বিশেষ প্রতিনিধি জলবায়ু সংকটের প্রভাব, যুদ্ধ এবং মহামারির কারণে ব্যাপক খাদ্য সংকট দেখা দেওয়ায় বারবার দেওয়া হচ্ছে সতর্কবার্তা। তবু ভাগাড়ে বাড়ছে খাদ্য বর্জ্যের স্তূপ। বিশ্বে প্রতিবছর যত খাদ্য উৎপাদন হয়, এর ৩০ থেকে ৫০ শতাংশ অপচয় হচ্ছে। নষ্ট হওয়া এই খাদ্যের পরিমাণ প্রায় ২০০ কোটি টন। উন্নত দেশের মতো উন্নয়নশীল এবং দরিদ্র দেশগুলোও খাদ্য অপচয়ে পিছিয়ে নেই; সেখানে অপচয়ের মূল কারণ মাঠ থেকে খাদ্যশস্য তোলা, প্রক্রিয়াকরণ এবং মজুতের প্রাচীন পদ্ধতি। উন্নয়নশীল দেশগুলোতে মাঠ থেকে ফসল তোলা, প্রক্রিয়াকরণ ও মজুত, এরপর সেগুলো বাজারে পরিবহন– প্রতিটি পর্যায়েই অপচয় হচ্ছে।
জাতিসংঘের হিসাব অনুযায়ী, ২০৭৫ সাল নাগাদ বিশ্বের জনসংখ্যা দাঁড়াবে ৯৫০ কোটি। এই বিপুল জনসংখ্যার চাহিদা মেটানোর জন্য ভবিষ্যতে আরও খাদ্যের দরকার হবে। এ অবস্থায় খাদ্যের এই বিপুল অপচয় নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন গবেষকরা। বুধবার শ্রীলঙ্কার রাজধানী কলম্বোতে জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) ৩৭তম এশিয়া ও প্যাসিফিক আঞ্চলিক সম্মেলনে খাদ্য ও পানি সংরক্ষণ এবং খাদ্য অপচয় রোধ শীর্ষক সেশনে এসব তথ্য ওঠে আসে।সেমিনারে বাংলাদেশের কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আব্দুস শহীদ বলেন, বাংলাদেশে ফসল সংগ্রহের পর বিভিন্ন পর্যায়ে প্রায় ৩০ শতাংশ ফসল ও খাদ্য নষ্ট এবং অপচয় হয়। খাদ্য নিরাপত্তার ক্ষেত্রে এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। অপচয়ের পরিমাণ কমাতে পারলে খাদ্য নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও শক্তিশালী হবে।
মন্ত্রী বলেন, কৃষিতে সরকারের অগ্রাধিকার হলো ফসলের সংগ্রহ-উত্তর নষ্ট ও অপচয়ের বিশাল পরিমাণ কমিয়ে আনা। সেই লক্ষ্যে সরকার ৫০-৭০ শতাংশ ভর্তুকিতে কৃষকদের কৃষিযন্ত্র দিয়ে যাচ্ছে এবং বহুমুখী হিমাগার নির্মাণ, বহু ফসলের সমন্বিত সংরক্ষণাগার নির্মাণ ও শাকসবজি পরিবহনে রেফ্রিজারেটেড ভেহিকল দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে। কৃষি প্রক্রিয়াজাতকরণে গুরুত্ব আরোপ করা হচ্ছে।
খাদ্য নষ্ট ও অপচয়ের পরিমাণ কমাতে ফসল তোলা, মাড়াই, পরিবহন ও সংরক্ষণে বিশাল বিনিয়োগ প্রয়োজন বলে জানান মন্ত্রী। তিনি বলেন, সরকার গুরুত্ব দিয়ে কাজ করছে। তার পরও এসব খাতে বেসরকারি ও বিদেশি বিনিয়োগ প্রয়োজন। আমরা এখন সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্বে (পিপিপি) অগ্রাধিকার দিচ্ছি।অনুষ্ঠানে কৃষি মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব মো. মাহমুদুর রহমান এবং এফএওর বাংলাদেশ প্রতিনিধি জিয়াওকুন শি উপস্থিত ছিলেন। এর আগে সকালে মন্ত্রী আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে কলম্বোর ইন্ডিপেনডেন্স স্কয়ারে বাংলাদেশ হাইকমিশন, শ্রীলঙ্কা এবং শ্রীলঙ্কার শিক্ষা মন্ত্রণালয় আয়োজিত অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন।