• বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ০৮:৫৪ পূর্বাহ্ন |
  • Bangla Version
নিউজ হেডলাইন :
করোনা শনাক্তের হার ১৫ শতাংশের বেশি, মৃত্যু ১ ফের আগ্রাসনের চেষ্টা করলে ইসরায়েলকে শক্তিশালী জবাবের হুঁশিয়ার ইরানের গাজায় এক গণকবরেই মিলল ৩০০ লাশ ইসরায়েলের গভীরে হামলার দাবি হিজবুল্লাহর বেনজীরের সম্পদ অনুসন্ধানে দুদক দুর্নীতির একটা সীমা থাকে, এটা সাগরচুরি বেনজীরের দুর্নীতির অনুসন্ধান চেয়ে হাইকোর্টে রিট প্রভাবমুক্ত থেকে দুদককে অনুসন্ধান করতে হবে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কাতারের আমিরের বৈঠক কাতারের সঙ্গে পাঁচটি চুক্তি ও পাঁচটি সমঝোতা স্মারক সই রেয়াত সুবিধা বাতিল, ঢাকা থেকে ১৫ রুটে যত বাড়ছে ট্রেনের ভাড়া চলমান তাপপ্রবাহ আরো কতদিন থাকবে, যা জানা গেল রংধনুর রফিকের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ অনুসন্ধানে দুদক বেনজীরের বিরুদ্ধে দুদকের অনুসন্ধান, অগ্রগতির প্রতিবেদন চেয়েছেন হাইকোর্ট পদে থেকেই ইউপি চেয়ারম্যানরা উপজেলা নির্বাচন করতে পারবেন : হাইকোর্ট উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের চতুর্থ ধাপের তফসিল ঘোষণা

তথ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করতে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে

লায়ন মো. গনি মিয়া বাবুল

২৮ জানুয়ারি আন্তর্জাতিক তথ্য সুরক্ষা দিবস। বাংলাদেশ সংবিধানের ৪৩ (খ) অনুচ্ছেদে প্রাইভেসি রাইটস বা ব্যক্তির তথ্য সুরক্ষা ও গোপনীয়তা মৌলিক মানবাধিকার হিসেবে স্বীকৃত। একইসঙ্গে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে অনুমতি ছাড়া কারো ব্যক্তিগত তথ্য প্রকাশকে অপরাধ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার ঘোষণা (অনুচ্ছেদ ১২) নাগরিক ও রাজনৈতিক অধিকার বিষয়ে আন্তর্জাতিক সনদ (অনুচ্ছেদ ১৭), জাতিসংঘের কনভেনশন অন মাইগ্রেন্ট ওয়ার্কার্স (অনুচ্ছেদ ১৪) এবং শিশু অধিকার সনদ (অনুচ্ছেদ ১৬)-এ প্রাইভেসিকে অধিকার হিসেবে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে। অথচ বাংলাদেশের কোনো আইনে নাগরিকের তথ্য সুরক্ষার বিষয়ে সুস্পষ্ট এবং পূর্ণাঙ্গ কোনো দিকনির্দেশনাই নেই। তথ্য সুরক্ষা সুনিশ্চিত করতে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। এই লক্ষ্যে বিদ্যমান আইনে যথাযথ প্রয়োগ এবং সময়োপযোগী তথ্য সুরক্ষা আইন প্রণয়ন করা আবশ্যক।

সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান দ্বারা ব্যক্তি সম্পর্কিত তথ্য সংগ্রহ, সংরক্ষণ, প্রক্রিয়াজাতকরণ, প্রচার ও প্রয়োগ করার ক্ষেত্রে ব্যক্তির সর্বাধিক নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা কিভাবে বজায় থাকবে তা নিশ্চিত করতে হবে।

বিভিন্ন দেশের মতো বাংলাদেশেও মানুষের ব্যক্তিগত গোপনীয়তা লঙ্ঘনের মতো চরম নৈতিক অপরাধকে প্রতিহত করার জন্য আইনি ব্যবস্থা থাকা জরুরি। কেউ ইচ্ছা করলেই যাতে আরেক নাগরিকের অধিকার ক্ষুন্ন করতে না পারে সেজন্য শক্ত আইন থাকা উচিত। আইন ব্যক্তির পক্ষে তার অধিকার সংরক্ষণে দায়িত্ব পালন করে। এর সঙ্গে সঙ্গে আইন মেনে চলার জন্য জনসচেতনতাও প্রয়োজন। শুধু আইন দিয়ে এই অপকর্ম বন্ধ করা যাবে না। মানুষ নৈতিক মূল্যবোধের বিষয়ে সজাগ হলে ব্যক্তিগত গোপনীয়তা লঙ্ঘনের মতো চরম নৈতিক অপরাধ নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।

প্রতিবছর এ দিবস উপলক্ষে বিশ্বব্যাপী বিভিন্ন সংগঠন ব্যক্তিগত তথ্যের সুরক্ষার গুরুত্ব সম্পর্কে সচেতনতা তৈরিতে নানা কর্মসূচি পালন করে।

