">
খেলাধুলা ডেস্ক ওয়েলিংটনের বেসিন রিজার্ভের সবুজ উইকেট আর সিমিং কন্ডিশনেও দ্বিতীয় দিন থেকে যে স্পিন বেশ ভালোই ধরছিল, নিউজিল্যান্ডের প্রথম ইনিংসে সর্বোচ্চ ৪ উইকেট নিয়ে সেটাই বুঝিয়ে দিয়েছিলেন নাথান লায়ন। আজ চতুর্থ দিনেও লায়নই যে স্পিন-রাজ করবেন, কাল তৃতীয় দিনেই নিউজিল্যান্ডের সবচেয়ে দুই অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যান কেইন উইলিয়ামসন ও টম ল্যাথামকে আউট করে সেটার আভাস দিয়ে রেখেছিলেন।শেষ পর্যন্ত হলোও তাই। গতকালের ২ উইকেটের সঙ্গে আজ আরও ৪ উইকেট নিলেন লায়ন। তাঁর ঘূর্ণিতে চতুর্থ দিন এক সেশনও টিকতে পারল না নিউজিল্যান্ড। নিজেদের দ্বিতীয় ইনিংসে ১৯৬ রানে অলআউট হয়ে ম্যাচ হারল ১৭২ রানের বিশাল ব্যবধানে। দারুণ এ জয়ে দুই ম্যাচ টেস্ট সিরিজে ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে গেল অস্ট্রেলিয়া। ক্রাইস্টচার্চে সিরিজের শেষ টেস্ট শুরু হবে আগামী শুক্রবার। কাল গ্লেন ফিলিপসের ক্যারিয়ার-সেরা বোলিংয়ের (৫/৪৫) পরও নিউজিল্যান্ডকে ৩৬৯ রানের বড় লক্ষ্য দিয়েছিল অস্ট্রেলিয়া। বল হাতে অস্ট্রেলিয়ার নায়ক লায়ন নিজেদের দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট হাতেও সবচেয়ে বড় অবদান রেখেছিলেন। করেছিলেন দলীয় সর্বোচ্চ ৪১ রান। ৩৬৯ রানের লক্ষ্যটা ছুঁতে হলে ঘরের মাঠে টেস্টে সর্বোচ্চ রান তাড়ার পাশাপাশি নিজেদের ইতিহাসেও রেকর্ড লক্ষ্য তাড়া করতে হতো নিউজিল্যান্ডকে। নিউজিল্যান্ডে সর্বোচ্চ রান তাড়া করে টেস্ট জয়ের রেকর্ড ওয়েস্ট ইন্ডিজের। ১৯৬৯ সালে অকল্যান্ড টেস্টে গ্যারি সোবার্স-ক্লাইভ লয়েডদের পরাক্রমশালী দলটি ৩৪৫ রানের লক্ষ্য টপকে গিয়েছিল।নিউজিল্যান্ড সর্বোচ্চ ৩২৪ রান তাড়া করে টেস্ট জিতেছিল ১৯৯৪ সালে পাকিস্তানের বিপক্ষে ক্রাইস্টচার্চে। এ ম্যাচের ভেন্যু বেসিন রিজার্ভে সর্বোচ্চ রান তাড়া করে জয়ের রেকর্ডটা নিউজিল্যান্ডেরই। ২০১৭ সালের সেই টেস্টের শেষ দিনে বাংলাদেশের দেওয়া ২১৭ রানের লক্ষ্য ছুঁয়ে ফেলেন কেইন উইলিয়ামসন-রস টেলররা। তবে আজ লক্ষ্যের ধারেকাছেও যেতে পারেনি টিম সাউদির দল।দ্বিতীয় ইনিংসে কাল দ্রুত ৩ উইকেট পড়েছিল নিউজিল্যান্ডের। তবে রাচিন রবীন্দ্র ও ড্যারিল মিচেল চতুর্থ উইকেট জুটিতে ৫২ রান তুলে দিন পার করেন। জিততে হলে হাতে ৭ উইকেট নিয়ে আরও ২৫৮ রান দরকার ছিল কিউইদের। কিন্তু লায়নের ঘূর্ণিতে নিউজিল্যান্ড আজ টিকতে পেরেছে মাত্র ২৩.৪ ওভার।
