| বঙ্গাব্দ
add1
add7

অবৈধ সম্পদের পাহাড় গড়েছেন মিঠুর ঘনিষ্ঠ দুদকের সাবেক উপ-পরিচালক মো. সামসুল আলম!

রিপোর্টারের নামঃ নিউজ ডেস্ক
  • আপডেট টাইম : 29-09-2025 ইং
  • 101603 বার পঠিত
অবৈধ সম্পদের পাহাড় গড়েছেন মিঠুর ঘনিষ্ঠ দুদকের সাবেক উপ-পরিচালক মো. সামসুল আলম!
ছবির ক্যাপশন: ফাইল ফটো

এসএম বদরুল আলমঃ স্বাস্থ্য খাতের দুর্নীতিকে আড়াল করে বিপুল পরিমাণ অবৈধ সম্পদ গড়ে তোলার অভিযোগে স্বাস্থ্য খাতের মাফিয়া ডন মোতাজ্জেরুল ইসলাম মিঠুর ঘনিষ্ঠজন হিসেবে পরিচিত দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) সাবেক উপ-পরিচালক মো. সামসুল আলমের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে। সংস্থাটির অভ্যন্তরীণ সূত্র জানায়, দীর্ঘ দুই দশকের দায়িত্ব পালনের সময় তিনি নিজের নাম ছাড়াও স্ত্রী, সন্তান এবং নিকটাত্মীয়দের নামে রাজধানীজুড়ে বহুতল ভবন, ফ্ল্যাট, দোকানপাট, বিলাসবহুল গাড়ি ও কোম্পানিতে বিপুল সম্পদ গড়ে তুলেছেন।  

নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, মিঠুর সঙ্গে ওঠা-বসা এবং মিঠুর নির্দেশে দুদকের তৎকালীন চেয়ারম্যান ইকবাল হোসেন পাটোয়ারি ওরফে ‘ইকবাল মাহমুদ’ অনুগত পরিচালক (বিশেষ) কাজী শফিকুল আলম এবং দুদক গঠিত বিশেষ স্বাস্থ্যবিষয়ক অনুসন্ধান টিমের প্রধান সামসুল আলম (ডিডি) সব সিদ্ধান্ত নিতেন। উদ্দেশ্য ছিল, মিঠুর সমস্ত দুর্নীতি ধামাচাপা দেয়া। তাদের সিদ্ধান্তে কমিটিতে অন্য সদস্য মামুনুর রশীদ চৌধুরী (এডি), মো. সাইদুর রহমান (ডিএডি), মো. ফেরদৌস হুমাম (ডিএডি), মো. জালাল উদ্দীন (ডিএডি) ও শাহজান মেরাজরা (ডিএডি) দুর্নীতি ও অনিয়ম তদন্তের পরিবর্তে আলোচিত মোতাজ্জেরুল ইসলাম মিঠুকে রক্ষা করতেন। সেই সঙ্গে তার প্রতিদ্বন্দ্বী ঠিকাদার গ্রুপকে হয়রানি করতেন। কখনো নিজেরাই ভুয়া অভিযোগ দাখিল করে ব্ল্যাক মেইলের মাধ্যমে অর্থ আদায় করতেন। আবার কখনোও নিরপরাধীদের সাজাতেন ‘দুর্নীতিবাজ’। বিনিময়ে তারা মিঠুর কাছ থেকে নিয়েছেন কোটি কোটি টাকা। নগদ অর্থ ছাড়াও নানা উপঢৌকন গ্রহণ করতেন। বি: অনু: ও তদন্ত১/০৮-২০১৪, বি: অনু: ও তদন্ত-১/১২৫-১৫, দুদক/অনু: ১৪৭/ঢাকা/২০১৪, দুদক/বি: অনুঃ ও তদন্ত-১/৮৮-২০১৫ নথি নং-দুদক/বি: অনু: ও তদন্ত-১/১৪৫-২০১২ সহ আরো অনেক ফাইল পুরাতন ফাইলের স্মারকে নতুন ফাইল সৃষ্টি করে মিঠু এবং তার স্ত্রীর শত শত কোটি টাকার দুর্নীতির অভিযোগ থেকে দায়মুক্তি দিতেন।

