">
বিশেষ প্রতিবেদক : রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) এর কয়েকটি উন্নয়ন প্রকল্পে শত কোটি টাকার কাজ ভাগাভাগি করার অভিযোগ উঠেছে। দলীয় লেবাশধারী একদল ঠিকাদার প্রভাব খাঁটিয়ে কাজগুলো নিজেদের মধ্যে ভাগ করে নিয়েছেন। এতে করে আওয়ামী লীগ আমলে বেকার থাকা শতাধিক ঠিকাদার তাদের অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। এ বিষয়ে তারা গণমাধ্যমের কাছে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, আমরা বিগত ১৫/১৬ বছর বেকার অবস্থায় রয়েছি। এই সময়ে আওয়ামী লীগের শেখ হেলাল গ্রুপ রাজউককে নিয়ন্ত্রণ করে নিজেদেন মধ্যে সমস্ত উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ ভাগাভাগি করে নেয়। ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে স্বৈরাচার শেখ হাসিনার সরকারের পতন হলে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠিত হওয়ার পর আমরা আশা করেছিলাম যে, এবার হয়তো রাজউক ঠিকাদার সিন্ডিকেট মুক্ত হবে। কিন্তু আমাদের সেই আশা মিথ্যে মরীচিকায় পরিণত হয়েছে। আমরা রাজউকের প্রধান প্রকৌশলী ও প্রকল্পের পিডিদের ভুমিকায় হতাশ হয়েছি। তারাও আগের ধারায় পরিচালিত হচ্ছেন।
সম্প্রতি রাজউকের পূর্বাচল প্রকল্পে যে ৯ গ্রুপ কাজের ঠিকাদার নির্বাচন ও কার্যাদেশ প্রদান করা হয়েছে ওই ৯ গ্রুপ কাজের টেন্ডার প্রক্রিয়ায় কোন স্বচ্চতা ছিল না। প্রধান প্রকৌশলী আব্দুল লতিফ হেলালী ও পিডি নুর ইসলাম ৫% কমিশন নিয়ে আওয়ামী লীগের ৬ জন বিএনপির ২ জন এবং জাতীয় পার্টির ১ জন ঠিকাদারের মধ্যে কাজগুলো বন্টন করে দিয়েছেন। এতে করে সাধারন ঠিকাদাররা তাদের অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়েছে।
তারা আরো জানান, কেবল পূর্বাচল প্রকল্পের ৯ গ্রুপ কাজেই নয়,উত্তরা প্রকল্পের ৮ গ্রুপ কাজ, যার মুল্য: ২৫ কোটি টাকা, সুইমিং পুল (উত্তরা) এর কাজ, যার মুল্য: ১৭ কোটি টাকা, মাদানী এভিনিউর রাস্তার কাজ, যার মুল্য: ১০ কোটি টাকা। সর্বমোট প্রায় ১০০ কোটি টাকার কাজের ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান নির্বাচন ও কার্যাদেশ প্রদানে ব্যাপক অনিয়ম-দুর্নীতির আশ্রয় নেওয়া হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট প্রকল্পের পিডি তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মোজাফ্ফর উদ্দিন ও প্রধান প্রকৌশলী আব্দুল লতিফ হেলালী তাদের পছন্দের ঠিকাদারদের কাছ থেকে অনৈতিক সুবিধা নিয়ে কাজগুলো বন্টন করেছেন বলে তারা দাবী করেন। সাবেক ছাত্রদল নেতা ও ঠিকাদার মো: দুলাল এই সব কাজের বিলি বন্টনে মুখ্য ভুমিকা পালন করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে একাধিক ঠিকাদার নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, বর্তমান সরকার আমলে সিংহভাগ সরকারী-বেসরকারী ও স্বায়ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠানে সংস্কারের ছোঁয়া লাগলেও রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষে তার ছোঁয়া লাগেনি। প্রতিহিংসাবশত কিছু কর্মকর্তা ও কর্মচারি বদলী করা হলেও টেন্ডার সিন্ডিকেট বহাল রয়েছে। তারা এই বৈষাম্যের অবসান চান। তাদের প্রশ্ন: সব কিছু যদি আগের নিয়মেই চলবে তবে কেন র্নিদলীয় নিরপেক্ষ অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন করা হলো?
প্রায় শত কোটি টাকার টেন্ডারে অনিয়ম-দুর্নীতির বিষয়ে জানতে চাইলে প্রধান প্রকৌশলী আব্দুল লতিফ হেলালী জানান, সর্বাধিক স্বচ্চতার সাথে এই টেন্ডার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হয়েছে। যোগ্যতার মাপকাঠিতে যারা টিকেছেন তাদেরকেই নির্বাচন করা হয়েছে। কোন প্রকার স্বজনপ্রীতি বা দুর্নীতির আশ্রয় নেওয়া হয়নি। কাজ পেতে ব্যার্থ ঠিকাদাররা সব সময়ই এ ধরনের গদবাঁধা অভিযোগ করে থাকেন। তবে প্রধান প্রকৌশলীর এই ভাষ্য মানতে নারাজ ক্ষুব্ধ ঠিকাদাররা। তারা এই সব কাজের টেন্ডারগুলো বাতিল করে স্বচ্ছতার সাথে পুন: টেন্ডার আহবানের দাবী তুলেছেন।
Leave a Reply