">
নিজস্ব প্রতিবেদকঃ রাজশাহীতে অবস্থিত কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের (টিটিসি) অধ্যক্ষ প্রকৌশলী এসএম এমদাদুল হকের বিরুদ্ধে একই প্রতিষ্ঠানের নারী চিফ ইনস্ট্রাক্টর (জেনারেল ইলেকট্রনিক্স) সাঈদা মমতাজ নাহরীনা ইকবালকে আপত্তিকর প্রস্তাব দেয়ার অভিযোগ উঠেছে।
অবাক করা ব্যাপার হলো, ভুক্তভোগী নারীকে আপত্তিকর ও অনৈতিক প্রস্তাব দেয়া হয়েছে- এ সংক্রান্ত বিস্তারিত তুলে ধরে জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর মহাপরিচালকের কাছে অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন গত ২৮ সেপ্টেম্বর। আর একই ঘটনায় অভিযুক্ত অধ্যক্ষ প্রকৌশলী এমদাদুল হক ভুক্তভোগী নারীর বিরুদ্ধে তদন্ত কমিটি গঠন করেছেন গত ৯ অক্টোবর। অর্থাৎ যার বিরুদ্ধে অভিযোগ তিনিই তদন্ত কমিটি গঠন করেছেন অভিযোগকারীর বিরুদ্ধে। এ দিকে তিন সপ্তাহ অতিবাহিত হলেও মহাপরিচালক এখন পর্যন্ত এ ব্যাপারে কোনো ধরণের পদক্ষেপ না নেয়ায় প্রশ্ন উঠেছে।
লিখিত অভিযোগে সাঈদা মমতাজ নাহরীনা বলেন, ‘আমি চিফ ইনস্ট্রাক্টর হিসেবে ইলেকট্রনিক্স ট্রেডে নিষ্ঠার সাথে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছি। কিন্তু অধ্যক্ষ প্রকৌশলী এমদাদুল হক এ কেন্দ্রে যোগদান করার পর থেকেই আমাকে বিভিন্ন সময়ে ছুটির পরে তার রুমে দেখা করতে বলেন এবং কুপ্রস্তাব দেন। আমি তার প্রস্তাবে রাজি না হলে আমাকে বিভিন্নভাবে হয়রানি করা হয়। এরই ধারাবাহিকতায় তিনি গত ২৯ আগস্ট কর্তব্যে অবহেলায় কৈফিয়ত তলব করেন। আমি কৈফিয়তের জবাব দিই। তার পরেও অধ্যক্ষ ৩ সেপ্টেম্বর আবারো কৈফিয়ত তলব করেন যা ৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সময় দেয়া হয়। কিন্তু এ দিন আমার ইলেকট্রনিক্স ট্রেডের ক্লাস শেষ করে অন্য একটি ক্লাস নেয়ার জন্য আসি। কিন্তু অধ্যক্ষ সকাল ১১টায় ক্লাস রুমে এসে আমাকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন। এ সময় উপস্থিত সহকর্মী ও প্রশিক্ষণে আসা ছাত্ররা আমাকে উদ্ধার করেন। পরে অধ্যক্ষ আমাকে তার রুমে ডেকে পাঠান এবং মীমাংসা করা হয়। তার পরেও আক্রোশমূলকভাবে আমাকে ৮ সেপ্টেম্বর আবারো কৈফিয়ত তলব করেন এবং স্থানীয় সাংবাদিক ও বাইরের কিছু সন্ত্রাসী দিয়ে আমাকে প্রাণনাশের হুমকি দেন। আমার নামে বদনাম রটান।’
অভিযোগে ওই নারী চিফ ইনস্ট্রাক্টর আরো উল্লেখ করেন, ‘১২ সেপ্টেম্বর রাত সাড়ে ৯টার দিকে আমি আত্নীয়ের বাসা থেকে নিজ বাসায় ফেরার পথে অধ্যক্ষের সন্ত্রাসীরা আমাকে আক্রমণ করেন। এ সময় তারা আমার হাতে থাকা ব্যাগ ছিনিয়ে নেন। ব্যাগের ভেতরে ভোটার আইডি, পেনড্রাইভ, টাকা ও মোবাইল ফোন ছিল। যাওয়ার সময় সন্ত্রাসীরা আমাকে প্রাণনাশের হুমকি দেন। এ ব্যাপারে নগরীর বোয়ালিয়া মডেল থানায় ১৩ সেপ্টেম্বর সাধারণ ডায়েরি করি।’
অভিযোগে তিনি আরো বলেন, ‘অধ্যক্ষ তাকে অন্যত্র বদলি করার হুমকি দিচ্ছেন। এছাড়া কিভাবে রাজশাহীতে চাকরি করেন দেখে নেয়া হবে বলেও হুমকি দেন এবং হয়রানি করছেন।
সূত্র বলছে, অধ্যক্ষ প্রকৌশলী এমদাদুলের বিরুদ্ধে নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে। এ নিয়ে প্রতিষ্ঠানটির বর্তমান ও সাবেক শিক্ষার্থীরা এরই মধ্যে নানা আন্দোলন কর্মসূচি পালন করেছেন। অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে একের পর এক অভিযোগ উঠলেও উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ রহস্যজনক কারণে কোনো ধর পদক্ষেপ নিচ্ছেন না বলে অভিযোগ করেছেন আন্দোলনকারীরা। এ নিয়ে বিভিন্ন জাতীয় ও স্থানীয় সংবাদপত্রে খবরও প্রকাশিত হয়েছে।
এসব অভিযোগের সত্যতা নিশ্চিত করে চিফ ইনস্ট্রাক্টর সাঈদা মমতাজ নাহরীনা ইকবাল বলেন, ‘আমি নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছি। আমি অধ্যক্ষের বিচার চাই।’ এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘এর আগে অধ্যক্ষ আমার পোশাক নিয়েও বাজে মন্তব্য করেন। আমি শালীন পোশাক পরিধান করায় তিনি কটূক্তি করেন।’
এ ব্যাপারে জানতে মোবাইলে রাজশাহী কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের (টিটিসি) অধ্যক্ষ প্রকৌশলী এসএম এমদাদুল হকের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি কল রিসিভ করেননি। ফলে তার বক্তব্য জানা যায়নি।
অভিযোগ সম্পর্কে জানতে মোবাইলে জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর মহাপরিচালক (ডিজি) সালেহ আহমদ মোজাফফরের সাথে একাধিক বার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনিও কল রিসিভ করেননি। ফলে তার বক্তব্য জানা যায়নি।
Leave a Reply