধে বিদেশি লেবেল লাগিয়ে বিক্রি করে থাকেন।

এ ছাড়াও,  শিরিন ল্যাবরেটরীজ ইউনানী, এস বি ল্যাবরেটরীজ আয়ু ও এস বি হারবাল এন্ড নিউট্রিসিটিক্যালস লিঃ, আল-রীজ ল্যাবরেটরীজ আয়ু, আরগন ফার্মাসিউটিক্যালস আয়ু, দিহান ফার্মাসিউটিক্যালস আয়ু, অনির্বাণ মেডিসিনাল ইন্ডাস্ট্রিজ আয়ু, এসএস ল্যাবরেটরীজ ইউনানি, জেনেসিস ফার্মাসিউটিক্যালস আয়ু, ইউনিটি ফার্মাসিউটিক্যালস ইউনানি, প্রজ্ঞা ল্যাবরেটরীজ আয়ু, আশরাফুল ল্যাবরেটরীজ ইউনানি, আল-সাফা ফার্মাসিউটিক্যালস ইউনানি, পায়ওনিয়র ফার্মাসিউটিক্যালস ইউনানি, জেবিএল ড্রাগস ইউনানি, এস এ ল্যাবরেটরীজ ইউনানি, বিসমিল্লাহ ল্যাবরেটরীজ ইউনানি, সুরমা ফার্মাসিউটিক্যালস ইউনানি, গ্রামো ফার্মাসিউটিক্যালস ইউনানি, কসমিকো ল্যাবরেটরীজ ইউনানি, রিবাথ ইউনানি, ইউনিফিল ল্যাবরেটরীজ ইউনানি, গ্রেন প্লাস ফার্মাসিউটিক্যালস ইউনানি, দিদার ল্যাবরেটরীজ আয়ুর্বেদিক, কনফিডেন্স ফার্মাসিউটিক্যালস আয়ু, সবুজ ফার্মাসিউটিক্যালস ইউনানি, নাফিউ ল্যাবরেটরীজ ইউনানী, বিডি ইউনানি, ফিউচার ফার্মাসিউটিক্যালস ইউনানি, রবিন ল্যাবরেটরীজ আয়ু, হাইম্যাক্স ইউনানী ল্যাবরেটরীজ, নেচার ফার্মা ইউনানি, লিমিট ল্যাবরেটরীজ আয়ু, মেডিসান ল্যাবরেটরীজ আয়ুর্বেদিক, টাঙ্গাইলের, পাবনার ইমপেল ল্যাবরেটরীজ (ইউনানী), ঢাকার এশিয়া ইউনানী ল্যাবরেটরীজ (ইউনানী)  এভারগ্রীন ল্যাবরেটরীজ (আয়ু), ঢাকার বায়োমেডিকস ফার্মাসিউটিক্যালস( আয়ু), এস কে ল্যাবরেটরীজ লিঃ, কিশোরগঞ্জের ইষ্ট বেঙ্গল ইউনানী,  সেইফকো ল্যাবরেটরীজসহ অনেক কোম্পানীর ঔষধ রাস্তাঘাটে, মুদি দোকানসহ বিভিন্ন জায়গায় পাওয়া যায়।
এসব বিতর্কিত ঔষধ কোম্পানির বিরুদ্ধে জাতীয় প্রচার মাধ্যমে বিভিন্ন বিষয়ের উপর বিভিন্ন রিপোর্ট প্রকাশিত হয়েছে। রিপোর্ট প্রকাশের পরে জনস্বাস্থ্যের স্বার্থে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা কার্যকারি কোন প্রকার পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন বলে কোন প্রকার খবর পাওয়া যায় নি। তবে এসব বিতর্কিত ঔষধ কোম্পানির বিরুদ্ধে রিপোর্ট প্রকাশের পরে জনস্বাস্থ্যের উন্নতি না হলেও উন্নতি হয়েছে ফাইল সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের এমন খবরও পাওয়া গেছে।

