বিশেষ প্রতিনিধি শিশুদের রোগ প্রতিরোধক্ষমতা কম থাকে বলে তারা সহজেই মৌসুমি নানা রোগে আক্রান্ত হয়। গরমের এ সময়ে শিশুদের মধ্যে সচরাচর পানিস্বল্পতা, জ্বর, সর্দি-কাশি-নিউমোনিয়া, ঘামাচি, ডায়াপার র্যাশ দেখা দেয় বেশি।
পানিশূন্যতা
এ সময় শিশু ডিহাইড্রেশনে পড়তে পারে। মৃদু বা মাঝারি পানিশূন্যতায় জিভ শুষ্ক হয়, কাঁদলে চোখ দিয়ে সামান্য পানি পড়ে। হৃৎস্পন্দন বাড়ে। ছয় থেকে আট ঘণ্টায় একবারও প্রস্রাব হয় না; এসব উপসর্গ দেখা দেয়।মারাত্মক পানিস্বল্পতা হলে মুখগহ্বর শুকিয়ে যায়। পেটের চামড়া, বাহু, পায়ের চামড়া শুকনো ও ঢিলা হয়ে যায়। শরীর নিস্তেজ ও ঘুম ঘুম ভাব থাকে, চোখ গর্তে ঢুকে যায়। একদম সদ্যোজাত শিশুর মাথার চাঁদি দেবে যায়।
যা করতে হবে তা হলো—অল্প পানিশূন্যতা দেখা দিলে বারবার অল্প করে তরল খাবার বা পানীয় খাওয়াতে হবে।১৫ থেকে ২০ মিনিট পরপর বয়স অনুযায়ী এক-দুই চামচ করে স্যালাইন খাওয়াতে হবে।
জ্বর
গরমের সময় শিশুদের জ্বরের হার বাড়ে। তবে শিশু যদি খেলাধুলা করে, ভালোভাবে খেতে পারে, দুধপান করতে পারে, ত্বকের রং স্বাভাবিক থাকে, হাসিখুশি ভাব থাকে এবং জ্বর কেটে গেলে স্বাভাবিক দেখায়—তবে বুঝতে হবে এ জ্বর মারাত্মক নয়।জ্বরের শুরুতেই প্যারাসিটামল খাওয়ানোর প্রয়োজন নেই। দুই মাস নিচের বয়সী শিশুদের জ্বরের সিরাপ না দিয়ে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন আগে। দুই বছরের বেশি হলে জ্বরের সাসপেনশন (এসিটামিনোফোন) খাওয়ানো যেতে পারে। তিন মাস থেকে তিন বছর বয়সে যদি জ্বর ১০২ ডিগ্রি ফারেনহাইটের বেশি থাকে এবং শিশু কষ্ট পাচ্ছে মনে হয়, তবে প্যারাসিটামল শুরু করা উচিত।
জ্বর কমাতে গরম পানিতে নরম কাপড় ভিজিয়ে শিশুর পুরো শরীর স্পঞ্জ করে দিন। আইসপ্যাক, ঠান্ডা পানি ব্যবহার করা উচিত নয়। এতে জ্বর বেড়ে যায়।পাতলা ও ঢিলা পোশাক পরান। ঘরের তাপমাত্রা যেন বেশি গরম বা শীতল না হয়।জ্বরের সঙ্গে বমি, পাতলা পায়খানা থাকলে স্যালাইন খাওয়াতে হবে। আপেল জুস বা ফলের রস দেওয়া যাবে না।
সর্দি-কাশি-নিউমোনিয়া
সর্দি হলে নাক বন্ধ হয়ে যায়। নরসল জাতীয় ড্রপ ঘুমানো ও খাওয়ানোর আগে নাকে ব্যবহার করা ভালো। হালকা গরম পানিতে এক চিমটি লবণ মিশিয়ে পরিষ্কার নরম কাপড়ে ভিজিয়ে নাকে দেওয়া যায়।মৌসুমি ফল তরমুজ, ডাব, আনারস, পেয়ারা, কাঁঠাল, আম ইত্যাদি খেতে দিন।
কাশি হলে নিজে কাশির সিরাপ খাওয়াবেন না। ডাক্তারের পরামর্শ নিন আগে। তা না হলে জটিলতা তৈরি হতে পারে।কাশি হলে লেবুর রস মেশানো গরম পানি, তুলসী পাতার রস ও একটু বড় শিশুদের লিকার চা দেওয়া ভালো।
ডায়াপার র্যাশ
আগের তুলনায় শিশুদের ডায়াপার র্যাশের সমস্যা বেশি দেখা যাচ্ছে। গরমকালে এটা বাড়ে। শিশুর ভিজে যাওয়া ডায়াপারে থাকা ব্যাকটেরিয়ার সঙ্গে প্রস্রাবের নির্গত অ্যামোনিয়ার সংস্পর্শে লাল রঙের জ্বালাদায়ক গোটা দেখা দেয়।শিশুর ন্যাপকিন যত্নসহকারে ধুতে হবে। কাঁথা, কাপড় এগুলো গরম পানিতে ফুটিয়ে রোদে শুকাতে হবে।র্যাশ আক্রান্ত অংশটি গোসলের সাবান ও পরিষ্কার ফোটানো পানি দিয়ে ধুয়ে দিতে হবে। কখনো মলমের প্রয়োজন হতে পারে।ব্যাকটেরিয়া বা ছত্রাকজাতীয় জীবাণুর সংক্রমণ ঘটলে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন।
র্যাশ প্রতিরোধের সবচেয়ে ভালো উপায় হচ্ছে, বেশি সময় শিশুকে প্রস্রাবের মধ্যে ফেলে না রাখা। প্লাস্টিকের ন্যাপকিন ব্যবহার না করে শোষক কাপড়ের ন্যাপকিন ব্যবহার করা উচিত। ইদানীং ডিসপোজেবল ডায়াপার ব্যবহার বেশি হচ্ছে, যা ঝুঁকি কমিয়ে আনে।
ঘামাচি
বেশি ঘেমে সংশ্লিষ্ট গ্ল্যান্ডগুলোর নালিমুখ বন্ধ হওয়ার ফলে ঘামাচির সৃষ্টি হয়। সাধারণ ঘামাচি দেহের বড় অংশজুড়ে থাকে। কখনো বা ঘামাচি লাল লাল গোটার মতো ঘাড়ে, গলায়, পিঠে, বুকে ওঠে। কখনো ছত্রাকজাতীয় জীবাণুর সংক্রমণ বা চামড়ার অন্যান্য কিছু অসুখ বলে মনে হতে পারে।ঘামাচি প্রতিরোধে শিশুকে যতটা সম্ভব ঠান্ডার মধ্যে রাখা উচিত।নাইলনের পোশাক পরানো বা রাবার ও প্লাস্টিকের সিটের ওপর শোয়ানো যাবে না।বারবার শিশুর গা ঠান্ডা পানিতে মুছিয়ে দিলেও ঘামাচি থেকে বাঁচা যায়।