">
বিশেষ প্রতিনিধি ঈদের পর হঠাৎ গরম বেড়ে যাওয়ায় ডায়রিয়া ও নিউমোনিয়াসহ শিশুদের ঠান্ডাজনিত রোগে আক্রান্তের হার বেড়েছে। গত কয়েকদিনে রাজধানীর ঢাকা শিশু হাসপাতালের ওয়ার্ডে ধারণক্ষমতার চেয়ে অতিরিক্ত রোগী ভর্তি রয়েছে। তবে ঈদের ছুটিতে হাসপাতালে পর্যাপ্ত সংখ্যক চিকিৎসক না থাকায় সেবা পেতে ভোগান্তি পেতে হচ্ছে রোগী ও তাদের স্বজনদের। অন্যদিকে অতিরিক্ত রোগীর চিকিৎসাসেবা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে বলে জানিয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।রোববার সকালে সরেজমিনে দেখা যায়, সকাল থেকে হাসপাতালের জরুরি বিভাগে লম্বা লাইন, তার ওপর নেই বসার ব্যবস্থা। গরমে অসুস্থ শিশুদের নিয়ে বিপাকে অভিভাবকরা। কারও কারও সেবা নিতে দুই থেকে তিন ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হচ্ছে।
শরীয়তপুর বাসিন্দা আব্দুর কাদের জানান, তার তিন বছর বয়সী শিশু জ্বর ও ঠান্ডায় আক্রান্ত হয়েছে গত দুইদিন আগে। গতকাল জাজিরা সদর হাসপাতাল নিয়ে যান। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানান রোববারের আগে শিশু চিকিৎসক মিলবে না। তাই বাধ্য হয়ে ঢাকায় নিয়ে এসেছেন তার বাবা। এখানেও সেবা পেতে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।চার বছরের পুত্র সন্তানকে নিয়ে রোববার সকাল ১০টার দিকে শিশু হাসপাতালে হাজির হন পুরান ঢাকা বাসিন্দা আতিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, দুই ঘণ্টা ধরে লাইনে দাঁড়িয়ে আছি। এখনও আমার আগে ৪০ থেকে ৫০ জন দাঁড়িয়ে আছে। অসুস্থ সন্তান নিয়ে কি এতো সময় অপেক্ষা করা যায়?
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, জরুরি বিভাগ চলছে মাত্র তিনজন চিকিৎসক দিয়ে। রোগীর যে দীর্ঘ লাইন তাতে দুই থেকে তিন ঘণ্টায় কমে কারও পক্ষে চিকিৎসা নিয়ে ফেরা সম্ভব নয়। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছে, রোগীর চাপ বাড়ায় জরুরি বিভাগে দুইজনের পরিবর্তে তিনজন চিকিৎসক দেওয়া হয়েছে। তবুও হিমশিম খেতে হচ্ছে।পরিচয় প্রকাশ না করার শর্তে হাসপাতালের একজন নার্স বলেন, ঈদের ছুটিতে হাসপাতালে চিকিৎসকের তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। সব সময় সেবা দেওয়ার মতো চিকিৎসক হাসপাতালে নেই। বিশেষ করে রাতের বেলায় হাসপাতালের তিন শতাধিক রোগীর ভরসা জরুরি বিভাগের দুই চিকিৎসক। ফলে সব চাপ এসে নার্সদের ওপর পড়ে। অনেক সময় রোগীর স্বজনেরা বিরক্ত হয়ে নার্সদের বকাঝকা করেন।
বাংলাদেশ শিশু হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক ডা. ফারহানা আহমেদ স্বরণী বলেন, ঈদের ছুটির মধ্যেও স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিতে কাজ করে যাচ্ছি। ধারণক্ষমতার অতিরিক্ত রোগী ভর্তি রয়েছে। এর পরও যদি জরুরি কারও আইসিইউ বা শয্যা প্রয়োজন হয় তাহলেও আমরা ব্যবস্থা করতে পারবো।তিনি আরও বলেন, ডায়রিয়া ও নিউমোনিয়ার রোগীর সংখ্যা বাড়লেও পর্যাপ্ত চিকিৎসক ও নার্স না থাকায় রোগীদের সেবা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। তারপরও সাধ্যমতো চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। এ সময়ে শিশুদের পাতলা কাপড় পরিধানসহ তাদের খাওয়াদাওয়ায় সতর্ক হতে হবে। শিশুদের প্রতি অভিভাবকদের আরও যত্নবান হওয়ার পরামর্শ দেন তিনি।
শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক মোহাম্মদ সহিদুল্লা বলেন, ঋতু পরিবর্তন ও বায়ুদূষণজনিত কারণে নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে শিশুরা। শিশুদের অনেকে আসছে সর্দি, নাক বন্ধ হওয়া ও হাঁচি-কাশি নিয়ে। তাদের এক অংশের তীব্র জ্বর, গলা ব্যথা ও কাশি। অন্যান্য সময়ের চেয়ে এখনও এসব রোগীর সংখ্যা বেড়েছে বলে জানান এই বিশেষজ্ঞ।
Leave a Reply