">
বিশেষ প্রতিনিধি চলতি রমজান মাস উপলক্ষে কৃষি বিপণন অধিদপ্তর ২৯টি পণ্যের যৌক্তিক দাম নির্ধারণ করে দিয়েছে। কিন্তু বেশির ভাগ ক্ষেত্রে বাজারে এর খুব একটা প্রভাব পড়েনি। এবার সারাদেশে চালের যৌক্তিক দাম নির্ধারণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। কৃষি, খাদ্য ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এবং কৃষি বিপণন অধিদপ্তর বৈঠক করে কোন অঞ্চলে কোন চালের যৌক্তিক দাম কত হবে– তা নির্ধারণ করবে। এরপর আগামী পহেলা বৈশাখ অর্থাৎ ১৪ এপ্রিল থেকে চালের যৌক্তিক দাম ঘোষণা করা হতে পারে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। গত রোববার সচিবালয়ে অনুষ্ঠিত দ্রব্যমূল্য ও বাজার পরিস্থিতি পর্যালোচনা-বিষয়ক টাস্কফোর্সের বৈঠকে এ বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।
জানতে চাইলে গতকাল সোমবার বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম টিটু বলেন, চালের দর আসলে বেঁধে দেওয়া হচ্ছে না। বাজারকে জানানোর জন্য যৌক্তিক মূল্য বা ইন্ডিকেটিভ প্রাইস নির্ধারণ করা হবে। উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, একটি পণ্যের আমদানি মূল্য যদি ৬০ টাকা হয় এবং শুল্ক-কর ২০ টাকা হলে, তখন সরকার বলে দিল যে, পণ্যটির যৌক্তিক আমদানি ব্যয় ৮০ টাকা। কিন্তু কত দামে বিক্রি হবে তা ক্রেতা-বিক্রেতা ঠিক করবে। এখন ৮০ টাকার জিনিস ১৮০ টাকায় কিনবে নাকি ৯০ কিংবা ১০০ টাকায় কিনবে, সে ক্ষেত্রে ভোক্তাকেই সচেতন থাকতে হবে। কিন্তু এ দামে বিক্রি করতে বাধ্য করা এবং তা না মানলে জরিমানার ব্যবস্থা থাকাটা হচ্ছে দর বেঁধে দেওয়া। চালের ক্ষেত্রে যৌক্তিক দরটাই বলে দেওয়া হতে পারে।তিনি আরও বলেন, সরকারের কৃষিসংক্রান্ত বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের পর্যবেক্ষণ হচ্ছে, এসব পণ্য হঠাৎ নির্ধরিত দামে বিক্রি করতে বাধ্য করা হলে কালোবাজারি হতে পারে। আবার পণ্যের সরবরাহ অনেকেই কমিয়ে ফেলতে পারে। তাছাড়া বিক্রেতারা সরকারকে দেখাবে এক ধরনের দাম, আবার গোপনে আরেক ধরনের দাম নিতে পারে। তাই আপাতত সরকার বাধ্য করতে চাচ্ছে না। শুধু জনগণকে জানানো হচ্ছে যে, এ পণ্যের উৎপাদন মূল্য এত টাকা, এর যৌক্তিক বাজার মূল্য হওয়া উচিত এত টাকা। চালের যৌক্তিক দরের বিষয়টি মূলত চূড়ান্ত করবে মূলত কৃষি ও খাদ্য মন্ত্রণালয়।বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও কৃষি বিপণন অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, সরু চাল, চিকন চাল ও মোটা চাল– এ পদ্ধতি থেকে বের হয়ে এসে জাতভিত্তিক চালের নাম ও দাম ঠিক করা হবে। এ জন্য ইতোমধ্যে উৎপাদক, মিল-মালিক, পাইকারি এবং খুচরা পর্যায়ে চাল বিক্রির একটা রূপরেখা তৈরি করা হয়েছে। রূপরেখা আরও পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে আগামী পহেলা বৈশাখ অর্থাৎ ১৪ এপ্রিল থেকে চালের যৌক্তিক দাম নির্ধারণ হতে পারে।
গত রোববার টাস্কফোর্সের বৈঠকে চালের নির্ধারিত দরের একটি তালিকা উপস্থাপন করে কৃষি বিপণন অধিদপ্তর। এতে দেখা যায়, সরকার মূলত বোরো ও আমন মৌসুমে উৎপাদিত মোটা ও মাঝারি চালের দাম নির্ধারণ করতে যাচ্ছে। এই দুই মৌসুমেই দেশে সবচেয়ে বেশি চাল পাওয়া যায়। দাম নির্ধারণ হবে জাতভিত্তিক। আমন হাইব্রিড (ধানি গোল্ড ও হীরা) প্রতি কেজি চালের মিল, পাইকারি ও খুচরা পর্যায়ে দাম হতে পারে যথাক্রমে ৪২ টাকা ৩৫ পয়সা, ৪৫ টাকা ৯১ পয়সা এবং ৫১ টাকা ৭১ পয়সা। একইভাবে আমন উফশী (ব্রি ৪৯, ৮৭, ৭৫, ৫১, ৫২ ও ৭১) হতে পারে যথাক্রমে ৪০ টাকা ৯৩ পয়সা, ৪৪ টাকা ৯৩ পয়সা এবং ৫০ টাকা ১৯ পয়সা। আমন স্থানীয় (বালাম, পাইজাম, গাইঞ্জা ও স্বর্ণা) হতে পারে ৩৯ টাকা ৫৩ পয়সা, ৪৩ টাকা ৪ পয়সা এবং ৪৮ টাকা ৬৯ পয়সা। বোরো হাইব্রিড (হীরা, এসএলএইচ ৮ ও ব্রি হাইব্রিড) হতে পারে ৩৯ টাকা ১৯ পয়সা, ৪২ টাকা ৬৮ পয়সা এবং ৪৮ টাকা ১ পয়সা। বোরো উফশী (ব্রি-২৮, ব্রি-২৯ ও ব্রি-৫৮) হতে পারে ৩৯ টাকা ২৬ পয়সা, ৪২ টাকা ৭৬ পয়সা এবং ৪৮ টাকা ৯ পয়সা। বোরো স্থানীয় (কালী বোরো ও জাগলী বোরো) হতে পারে ৪৭ টাকা ৯ পয়সা, ৫০ টাকা ৩৮ পয়সা এবং ৫৫ টাকা ৫৭ পয়সা।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, দাম নিয়ে বৈঠকে আলোচনা হলেও তা চূড়ান্ত হয়নি। শহরে ও গ্রামে দামে কোনো পার্থক্য থাকবে কিনা– এসব বিষয় নিয়ে আগামীকাল বুধবার কৃষি মন্ত্রণালয়ে একটি আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা রয়েছে। সেখানেই বিষয়গুলো চূড়ান্ত হতে পারে।সংশ্লিষ্টরা আরও জানিয়েছেন, বর্তমানে মিল-মালিকরা নিজেদের ব্র্যান্ডের নামে বিভিন্ন জাতের চাল বাজারজাত করেন। অভিযোগ আছে, বিভিন্ন জাতের চাল কিছুটা ছেঁটে মিনিকেট নামে বিক্রি করা হয়। বাজারে জনপ্রিয় সরু এ চালের দামও বেশি। বিভিন্ন কোম্পানি নানা মোড়কে এই চাল বিক্রি করে। তারা দাম বাড়িয়ে দেয়। তাই আগে থেকেই এসব নাম বাদ দিয়ে জাতভিত্তিক নামে চাল বিক্রির উদ্যোগের কথা বলা হচ্ছিল। এটি বাস্তবায়ন হতে যাচ্ছে।
Leave a Reply