আগের দিন ৫৬ রানে অপরাজিত ছিলেন রবীন্দ্র। লায়ন এই তরুণ অলরাউন্ডারকে নিয়ে কাল বলেছিলেন, রবীন্দ্রকে ভবিষ্যতের তারকা মনে হচ্ছে তাঁর। সেই রবীন্দ্রকে ফিরিয়েই অস্ট্রেলিয়াকে আজ প্রথম সাফল্য এনে দেন লায়ন। কাট করতে গিয়ে ক্যামেরন গ্রিনের হাতে ধরা পড়েন রবীন্দ্র। ওই ওভারেই বিদায় নেন টম ব্লান্ডেলও। নিজের পরের ওভারে এসে লায়ন তুলে নেন ফিলিপসের উইকেট। রেকর্ড লক্ষ্য তাড়া করতে নামা নিউজিল্যান্ড ফিলিপসের ক্যারিয়ার-সেরা বোলিংয়ের পর ব্যাটিংয়েও বড় কিছুর আশায় ছিল। কিন্তু ব্যক্তিগত ২ রানে লায়নের বলে এলবিডব্লু হয়ে হতাশ করেছেন তিনি। কিউইরা তখনই ম্যাচ থেকে ছিটকে পড়ে। সপ্তম উইকেট জুটিতে মিচেল ও স্কট কুগেলাইন ৩৬ রান যোগ করে আশা দেখাতে শুরু করেন। তবে ২৮ বলে ২৬ রান করা কুগেলাইন গ্রিনের লাফিয়ে ওঠা বলে আউট হতেই কিঞ্চিৎ সেই আশাও উবে যায়। এরপর ম্যাট হেনরি জশ হ্যাজলউডের বলে স্লিপে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন। অধিনায়ক টিম সাউদির উইকেট তুলে নিয়ে এক টেস্টে পঞ্চমবারের মতো ১০ উইকেট পূর্ণ করেন লায়ন।
৯ উইকেট পড়ার পর মিচেলও বলতে গেলে হাল ছেড়ে দেন। ৩৮ রান করা মিচেল হ্যাজলউডের বলে তাঁকেই ক্যাচ দিয়ে আউট হলে নিউজিল্যান্ডের মাটিতে টানা ষষ্ঠ টেস্ট জিতে নেয় অস্ট্রেলিয়া। প্রথম ইনিংসে বীরোচিত সেঞ্চুরির পর দ্বিতীয় ইনিংসে ৩৪ রান ও ১ উইকেট নেওয়া গ্রিন ম্যাচসেরা হয়েছেন।
অস্ট্রেলিয়া : ৩৮৩ ও ৫১.১ ওভারে ১৬৪
(লায়ন ৪১, গ্রিন ৩৪, হেড ২৯, খাজা ২৮; ফিলিপস ৫/৪৫, হেনরি ৩/৩৬, সাউদি ২/৪৬)
নিউজিল্যান্ড : ১৭৯ ও ৬৪.৪ ওভারে ১৯৬
(রবীন্দ্র ৫৯, মিচেল ৩৮, কুগেলাইন ২৬; লায়ন ৬/৬৫, হ্যাজলউড ২/২০)
ফল : অস্ট্রেলিয়া ১৭২ রানে জয়ী।
ম্যান অব দ্য ম্যাচ : ক্যামেরন গ্রিন (অস্ট্রেলিয়া)।
সিরিজ : দুই ম্যাচ সিরিজে অস্ট্রেলিয়া ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে।
Leave a Reply