এরুপ চলতে থাকলে ইউনানী ও আয়ুর্বেদিক চিকিৎসকদের মান মর্যাদা, যোগ্যতা, সিস্টেম নিয়ে গবেষণা কোন কিছুই আগাবে না। তাই যারা কাঁচা টাকা কামানোর জন্য ইউনানী আয়ুর্বেদিক সিস্টেমকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিচ্ছে তাদের দৃষ্টান্ত মূলক শাস্তি দিতে হবে। এই সকল মূর্খ, লোভী, মুনাফাখোর দের হাত থেকে এই সিস্টেমকে বাঁচাতে হবে। তাদের নেতৃত্বের অন্তরালে অর্থ উপার্জনের ধান্ধা বন্ধ করতে হবে। আবার ইউনানি ও আয়ুর্বেদিক সিস্টেমের উন্নয়নের জন্য সরকার ইউনানি ও আয়ুর্বেদিক শিল্প মালিক সমিতির নেতৃবৃন্দ কে একাধিক বার বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ট্রেডিশনাল মেডিসিন সিস্টেম এর উপর কর্মশালায় যোগ দিতে চিহ্নিত বিতর্কিত ঔষধ কোম্পানির মালিকেদের সরকারি খরচে বিদেশে পাঠানো হলে তারা নাম মাত্র কর্মশায় অংশ নিয়ে আমোদ প্রমোদ ভ্রমণে ব্যাস্ত থেকে সরকারি অর্থের অপচয় করেছেন।

বাংলাদেশ কেমিস্ট অ্যান্ড ড্রাগিস্ট সমিতি সূত্রে জানা গেছে, অ্যান্টিবায়োটিক টেট্রাসাইক্লিনের কাঁচামালের সঙ্গে বরিক এসিড, গ্লিসারিনের সঙ্গে সরবিটল, রিবোফ্লোভিন, ভিটামিন বি-২ এর সঙ্গে ডাইকালার মিশিয়ে অহরহ বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া খোলাবাজারে বিক্রি হচ্ছে টেট্রাসাইক্লিন, অক্সিটেট্রা সাইক্লিন, এমক্সিসিলিন, ডক্সিসাইক্লিন, মেট্রোনিডাজল, এমপিসিলিন, থিয়ামিন হাইড্রোক্সোরাইড পেনিসিলিন ও প্যারাসিটামল এবং বেশকিছু ওষুধ ও ইনজেকশনের কাঁচামাল। অথচ বিশেষজ্ঞদের মতে, এসব কাঁচামাল খোলাবাজারে বিক্রি করা আইনত দন্ডনীয় অপরাধ।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ওষুধ এমন এক পণ্য, যার সঙ্গে জীবন-মৃত্যু জড়িয়ে। তাই ভেজাল ওষুধের বিরুদ্ধে আরও জোরালো পদক্ষেপ নেওয়া উচিত। ওষুধ প্রশাসন অধিদফতরকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে সমন্বয় করে নিয়মিত অভিযান চালাতে হবে। নকল ওষুধ উৎপাদন ও বিপণনকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির আওতায় আনতে হবে।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মাকোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক সায়েদুর রহমান বলেন, ‘নকল ওষুধ উৎপাদন ও বিপণন ভয়াবহ অপরাধ। দৃষ্টান্তমূলক সাজা না হলে এটি থামবে না। এতে রোগ তো সারেই না, উল্টো আরও জটিলতা বাড়ে।’

তিনি আরও বলেন, ‘নকল ওষুধের কারণে ব্যক্তির শারীরিক ক্ষতির সঙ্গে আর্থিক ক্ষতিও হয়। এর বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ট সকল সংস্থাকে একযোগে কাজ করতে হবে।’
গত ১২ আগস্ট ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের কোতয়ালি জোনাল টিম রাজধানী ঢাকা, সাভার ও পিরোজপুরের নেছারাবাদ বিসিক শিল্প এলাকায় অভিযান চালিয়ে বিপুল পরিমাণ নকল ওষুধ জব্দ করে। এসময় গ্রেফতার করা হয় আটজনকে। যারা রীতিমতো কারখানা বানিয়ে নামিদামি ব্র্যান্ডের মোড়কে নকল ওষুধ বানাতো। তাদের কারখানা থেকে নকল ওষুধ তৈরির যন্ত্রপাতি উদ্ধার করা হয়েছে। ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার সাইফুর রহমান আজাদ বলেন, চক্রটি দীর্ঘদিন আয়ুবের্দিক ওষুধ তৈরির ভুয়া লাইসেন্সে কারখানা বানিয়ে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের নামে ভেজাল ওষুধ বানাতো। সাভার ও পিরোজপুরেও তাদের কারখানা আছে। ভেজাল ওষুধগুলো কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন এলাকার ফার্মেসিতে পাঠাতো চক্রটি।

