">
শিমুলিয়া ঘাটে যাত্রীদের উপচে পড়া ভিড়
মানিকনগরে বাস কাউন্টারে উপচেপড়া ভিড়
বঙ্গবন্ধু সেতু পশ্চিম সংযোগ মহাসড়কে তীব্র যানজট
নিজস্ব প্রতিবেদক : শুরু হয়েছে ঈদের ছুটি। ঢাকা ছাড়ছেন ঘরমুখো মানুষ। সকাল থেকে কমলাপুরসহ বিমানবন্দর রেল স্টেশনে রয়েছে যাত্রীদের ভিড়। প্রতিটি ট্রেনেই রয়েছে অতিরিক্ত ভিড়। অতিরিক্ত মানুষের চাপে ট্রেনের সিটে বসা নিয়ে অনেকে পড়েছেন ভোগান্তিতে। তবে এখন পর্যন্ত কোনো সূচি বিপর্যয় হয়নি।
রেল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ২টা ঈদ স্পেশালসহ রাত ১১ টা পর্যন্ত সারাদিনে আজ ৩৯টি আন্তঃনগর ট্রেন আজ ঢাকা ছাড়বে। এদিকে সড়ক পথেও বেড়েছে যাত্রীর চাপ।
রাজধানীর প্রতিটি বাস টার্মিনালের সামনে যানজট লেগে আছে। ভিড় বেড়েছে বাস লঞ্চঘাট ও ফেরিঘাটেও।
বৃহস্পতিবার দুপুর থেকেই সব পথে যাত্রীর চাপ বেড়েছে কয়েকগুণ। করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকায় এ বছর বেশি মানুষ ঈদের আনন্দ প্রিয়জনের সঙ্গে ভাগাভাগি করতে গ্রামে যাচ্ছেন।
ঈদে ঘরমুখী মানুষ ও গাড়ির চাপ বাড়ায় মহাসড়কে ভোর থেকেই যানবাহনের ধীরগতি। ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে থেমে থেমে যানজট।
এছাড়া যেখানে সেখানে ঝুঁকিপূর্ণ ইউটার্ন, ওভারটেকিং প্রবণতা থাকায় মহাসড়কে যান চলাচল বিঘিœত হচ্ছে। ফলে মহাসড়কের বিভিন্ন স্থানে থেমে থেমে যানজটের সৃষ্টি হয়। দুপুরের পর যানজটের মাত্রা বেড়ে যাওয়ায় আশঙ্কা করছেন তারা।
এদিকে ঢাকা-টাঙ্গাইল বঙ্গবন্ধৃু সেতু মহাসড়কের পূর্ব পাড় থেকে পৌলি পর্যন্ত ১৫ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে যানবাহনের দীর্ঘ সারি।
মুন্সিগঞ্জের শিমুলিয়া ও মানিকগঞ্জের পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌপথে বাড়ছে যানবাহনের ভিড়। শিমুলিয়া ঘাটে গাড়ির চাপ বাড়ায় প্রায় ৬কিলোমিটার এলাকা জুড়ে দেখা দিয়েছে যানজট।
ফেরির স্বল্পতা ও যানবাহনের চাপ বৃদ্ধির কারণে এ অবস্থা বলছে কর্তৃপক্ষ। এদিকে গরম ও যানজটে ভোগান্তিতে পড়েছে যাত্রীরা। এ অবস্থায় অনেকে গাড়ি থেকে নেমে হেঁটে ফেরিতে উঠছেন।
এদিকে পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া ঘাটে দূরপাল্লার যাত্রীবাহী বাসের চাপ না থাকলেও রয়েছে ছোট ও ব্যক্তিগত গাড়ির ভিড়।
বিআইডব্লিউটিসি জানিয়েছে, এই নৌপথে ছোট-বড় মোট ২১টি ফেরি চলছে। আর পাটুরিয়ায় ৫টি ঘাট সচল রয়েছে। ফলে যাত্রীরা সহজে গন্তব্যে পৌঁছাতে পারবে বলে আশা করেছে কর্তৃপক্ষ।
শিমুলিয়া ঘাটে যাত্রীদের উপচে পড়া ভিড় : ঈদ যাত্রায় মুন্সীগঞ্জের শিমুলিয়া প্রান্তে ঘরমুখো মানুষের ঢল নেমেছে। শুক্রবার ভোর থেকে দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের মানুষেরা গ্রামের বাড়িতে যাওয়ার উদ্দেশ্যে শিমুলিয়া ভিড় জমায়।
পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে ঢাকা থেকে ঘাটের উদ্দেশ্যে ছেড়ে আসা লোকাল বাসের যাত্রীদের নামিয়ে দিচ্ছেন মাওয়া চৌরাস্তায়। ফলে ব্যাগ-ব্যাগেজ নিয়ে দুই আড়াই কিলোমিটার পায়ে হেঁটে চরম দুর্ভোগ নিয়ে ঘাটে আসতে হচ্ছে যাত্রীদের।
সকাল থেকেই পার হবার অপেক্ষায় পার্কিং ইয়ার্ড জুড়ে অবস্থান করেছে পাঁচ শতাধিক ছোট আকারের গাড়ি। এ ছাড়া ফেরিতে চরে পদ্মা পাড়ি দিতে শত শত মোটরসাইকেল নিয়েও এসেছেন ঘরমুখো মানুষেরা।
