নিজস্ব প্রতিবেদকঃ বাংলাদেশ দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) সদ্য গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর-কে একটি চিঠি প্রেরণ করেছে, যাতে বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক — বর্তমান ও সাবেক মিলিয়ে ১৭ জন কর্মকর্তা ও ভারতীয় দুই নাগরিকসহ মোট ১৯ জনের ব্যাপারে বিস্তৃত তথ্য দাখিল করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। চিঠিতে সেগুলোর মধ্যে ওই ব্যক্তিদের পাসপোর্ট বা জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর, কার্যপরিধি, পদবী ও দায়িত্বসমূহ ইত্যাদি বিশদ তথ্য চাওয়া হয়েছে।
এই তালিকায় জায়গা পাওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশের সাবেক তিনজন গভর্নর — ড. আতিউর রহমান, ফজলে কবির এবং আব্দুর রউফ তালুকদার। রিজার্ভ চুরির ঘটনার সময় অতিউর রহমানই দায়িত্বে ছিলেন, এবং ২০১৬ সালে ওই ঘটনায় তিনি গভর্নরের পদ থেকে পদত্যাগ করেছিলেন। এছাড়া তালিকাভুক্ত আছে সাবেক উপদেপুটি গভর্নর এস কে সুর চৌধুরী, আবু হেনা মোহা. রাজী হাসান, এসএম মনিরুজ্জামান, কাজী ছাইদুর রহমান, আবু ফরাহ মো. নাছের, আহমেদ জামাল এবং ডেপুটি গভর্নর মর্যাদার বিএফআইইউ-এর সাবেক প্রধান মো. মাসুদ বিশ্বাস।
বর্তমান কর্মকর্তাদের মধ্যেও কয়েকজনকে চিঠিতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। রাজশাহী অফিসের নির্বাহী পরিচালক মো. মেজবাউল হক ও আইসিটি বিভাগের দেবদুলাল রায় বিষয়েও তথ্য চাওয়া হয়েছে। উল্লেখ্য, মেজবাউল হক ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫ তারিখে একমাসের নোটিশ দিয়ে পদত্যাগ করেছেন। তালিকাভুক্ত আরও কর্মকর্তারা হলেন কমন সার্ভিস বিভাগ-২-এর পরিচালক মো. তফাজ্জল হোসেন, বৈদেশিক মুদ্রানীতি বিভাগের অতিরিক্ত পরিচালক ও অফিসার্স কাউন্সিল সভাপতি মাসুম বিল্লাহ, এবং আইসিটি বিভাগের অতিরিক্ত পরিচালক মসিউজ্জামান খান ও রাহাত উদ্দিন। মসিউজ্জামান খানের নাম চিঠিতে দুইবার, উপপরিচালক ও অতিরিক্ত পরিচালক হিসেবে উল্লেখ আছে। সংশ্লেষে, তারা একই ব্যক্তি বলে জানা গেছে।
দুদক চিঠিতে ভারতীয় নাগরিক নীলা ভান্নান ও রাকেশ আস্তানা-এর বিষয়েও তথ্য চাওয়া হয়েছে। নীলা ভান্নান রিজার্ভ চুরির আগেই বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে তিনটি ব্যাংকের লেনদেন নিষ্পত্তির জন্য ‘সুইফট’ সংযোগ চালু করার কাজে নিয়োজিত ছিলেন। অপরদিকে, রিজার্ভ চুরির পর কীভাবে ‘ফায়ারওয়াল’ ভেদ করে হ্যাকিং হয়েছে, সে বিষয়ে বিশেষজ্ঞ হিসেবে রাকেশ আস্তানাকেও দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল।
এই অনুরোধের প্রেক্ষাপটে, ২০১৬ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অব নিউইয়র্কে বাংলাদেশের অ্যাকাউন্ট থেকে ১০ কোটি ১০ লাখ ডলার হ্যাক করা হয়। এর মধ্যে শ্রীলঙ্কায় পাঠানো দুই কোটি ডলার দ্রুত ফেরত আনা সম্ভব হয়। ফিলিপাইনে গিয়েছিল আট কোটি ১০ লাখ ডলার; দেশটির আদালতের নির্দেশে প্রায় ১.৫ কোটি ডলার ফেরত দেয়া হয়েছে। বাকি ৬ কোটি ৬০ লাখ ডলার উদ্ধারে ফিলিপাইনের বিভিন্ন সরকারি সংস্থা বাংলাদেশের পক্ষে ১২টি মামলা করেছে, যেগুলো এখনও কার্যকর রয়েছে।
বাংলাদেশে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ রক্ষণাবেক্ষণ ও রিলিজ সঙ্গে মূলভাবে যুক্ত রয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংকের চারটি বিভাগ — ফরেক্স রিজার্ভ অ্যান্ড ট্রেজারি ম্যানেজমেন্ট, আইটি বিভাগ, পেমেন্ট সিস্টেম বিভাগ এবং অ্যাকাউন্টস অ্যান্ড বাজেটিং বিভাগ। এই বিভাগের কর্মীদের দায়-দায়িত্ব ও সিদ্ধান্তপ্রক্রিয়া সন্দিগ্ধ হওয়ার কারণে দুদক তাদের ওপর নজর দিচ্ছে।
এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে আগেই ফৌরুনসিক তদন্তে কিছু উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের অবহেলা ও দায়িত্বহীনতার দোষ খুঁজে পাওয়া গেছে। সিআইডি সূত্র জানায়, তদন্তের অস্থায়ী ও সমাপ্ত রূপগুলোতে প্রায় ১২ জন কর্মকর্তা চিহ্নিত হয়েছেন — তাদের মধ্যে মেজবাউল হকও রয়েছেন। কাজ চলছে, এবং রিপোর্ট আদালতে উপস্থাপন করা হবে।
২০২৫ সালের ২১ সেপ্টেম্বর ঢাকার একটি আদালত আরসিবিসি (RCBC) ব্যাংক থেকে $৮১ মিলিয়ন রূপে অ্যাকাউন্ট বাজেয়াপ্ত করার নির্দেশ দিয়েছে, যা রিজার্ভ চুরির সঙ্গে সরাসরি জড়িত বলে আদালতের দাবি।
সর্বোপরি, দুর্নীতি দমন কমিশন এই চিঠিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তাদের ওপর ব্যাপক তথ্য ও জবাবদিহিতা চাচ্ছে — সেই সঙ্গে হয়তো ভবিষ্যতের দায়-প্রতিশ্রুতির পথও তৈরি হচ্ছে।
ফজর | ৫.৩০ মিনিট ভোর |
---|---|
যোহর | ১.৩০ মিনিট দুপুর |
আছর | ৪ টা বিকাল |
মাগরিব | ৬ টা সন্ধ্যা |
এশা | ৭.৩০ মিনিট রাত |
জুম্মা | ১.৪০ মিনিট দুপুর |