গোয়েন্দা কর্মকর্তারা বলছেন, করোনা মহামারিতে বহুল ব্যবহৃত একমি ল্যাবরেটরিসের মোনাস-১০ ও ইনসেপ্টা ফার্মাসিউটিক্যালস-এর মনটেয়ার-১০ নকল করতো চক্রটি। আবার স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস-এর সেফ-৩, সেকলো-২০, জেনিথ ফার্মাসিউটিক্যালস-এর ন্যাপ্রোক্সেন প্লাস-৫০০ ও বানাতো ওরা।
গোয়েন্দা পুলিশের এক কর্মকর্তা জানান, সেফ-৩ এর বাজার মূল্য প্রতি পিস ৩৫ টাকা ৫০ পয়সা। চক্রটি নকল সেফ-৩ বিক্রি করতো ৫ টাকা করে। একইভাবে ছয় টাকা দামের সেকলো ৭৫ পয়সা, ১৬ টাকা মূল্যের মনটেয়ার ৩ টাকা, ১১ টাকা মূল্যের ন্যাপ্রোক্সেন আড়াই টাকা এবং ১৬ টাকা মূল্যের মোনাস ৩ টাকায় বিক্রি করতো। ফার্মেসি মালিকরাও মাত্রাতিরিক্ত মুনাফার লোভে বিক্রি করতো এসব ভুয়া ওষুধ।

গোয়েন্দা কর্মকর্তারা জানান, সর্বশেষ গ্রেফতার হওয়া নকল ওষুধ উৎপাদনকারী চক্রটির মূল হোতা ফয়সাল। সে ওষুধ প্রশাসন অধিদফতর থেকে আয়ুবের্দিক ওষুধ তৈরির একটি লাইসেন্স নিয়েছিল। ওটা ব্যবহার করে সে পিরোজপুরের বিসিক শিল্পনগরীতে কারখানা স্থাপন করে। আতিয়ার নামের এক কেমিস্টের কাছ থেকে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের ওষুধের ফর্মুলাও নিয়েছিল সে। তারপর শুরু করে নকল ওষুধ উৎপাদন।
রাজধানীর মিটফোর্ডের মুহিব নামের এক ব্যবসায়ীর কাছ থেকে রাসায়নিক সংগ্রহ করতো ফয়সাল। সেগুলো সাভার ও পিরোজপুর পাঠিয়ে নকল ওষুধ তৈরি করে আবার নিয়ে আসতো মিটফোর্ডে। মিটফোর্ড থেকেই ফয়সালের সহযোগী মোবারক, নাসির, ওহিদুল, মামুন, রবিন, ইব্রাহীম, আবু নাইম ও আরেক ফয়সালের মাধ্যমে সারাদেশে বিক্রি করতো।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তারা বলছেন, নকল ও ভেজাল ওষুধ উৎপাদন ও বিপণনে ঢাকাসহ সারাদেশে একাধিক চক্র সক্রিয়। গোয়েন্দাতথ্যের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে কিছু চক্রকে আইনের আওতায় আনা হয় ঠিকই, কিন্তু জামিনে বেরিয়ে তারা আবার শুরু করে ভেজাল ওষুধ তৈরির কাজ। গত কয়েকবছরে মিটফোর্ডের বাজার থেকেই কয়েক শ’ কোটি মূল্যের ভেজাল ওষুধ জব্দ করা হয়েছে।

 


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published.