">
বিশেষ প্রতিনিধি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকার কার্যত দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচন সম্পন্ন করিয়া পুনরায় ক্ষমতাসীন হইবার দক্ষতা দেখাইতে পারিয়াছে। বিশেষ করিয়া বিরোধী বিএনপিসহ সমমনা দলগুলির আন্দোলন যেই প্রকারেই হউক ধনুর্ভঙ্গ পণ করিয়া ঠেকাইয়াও দিয়াছে। কিন্তু যাহাই সরকারের সাফল্য তাহাই দুশ্চিন্তার উৎস। বাংলাদেশের ‘বিশেষ ধরনের গণতন্ত্রে’ বিশেষ কায়দায় নির্বাচনী আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করা এক কথা, কিন্তু সেই নির্বাচনকে বিশ্বের সকলের নিকট গ্রহণযোগ্য করিয়া তোলা আরেক কথা। এই পরিস্থিতি সরকারের সামনে যেই কূটনৈতিক চ্যালেঞ্জ হাজির করিয়াছে, তাহা মুখের কথায় পার হওয়া যাইবে না। দ্বিতীয় সংকটের উৎস হইল অর্থনৈতিক পরিস্থিতি। মূল্যস্ফীতি, রিজার্ভ সংকট, বেকারত্ব এবং জ্বালানি সমস্যা দূর করিতে না পারিলে সংকট পূর্বের চাইতেও ঘনীভূত হইবার আশঙ্কা রহিয়াছে। শনিবারের শীর্ষ প্রতিবেদনে বিশেষজ্ঞ অভিমতে উপরোক্ত যেই বিশ্লেষণ প্রকাশিত হইয়াছে, তাহা আমলে লওয়া সরকারের জন্য বাঞ্ছনীয়।
রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে যত সহজে দমন ও নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব, আন্তর্জাতিক চাপ কি সেই ‘কঠিন কঠোর’ কৌশলে মোকাবিলা করা যাইবে? যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা ও যুক্তরাজ্য সদ্যসমাপ্ত নির্বাচনটিকে মানিয়া লয় নাই। ইউরোপীয় ইউনিয়নের বক্তব্য অতটা কঠোর না হইলেও গণতন্ত্রের সুযোগের ব্যাপারে তাহাদেরও কিছু প্রত্যাশা রহিয়াছে। প্রধান রপ্তানি বাজার যুক্তরাষ্ট্র হওয়ায় বেশি গুরুত্ব দিতে হইবে সেই দিকেই। যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞা পর্যন্ত হজম করা যায়, কিন্তু বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞা আসিলে কী হইবে? যদিও দেশি-বিদেশি ভূরাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের অভিমত হইল, যুক্তরাষ্ট্র বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞার পথে না গেলেও অন্যবিধ উদ্বেগ থাকিয়া যাইবে।
সকল রাষ্ট্রই স্ব স্ব স্বার্থের হিসাবে সম্পর্ক গড়িয়া তোলে। যুক্তরাষ্ট্র তাহার স্বার্থ যেইভাবে দেখে দেখুক, কিন্তু বাংলাদেশকে আপন স্বার্থেই বিবাদ মিটাইয়া ফেলিতে হইবে। মানবাধিকারের প্রতি শ্রদ্ধা, বিরোধী পক্ষের প্রতি সহনশীলতা এবং অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক পরিবেশ খোলামেলা করিবার মাধ্যমে সরকার শুভবোধের বার্তা দিতে পারে। বিশেষ করিয়া পুনরায় গুম ও নির্যাতনের যেই অভিযোগ উঠিতেছে, তাহা সরকারের ভাবমূর্তিকে আরও অপরিচ্ছন্ন করিতেছে। বিরোধীদের উপর মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার এবং আটককৃতদের আইনসংগত উপায়ে মুক্তি দেওয়ার মাধ্যমে সরকার সেই বিড়ম্বনা এড়াইতে পারে। বহুপক্ষীয় বিশ্বে বাংলাদেশ কোনো এক পক্ষের দিকে অতিরিক্ত ঝুঁকিয়া গেলে সংকট বাড়িবে বৈ কমিবে না।কিন্তু মূল মনোযোগ দিতে হইবে অর্থনীতিতে। যেইভাবে ব্যাংক ব্যবস্থাকে শুষিয়া ছোবড়া করা হইয়াছে, যেইভাবে বিরাট অঙ্কের ঋণখেলাপি হইয়া গিয়াছে, তাহার প্রতিকারও দরকার, বিচারও দরকার। তাহা না হইলে লুটেরা দুষ্টচক্র পুনরায় সরকারের ঘাড়ে চাপিয়া অর্থনৈতিক পুনর্গঠনকে ব্যাহত করিবে। বৈদেশিক মুদ্রার মজুত নিয়া আশঙ্কাও কাটে নাই। এই ব্যাপারে সরকারকে একটা যথাযোগ্য কর্মপন্থা বাহির করিতেই হইবে। কূটনীতি ও অর্থনীতির সাফল্যের উপরই নির্ভর করিতেছে সরকারের স্থিতিশীলতা এবং দেশের বিকাশ।
Leave a Reply