নিজস্ব প্রতিবেদকঃ বাংলাদেশ ব্যাংক, রূপালী ব্যাংক ও উত্তরা ব্যাংকের কয়েকজন কর্মকর্তার যোগসাজশে ভুয়া ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খুলে সঞ্চয়পত্রের বিপুল অঙ্কের টাকা আত্মসাতের চাঞ্চল্যকর ঘটনা উদঘাটন করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এই ঘটনায় মোট ১২ জনকে আসামি করে মামলা করেছে সংস্থাটি, যাদের মধ্যে ১০ জনই ব্যাংক কর্মকর্তা।
২০২২ সালে বাংলাদেশ ব্যাংকের অডিটে প্রথম এই জালিয়াতির বিষয়টি ধরা পড়ে। দীর্ঘ অনুসন্ধানের পর সম্প্রতি দুদকের উপ-সহকারী পরিচালক ইমরান হোসেন বরিশাল সমন্বিত জেলা কার্যালয়ে মামলাটি দায়ের করেন। দুদকের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বুধবার (৫ নভেম্বর) এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
মামলায় আসামিদের মধ্যে রয়েছেন—বাংলাদেশ ব্যাংকের বরখাস্তকৃত ক্যাশ অফিসার মো. সিকদার লিয়াকত, রূপালী ব্যাংকের সাবেক জুনিয়র অফিসার (বর্তমানে বরখাস্ত) শিবলী সাদিক ফয়সাল, প্রিন্সিপাল অফিসার মাহবুবুর রহমান, জোনাল অফিসার মো. ফরহাদ হোসেন খান, সিনিয়র প্রিন্সিপাল অফিসার (অব.) সঞ্জয় কুমার সরকার, সিনিয়র প্রিন্সিপাল অফিসার (অব.) মো. নাসির উদ্দিন তালুকদার, প্রিন্সিপাল অফিসার রওশন রহমান ও সহকারী অফিসার শিফাইন মোস্তারী।
এছাড়া উত্তরা ব্যাংকের বাধ্যতামূলক অবসরপ্রাপ্ত সাবেক অফিসার মেহেদী হাসান, সিনিয়র প্রিন্সিপাল অফিসার মো. মেহেদী হাসান, এবং দুই গ্রাহক মো. সালাউদ্দিন ও সামসুল আহসান বিল্টুকেও অভিযুক্ত করা হয়েছে।
দুদকের অভিযোগপত্রে বলা হয়, আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে প্রতারণা ও জালিয়াতির আশ্রয় নিয়ে ভুয়া অ্যাকাউন্ট খুলে তিন ব্যাংকের বিভিন্ন শাখা—বাংলাদেশ ব্যাংকের বরিশাল শাখা, উত্তরা ব্যাংকের বরিশাল শাখা এবং রূপালী ব্যাংকের সদর রোড কর্পোরেট ও সেন্ট্রাল বাসটার্মিনাল শাখা ব্যবহার করে সঞ্চয়পত্রের ৫ কোটি ৫০ লাখ ৫২ হাজার ৫৬৯ টাকা আত্মসাৎ করেন।
তদন্তে জানা যায়, তিন দফায় এই অর্থ আত্মসাৎ করা হয়—প্রথম দফায় ৪ কোটি ৮৮ লাখ ১০ হাজার ৭২৭ টাকা, দ্বিতীয় দফায় ১৫ লাখ ৫৯ হাজার ৮০৮ টাকা, এবং তৃতীয় দফায় ৪৬ লাখ ৮২ হাজার ৩৪ টাকা হাতিয়ে নেওয়া হয়।
ঘটনাটি প্রথম ধরা পড়ে ২০২২ সালের নভেম্বর মাসে, যখন বাংলাদেশ ব্যাংকের বরিশাল অফিসের প্রাইজবন্ড ও সঞ্চয়পত্র শাখা এবং সরকারি হিসাব বিভাগের (পিএডি) মাসিক বিবরণী যাচাইয়ের সময় অসঙ্গতি চোখে পড়ে। এরপর ২০২৩ সালের ৭ আগস্ট বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃপক্ষ বরিশালের কোতয়ালী থানায় এ বিষয়ে একটি মামলা দায়ের করে। পরে তদন্তের স্বার্থে পুরো বিষয়টি দুদকের হাতে তুলে দেওয়া হয়।
দুদক এখন মামলাটি বিস্তারিতভাবে তদন্ত করছে এবং অভিযোগ প্রমাণিত হলে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছে সংস্থাটি।