ব্যক্তিগত তথ্যের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে সচেতনতামূলক কার্যক্রম জোরদার করা প্রয়োজন। অপরাধ নিয়ন্ত্রণ ও সাইবার নিরাপত্তা নিশ্চিতে ব্যক্তিগত তথ্যের সুরক্ষার বিষয়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। প্রত্যেক ব্যক্তি নিজেকে সাইবার অপরাধের শিকার হওয়া থেকে রক্ষার জন্য তার ব্যক্তিগত তথ্যের সুরক্ষার বিষয়টি জানা জরুরি। তাই এ সম্পর্কে সচেতনতা তৈরির দায়িত্ব শুধু সরকারের নয়, বরং এর জন্য সবাই নিজ নিজ অবস্থান থেকে ভূমিকা রাখতে হবে। প্রতিটি সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান তাদের লোকজনকে সচেতন করার জন্যে সেমিনার, সিম্পোজিয়ামসহ প্রশিক্ষণ কর্মশালার আয়োজন করতে পারে।

তথ্য সুরক্ষা দিবস হলো একটি বৃহত্তর প্রচার কার্যক্রমের অংশ যা ব্যক্তিগত তথ্যের সুরক্ষার গুরুত্ব সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি করে এবং ব্যক্তিগত তথ্য সহজ উপায়ে সুরক্ষিত করার প্রতি গুরুত্ব দেয়। সংগঠন বা প্রতিষ্ঠানগুলোকে কর্মক্ষেত্রে ভোক্তাদের তথ্য সুরক্ষার প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করানো সংশ্লিষ্টদের দায়িত্ব।

১৯৮১ সালে ইউরোপের বৃহৎ সংগঠন ‘কাউন্সিল অব ইউরোপে’ কনভেনশন ১০৮ স্বাক্ষরের মধ্যদিয়ে বিশ্বে প্রথম তথ্য সুরক্ষা দিবস উদযাপন শুরু হয়। ‘কনভেনশন ১০৮’ গোপনীয়তা ও তথ্য সুরক্ষা নিয়ে প্রথম কোনো আন্তর্জাতিক চুক্তি যা প্রতিপালনের আইনি বাধ্যবাধকতা রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রে প্রতি বছর ২৮ জানুয়ারি ন্যাশনাল সাইবার সিকিউরিটি অ্যালায়েন্স (এনসিএসএ) এর নেতৃত্বে দিবসটি পালন করা হয়।
এই দিবসটিতে অলাভজনক প্রতিষ্ঠান, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, করপোরেশন, সরকারি প্রতিষ্ঠান, পৌরসভা ও ব্যক্তি পর্যায়ে ব্যক্তিগত তথ্য সুরক্ষার প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে সচেতনতা তৈরি করা হয়। তুলে ধরা হয় ব্যক্তিগত তথ্য সুরক্ষার সহজ সব পদ্ধতি।

আমরা আমাদের দৈনন্দিন জীবনে অবিরাম তথ্য প্রবাহ তৈরি করছি। সরকারি হিসাবে বর্তমানে বাংলাদেশে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা ১১ কোটির বেশি। আজকে আমরা আমাদের জীবনের বেশিরভাগ সময় ইন্টারনেট ও আমাদের সঙ্গে সংযুক্ত থাকা ডিভাইসগুলোতে ব্যয় করছি। এখনও খুব কম মানুষই জানে যে, আমাদের ব্যবহৃত ডিভাইস ও অনলাইন সেবা থেকে অসংখ্য ব্যক্তিগত তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে এবং তা শেয়ার করা হচ্ছে। এসব তথ্য অনির্দিষ্টভাবে গচ্ছিত করা হতে পারে এবং আমাদের ব্যক্তিগত এসব তথ্য উপকারে ব্যবহার করা হতে পারে আবার অবাঞ্চিতভাবেও ব্যবহার করা হতে পারে। এমনকি দেখা গেছে, অনলাইনে অনুপকারী তথ্য শেয়ার করার ফলেও তা আপনার আর্থসামাজিক অবস্থান সম্পর্কে হস্তক্ষেপ করতে ব্যবহার করা হয়েছে।

শক্তিশালী আইনের অনুপস্থিতিতে দেশি-বিদেশি অনেক কোম্পানি তাদের ইউজার ও ক্রেতাদের ব্যক্তিগত তথ্য পর্যবেক্ষণ করার সুযোগ পাচ্ছে এবং ভোক্তাদের এসব তথ্য তারা লাভের জন্য বিক্রি করে দিচ্ছে। ভোক্তাদের বোঝা প্রয়োজন যে তাদের তথ্যের সঠিক মূল্য আসলে কতটা এবং কিভাবে এই তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে, ব্যবহার করা হচ্ছে এবং তা শেয়ার করা হচ্ছে।

প্রত্যেকের ব্যক্তিগত তথ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করতে নিজেকে সচেতন ও সতর্ক থাকতে হবে। সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো তথ্য সুরক্ষার বিষয়ে সময়োপযোগী কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করতে হবে। তথ্যের নিরাপত্তা ও সুরক্ষা নিশ্চিত করতে সরকারি উদ্যোগে সচেতনতামূলক কার্যক্রম বাড়াতে হবে। বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে ব্যক্তিগত ও প্রাতিষ্ঠানিক তথ্যের গোপনীয়তা, নিরাপত্তা ও সুরক্ষার জন্যে সদা সতর্ক ও সচেষ্ট থাকা অপরিহার্য।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published.