অন্যদিকে, দিনাজপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যন্ত্রপাতি সরবরাহের নামে ৯৮১ স্মারকে ১০ কোটি ও ১৭২১ স্মারকে তিন কোটি টাকা উত্তোলনসহ বিভিন্ন মেডিকেলের নামে এভাবে ভুয়া ভাউচারে শত শত কোটি টাকা তুলে নেন মিঠু। এতে সহযোগিতা করেন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, স্বাস্থ্য অধিদফতর ও এজির অসাধু বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা।

দুদক সূত্রটি জানায়, অবসরে চলে যাওয়া উপ-পরিচালক সামসুল আলম নিজ নামসহ স্ত্রী, কন্যা ও নিকটাত্মীয়দের নামে রাজধানীজুড়ে বহুতল ভবন, ফ্ল্যাট, দোকানপাট, বিলাসবহুল গাড়ি ও কোম্পানিতে বিপুল বিনিয়োগ করেছেন। এরমধ্যে রয়েছে উত্তরা ৯ নম্বর সেক্টরে তার শশুরের নামে একটি ফ্ল্যাট, যার বাজারমূল্য প্রায় আড়াই কোটি টাকা। একই এলাকায় শ্যালকের নামে আরেকটি ফ্ল্যাট, যার বাজারমূল্য প্রায় তিন কোটি টাকা। উত্তরা মাসকট প্লাজা নর্থ টাওয়ারে স্ত্রীর নামে দোকান রয়েছে তার। যার আনুমানিক মূল্য ৮০ লাখ টাকা। আশীর্বাদ নীড়, ফায়দাবাদে রয়েছে আনুমানিক আড়াই কোটি টাকা মূল্যের জমিসহ বাড়ি। এছাড়া কাট্টলী টেক্সটাইল লিমিটেডে রয়েছে ২৭ লাখ ৭ হাজার ৩৬০ টাকার শেয়ার।

সামসুল আলমের স্ত্রী ফরিদা ইয়াসমিনের নামে দক্ষিণ খান ইউনিয়নে তিন কাঠার উপর নির্মিত তিন তলা ভবনের ৫০% মালিকানার আনুমানিক মূল্য এক কোটি ২৫ লাখ টাকা। উত্তরার ফায়দাবাদে ১৮১ দশমিক ২ শতাংশ জমি, যার আনুমানিক মূল্য ৫৪ কোটি ৩৬ লাখ টাকা। একই এলাকায় সাড়ে পাঁচ শতাংশ জমি, বাজারমূল্য দুই কোটি ২০ লাখ টাকা। ফায়দাবাদ দারুল উলুম মাদ্রাসা রোডে ২টি টিনশেড স্থাপনা রয়েছে। উত্তর খান ইউনিয়নে স্থাপনা (হেবা সূত্রে), যেখান থেকে বছরে চার লাখ ৮০ হাজার টাকা ভাড়া পান। ওয়ান ব্যাংক ও এক্সিম ব্যাংকে ডিপিএস, এফডিআর ও সঞ্চয়ী হিসাব মিলিয়ে ৮৫ লাখ ৯০ হাজার টাকা রয়েছে। সূত্রটি জানায়, সামসুল আলমের স্ত্রী ও কন্যারা নিয়মিত বিদেশে ভ্রমণ করতেন। তাদের বিলাসবহুল এসব বিদেশ ভ্রমণের খরচ বহন করতেন স্বাস্থ্যের মাফিয়া মিঠু। অভিযোগ রয়েছে, এই ভ্রমণের মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ অর্থপাচার করা হয়েছে।

সামসুল আলমের কন্যা সুজানা সামরীন ১৮ বার সিঙ্গাপুর, ছয় বার থাইল্যান্ডসহ একাধিকবার দুবাই, সৌদি আরব, ভারত, সিউল, মালয়েশিয়া, অস্ট্রেলিয়া ও আমিরাতে যান। আরেক কন্যা মার্শিয়া শারহিন রিনথি ২২ বার সিঙ্গাপুর, নয় বার থাইল্যান্ড, তিন বার সুইডেনসহ একাধিকবার দুবাই, ভারত, সিউল, অস্ট্রেলিয়া ও আমিরাতে যান। সামসুল আলমের বড় মেয়ে সুজানা সামরীনের বিয়ের অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয় বসুন্ধরা কনভেনশন সেন্টারে। ওই বিয়ের সমুদয় মার্কেট করা হয় দুবাই থেকে। কন্যা সামরীনকে মোড়ানো হয় কমপক্ষে দেড়শ’ ভরি সোনায়। আপ্যায়ন করা হয় তিন হাজার অতিথি। তবে দাওয়াত পেয়েও রাজসিক ওই বিয়ের অনুষ্ঠানে যাননি দুদকের অনেক সিনিয়র কর্মকর্তা।