বৃহস্পতিবার বিকেলে সরকারি ছুটির পর থেকেই ঘাটে মানুষের ঢল নামে। দিনে ১০টি এবং রাতে সাতটি ফেরি চালু রেখেছে কর্তৃপক্ষ।
ঘাটের ট্রাফিক ইন্সপেক্টর আমিনুর ইসলাম বাংলাদেশ জার্নালকে জানান, রাতে যাত্রী আর মোটরসাইকেলের চাপে ফেরিতে প্রাইভেট কার আর মাইক্রোবাস উঠাতে হিমশিম খেতে হয়েছে তাদের। এর পর শুক্রবার সকাল থেকে যাত্রী আর যানবাহনের চাপ বাড়ায় দুর্ভোগ পেরিয়েই ঘরে ফিরতে হচ্ছে যাত্রীদের।
যাত্রীরা বলছেন কযেক ঘণ্টা অপেক্ষা করেও ফেরি পার হবার সুযোগ মিলছেনা তাদের। প্রচন্ড গরমে তারা অতিষ্ট হয়ে পড়েছেন বলে ক্ষোভের সাথে জানান।
মানিকনগরে বাস কাউন্টারে উপচেপড়া ভিড় : পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে ঈদযাত্রার তৃতীয় দিনে মানিক নগর থেকে ফেনীগামী পরিবহনের কাউন্টারগুলোর উপচেপড়া ভিড় দেখা গেছে। তবে পরিবহন সংকটে বিপাকে পড়েছেন এ রুটের যাত্রীরা। বাসের টিকিট না পেয়ে অনেকেই রিকশা বা বিকল্প পরিবহনে যেতে হচ্ছে গন্তব্যে।
শুক্রবার সরেজমিনে মানিকনগর ও এর আশপাশের বাস কাউন্টারগুলোতে মানুষের উপচেপড়া ভিড় দেখা যায়। সেখানে স্টার লাইন ও ড্রিম লাইন পরিবহনের কাউন্টারে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, অনেকে অগ্রিম টিকিট নিতে এসেছেন। তবে, ৩০ এপ্রিল ও ১ মের টিকিট বিক্রি হয়ে গেছে।
শনিবারের অগ্রিম টিকিট নিতে আসা সাইদ বলেন, অনেকক্ষণ ধরে চেষ্টা করছি শনিবারের টিকিটের জন্য। কাউন্টার থেকে জানানো হচ্ছে ওই দিনের সব টিকিট বিক্রি হয়ে গেছে। রোববারের কিছু টিকিট পাওয়া যাচ্ছে।
মানিক নগরে স্টার লাইনের ব্যবস্থাপক নাসির বলেন, শুক্র ও শনিবারের টিকিট বিক্রি শেষ। তবে, আমাদের নির্ধারিত বাস ছাড়াও অতিরিক্ত ১৫ থেকে ২০টা বাস যাত্রীদের জন্য বরাদ্দ করি। আজও অতিরিক্ত ২০টা বাস বিভিন্ন গন্তব্যের উদ্দেশ্যে ছেড়ে গেছে। শনিবারও অতিরিক্ত বাস দেওয়ার পরিকল্পনা আছে।
বঙ্গবন্ধু সেতু পশ্চিম সংযোগ মহাসড়কে তীব্র যানজট : সিরাজগঞ্জের বঙ্গবন্ধু সেতু পশ্চিম সংযোগ মহাসড়কের উত্তরবঙ্গগামী লেনে অন্তত ১৫কিলোমিটার এলাকাজুড়ে যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। ঈদ সামনে রেখে ঢাকা থেকে উত্তরবঙ্গগামী গাড়ির চাপ প্রচ-ভাবে বেড়ে যাওয়ায় এমন তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়েছে।
শুক্রবার সকালে মহাসড়কের বঙ্গবন্ধু সেতু পশ্চিম গোল চত্বর থেকে কড্ডার মোড় ও ঝাঐল ওভার ব্রিজ হয়ে প্রায় নলকা মোড় পর্যন্ত ঢাকা থেকে উত্তরবঙ্গগামী লেনে এ যানজট সৃষ্টি হয়। তবে উত্তরবঙ্গ থেকে ঢাকামুখী লেনে যান চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে বলে জানা গেছে।
সিরাজগঞ্জ ট্রাফিক পরিদর্শক (প্রশাসন) সালেকুজ্জামান খান সালেক জানান, ঈদে যানবাহনের সংখ্যা প্রচুর বেড়ে যাওয়ায় আজ সকাল থেকেই এ মহাসড়কে যানজট দেখা দিয়েছে। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গেই যানজটের তীব্রতা বাড়তে থাকে। একপর্যায়ে সেতুর গোল চত্বর থেকে নলকা সেতুর পূর্ব পর্যন্ত প্রায় ১৫ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে ঢাকা-উত্তরবঙ্গগামী লেনে যানজট সৃষ্টি হয়েছে।
তবে যান চলাচল স্বাভাবিক রাখতে ট্রাফিক বিভাগ সচেষ্ট রয়েছে বলে জানান তিনি। হাটিকুমরুল হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) লুৎফর রহমান জানান, গাড়ির প্রচুর চাপ থাকায় নলকা সেতুর পূর্ব পাশে যানজট রয়েছে।
Leave a Reply