এসএম বদরুল আলমঃ স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি)-এর আওতাধীন “আরবান রেজিলিয়েন্ট টাউন ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট” বা সংক্ষেপে আর ইউ টি ডিপি (RUTDP) নামের বিশাল এই প্রকল্পে একের পর এক অনিয়ম আর বিতর্কে জড়াচ্ছে কর্মকর্তারা। প্রায় সাড়ে ছয় হাজার কোটি টাকার এই প্রকল্পে সরকারি অর্থে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে শতাধিক কর্মকর্তা, কনসালটেন্ট ও ফার্ম। কিন্তু প্রকল্পের কর্মকাণ্ডের চেয়ে বেশি আলোচনায় এখন প্রকল্পের এক শীর্ষ কনসালটেন্ট নূরুল আমিন তালুকদার—যাকে নিয়ে নানা অভিযোগ ঘুরে বেড়াচ্ছে অফিসের ভেতরে-বাইরে।
সূত্র জানায়, নূরুল আমিন তালুকদার এই প্রকল্পের ডি এম এস (DMS) কনসালটেন্ট হিসেবে দায়িত্বে আছেন। অভিযোগ রয়েছে, তিনি নাকি এই পদে আসীন হয়েছেন ঘুষের বিনিময়ে। প্রকল্পের সাবেক প্রজেক্ট ডিরেক্টর (পিডি) প্রায় সাত লাখ টাকা ঘুষ নিয়ে তাকে নিয়োগ দিয়েছেন—এমন তথ্যও মিলেছে সংশ্লিষ্ট মহল থেকে। তার মাসিক বেতন প্রায় আড়াই লাখ টাকা বলে জানা গেছে।
এই প্রকল্পের আওতায় ৮১টি পৌরসভা ও সিটি কর্পোরেশনে “ক্লাস্টার ডেভেলপমেন্ট কর্মশালা” আয়োজনের পরিকল্পনা রয়েছে। প্রতিটি কর্মশালার জন্য যাতায়াত, খাওয়া-দাওয়া ও অনারিয়াম বাবদ প্রায় দেড় লাখ টাকা বাজেট ধরা আছে। কিন্তু বাস্তবে এই টাকা কোথায় যাচ্ছে, তা নিয়ে দেখা দিয়েছে প্রশ্ন।
প্রকল্পের কয়েকজন কর্মকর্তা অভিযোগ করে জানান, কর্মশালার সময়সূচি সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত হলেও বাস্তবে তা হয় সকাল ১০টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত। আর বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই প্রকল্পের নির্ধারিত ব্যয়ের টাকা পৌরসভা বা সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলীদের নিজেদের পকেট থেকে খরচ করতে হয়। পরবর্তীতে সেই টাকা নূরুল আমিন তালুকদার ও পিডির মধ্যে ভাগ হয়ে যায় বলে জানা গেছে।
অভিযোগ এখানেই শেষ নয়—কর্মশালাগুলোতে তিনি প্রায়ই সুন্দরী নারী সহকর্মীদের নিয়ে সফর করেন। তাদের মধ্যে রয়েছেন আরবান প্ল্যানার জোবায়দা পারভীন, আর্কিটেক্ট আজমিরা ও ফারহানা ইসলাম, জেন্ডার স্পেশালিস্ট সাজেদা বেগমসহ আরও কয়েকজন নারী কর্মকর্তা। স্থানীয় প্রকৌশলীদের ভাষ্য অনুযায়ী, কর্মশালার চেয়ে বেশি সময় কাটে তার “বিশেষ অতিথিদের” সঙ্গে আলাপ-আড্ডায়।
অফিসের একাধিক কর্মকর্তা জানান, নূরুল আমিন তালুকদার অফিস সময়েও প্রায়ই নারী সহকর্মীদের নিয়ে ব্যক্তিগত আলাপচারিতায় মেতে থাকেন। অনেক সময় আপত্তিকর অবস্থায়ও তাকে দেখা গেছে। সূত্র জানায়, তার পরিবার বর্তমানে আমেরিকায় স্থায়ীভাবে বসবাস করছে, আর ঢাকায় তার নিজস্ব বাড়িও রয়েছে।
অভিযোগ রয়েছে, তিনি প্রায়ই অফিসের কিছু নারী কর্মীকে নিজের বাসায় আমন্ত্রণ জানান। সেখানে সারাদিন চলে খাওয়া-দাওয়া, আড্ডা ও হাসিঠাট্টা। এতে অনেক নারী কর্মকর্তা আতঙ্কে ও অস্বস্তিতে অফিস করেন, বিশেষ করে যারা তার সঙ্গে সরাসরি কাজ করেন।
প্রকল্পের ভেতরে এই ধরনের আচরণে সহকর্মীদের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছে। অনেকে বলছেন, প্রকল্পের কাজের চেয়ে এখন বেশি সময় ব্যয় হচ্ছে “অপ্রাসঙ্গিক” কর্মকাণ্ডে।
বড় অঙ্কের সরকারি অর্থে পরিচালিত এই প্রকল্পে এমন কর্মকাণ্ডে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন অনেক কর্মকর্তা। তারা মনে করেন, যথাযথ তদন্ত না হলে প্রকল্পের উদ্দেশ্যই ব্যর্থ হবে।






