নিজস্ব প্রতিবেদক : ঈদযাত্রায় ফিটনেসবিহীন বাস সড়কে নামাতে মেরামতের হিড়িক পড়েছে। ইঞ্জিন-চেসিস পুরোনো তবে কাঠামো পাচ্ছে নতুন চেহারা। শতাধিক গ্যারেজে ঈদের চাপ সামলাতে প্রস্তুত হচ্ছে এমন অন্তত এক হাজার বাস। তবে এসব মহাসড়কে চলাচলের উপযোগী কিনা এর তদারকি করছে না বিআরটিএর।
ঈদে লাখ লাখ মানুষ একসঙ্গে ঢাকা থেকে গ্রামে পাড়ি জমান। আবার পরিবার পরিজনের সাথে ঈদ করে ঢাকায় ফিরে আসেন। বিপুল সংখ্যক মানুষ দুই তিন দিনের মধ্যে ঢাকা ছাড়ার কারণে পরিবহনে প্রচ- চাপ পড়ে। বাসের টিকেট পাওয়া যায় না।
এই সুযোগে কিছু অসাধু পরিবহন মালিক লক্কড়ঝক্কড় পুরনো বাস রঙ করে সড়কে নামিয়ে যাত্রী পরিবহন করেন। ফলে যাত্রীদের দুর্ভোগের পাশাপাশি সড়ক দুর্ঘটনাও বেশি ঘটে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় ওয়ার্কসপের কারিগর ও রঙ মিস্ত্রিরা পুরনো বাস মেরামত ও রঙ করতে ব্যস্ত সময় পার করছেন। ঈদের আগেই এসব ফিটনেস বিহীন লক্কড়ঝক্কড় গাড়ির দৌরাত্ম্য বেড়ে যাবে। বহু বছরের পুরোনো গাড়ির বডিতে রঙ দিয়ে নতুন করে সাজানো হয় যাত্রীদের আকর্ষণের জন্য।
গাবতলী এলাকায় পুরনো বাসে রঙ লাগানো একজন মিস্ত্রি বলেন, ঈদ যাত্রায় দূর পাল্লার ও ঢাকার আশে পাশের মানুষের চাপের বিপরীতে যানবাহন সঙ্কট দেখা যায়। সেই সুযোগ কাজে লাগিয়ে এক শ্রেণির পরিবহন ব্যবসায়ী ভালো মন্দ বিচার না করে রঙ করা পুরোনো গাড়ি নামান রাস্তায়। বাড়তি চাপে যাত্রীরা হাতের কাছে যা পান সেসব গাড়িতেই উঠে যাত্রা শুরু করেন।
আমিনবাজারের গ্যারেজেগুলোতে শ্রমিকদের দম ফেলার সময় নেই। ঈদের আগেই পুরোনো বাসগুলো মেরামত করে পৌঁছে দিতে হবে মালিকের কাছে। ফিটনেসহীন বাসগুলো মেরামতের পর রঙ দিয়ে করা হয় নতুনের মতো চেহারা। এরপর এইসব ফিটনেসহীন বাস নামবে মহাসড়কে।
গাবতলী, আমিনবাজার, হেমায়েতপুরসহ নানা এলাকার শতাধিক গ্যারেজে লক্কড়-ঝক্কড় বাসে রঙ করে ঈদযাত্রায় সড়কে নামানো হচ্ছে। তবে তা বন্ধে বিআরটিএ এর নজরদারি নেই।
দুর্ঘটনা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এসব গাড়িই বেশিরভাগ ক্ষেত্রে দুর্ঘটনার কারণ হয়। কখনো কখনো পথেই হয়ে পড়ে বিকল। এতে যানজট তৈরিসহ বাড়ে যাত্রী ভোগান্তি।
তবে ফিটনেসহীন বাস যেন গাবতলী মহাখালী টার্মিনাল থেকে ছাড়তে না পারে সেজন্য ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার ঘোষণা দিয়েছেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন।
যাত্রী কল্যাণ সমিতির তথ্য বলছে, গতবার করোনার বিধিনিষেধে বাড়ি ফেরেননি অনেকে। তারপরও দুই ঈদে সড়কে প্রাণ গেছে ৪৯১ জনের। আর ৪০৭টি দুর্ঘটনার বেশির ভাগই হয়েছে ফিটনেসহীন গাড়ির কারণে।
যাত্রীরা বলছেন, প্রশাসনের নজরদারি থাকলে ঈদে পুরোনো ফিটনেসবিহীন গাড়ি চলাচল নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব। কিন্তু ঈদকে কেন্দ্র করে সাধারণ মানুষের টার্গেট থাকে যে ভাবেই হোক প্রিয়জনদের সঙ্গে ঈদ করার। আর পরিবহণ ব্যবসায়ীদের টার্গেট থাকে বাড়তি আয় করার।