সূত্র মতে, দুদকে ইন্সপেক্টর পদে চাকরি শুরু করা সামসুল আলম দীর্ঘ ২০ বছর ধরে প্রধান কার্যালয়ে দায়িত্ব পালন করছেন। দায়িত্ব পালনের সময় তিনি ঘুষ ও দুর্নীতির মাধ্যমে বিপুল সম্পদের মালিক হয়েছেন। অভিযোগ রয়েছে, সামসুল আলম দুর্নীতির মাধ্যমে কমপক্ষে ৩শ’ কোটি টাকার স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ অর্জন করেছেন। বিদেশে তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়তে এবং অর্থপাচারে সহযোগিতা করেছেন স্বাস্থ্য খাতের ডন মোতাজ্জেরুল ইসলাম মিঠু।

বনানীর আর্কেডিয়া নূর ক্যাসল নামে মিঠুর সিন্ডিকেটের কুখ্যাত আস্তানায়ও নিয়মিত যাতায়াত ছিল তার। সেখানে নারী ও মদের আসরে অংশ নিতেন তিনি। দুদকের তৎকালীন চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদের নির্দেশে তিনি মিঠুর মামলা-সংক্রান্ত নথি সামলাতেন। সেইসঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বীদের বিরুদ্ধে নিজেরাই অভিযোগ দায়ের করে ভুয়া অনুসন্ধান নথি তৈরি করতেন। ব্যবসায়িক প্রতিদ্বন্দ্বীকে শায়েস্তা ও মিঠুকে দুর্নীতি থেকে দায়মুক্তি দিতে মিঠু স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে উপ-সচিব পদে কর্মরত কাজী শফিকুল আলমকে দুদকে পোস্টিং করান। কাজী শফিকের সহোদর মিঠুর ব্যবসায়িক পার্টনার।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, তৎকালীন দুদক চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ, পরিচালক কাজী শফিকুল আলম, উপ-পরিচালক মো. সামসুল আলম, ডিএডি শাহজাহান মিরাজ, ডিএডি মো. সাইদুর রহমান, ডিএডি মো. ফেরদৌস হুমাম, মো. জালাল উদ্দীনসহ সংশ্লিষ্ট প্রায় এক ডজন কর্মকর্তাকে দ্রুত আইনের আওতায় এনে স্বাস্থ্যখাতের দুর্নীতিবাজদের দায়মুক্তি প্রদানের অপরাধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদান করতে হবে। তাদের অবৈধ সম্পদ বাজেয়াপ্ত করতে হবে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দুদকের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা প্রতিবেদকে বলেন, রিমান্ডে মিঠুর কাছ থেকে ইতোমধ্যে অনেক চাঞ্চল্যকর তথ্য বেরিয়ে এসেছে। তাই এর সঙ্গে জড়িতদের আইন অনুযায়ী শাস্তি নিশ্চিত করা হবে। 

দুর্নীতি দমন সংস্থার অভ্যন্তরীণ কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ইতোমধ্যে বেশ কিছু পুরোনো মামলা ও অনুসন্ধান ফাইলে অসংখ্য অনিয়মের প্রমাণ পাওয়া গেছে। অবৈধ সম্পদ জব্দ ও দায়ীদের আইনের আওতায় আনার বিষয়ে আলোচনা চলছে। তবে চূড়ান্ত ব্যবস্থা নেওয়ার আগে বিস্তারিত তদন্ত অপরিহার্য। 

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর..
add5
add10
ফেসবুকে আমরা...
নামাজের সময়সূচী
জাতীয় সঙ্গীত
©সকল কিছুর স্বত্বাধিকারঃ দৈনিক সবুজ বিপ্লব | আমাদের সাইটের কোন বিষয়বস্তু অনুমতি ছাড়া কপি করা দণ্ডনীয় অপরাধ
সকল কারিগরী সহযোগিতায় মােজোহোস্ট