সবুজ বিপ্লব ডেস্কঃ নকল ও ভেজাল ওষুধ উৎপাদন ও বিক্রির বিরুদ্ধে গত এক বছরে প্রায় ২ হাজার ১৪৫টি মামলা দায়ের করেছে ভ্রাম্যমাণ আদালত। ওই সময় ১২ কোটি ৪১ লাখ ৬ হাজার টাকা জরিমানাও আদায় করা হয়। আর ৩৯ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদন্ড দেয়া হয়। সিলগালা করা হয় ৪৪টি প্রতিষ্ঠান। জব্দ করা হয় প্রায় ৩২ কোটি টাকা মূল্যের নকল ওষুধ এবং উচ্চ আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী প্রায় ৪৭ কোটি টাকা মূল্যের মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ ধ্বংস করা হয়। সরকারের এতসব নানা উদ্যোগ সত্ত্বেয় ওষুধ নকল ও ভেজালকারীদের দৌরাত্ম বন্ধ হচ্ছে না। বরং ওসব অসাধু চক্র নতুন কৌশল অবলম্বন করে নকল ওষুধ বাজারে ছাড়ছে। দেশে লাইসেন্স প্রাপ্ত ইউনানি ওষুধ কোম্পানি ২৬৬টি এবং আয়ুর্বেদ ওষুধ কোম্পানি ২০৫টি। এর মধ্যে ঐতিহ্যবাহী কিছু কোম্পানি ফর্মুলারি অনুযায়ী ওষুধ তৈরি করলেও বেশিরভাগ কোম্পানিই ফর্মুলারির বাইরে গিয়ে অতি মুনাফার লোভে নানা ধরনের তিকর কেমিক্যাল ব্যবহার করছে। ফলে হুমকির মুখে পড়েছে জনস্বাস্থ্য।
পেশাদার ডিগ্রিধারী হাকিম কবিরাজদের স্থান দখল করেছে কেমিস্টরা। ফরিদ, মুয়াজ্জেলিনসহ কয়েকজন কেমিস্টের সন্ধান পাওয়া গেছে, যারা হার্বসের পরিবর্তে সংশ্লিষ্ট কেমিক্যাল ব্যবহারের নিয়ম বাতলিয়ে থাকে। তবে এখন অনেক হাকিম কবিরাজও কেমিক্যাল বিদ্যা রপ্ত করে অসৎ কাজে লিপ্ত হয়েছে। কিন্তু ওসব পদক্ষেপের মধ্যেও নকল ও ভেজাল ওষুধের কারবার থেমে নেই। নতুন কৌশল অবলম্বন করে নকল ওষুধ বাজারে ছাড়ছে অপরাধীরা। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এবং ওষুধ ব্যবসায়ীদের সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে নিম্নবর্ণিত এসব কোম্পানীর উৎপাদিত ওষুধের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ সত্ত্বেয় তারা বহাল তবিয়তে ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। অনির্বান ফার্মাসিউটিক্যালসের সিলগোল্ড, মডার্ন হারবালের কস্তুরি সুপার, ম্যানসন্স ফার্মাসিউটিক্যালস’র সাসটিনা, ম্যানভিক্যাপ, ন্যাচার ফার্মাসিউটিক্যালস (ইউনানী) পুদিনা-এস, এন মুন্ইশ, এন জিংগো, এন ভিট-বি। লিড ফার্মাসিউটিক্যালস’র লিডোগোল্ড। ডীপলেইড ফার্মাকো’র লিবোনেক্স, ভিমেক্স প্লাস। হাইম্যাক্স ইউনানি ফার্মাসিউটিক্যালসের নাইট পিল (ট্রেড নামের অনুমোদন নেই) ,ম্যাক্সিন, ক্যাল-এক্স, সুরমা ফার্মাসিউটিক্যালসের (ইউনানী) আরক পুদিনা(সুরমিন্ট), সেব-এস(শরবত সেব),
এ বি ফার্মাসিউটিক্যালস’র (আয়ু) এবি কফ, এবি-টন, ফাস্ট ফার্মাসিউটিক্যালস’র (আয়ু) মেনফাষ্ট (যৌবন শতদল) ক্যাপসুল, ভিটাফাষ্ট (বলারিস্ট), জেবিএল ড্রাগ ল্যবরেটরীজ রুচিটন, দামালিন, অ্যামবো-ডি, জিনটোরিন, নিশিক্যাপ, জেবিলেক্স, দিহান ফার্মাসিউটিক্যালস (আয়ু)একই ডি এ আর নাম্বার ব্যবহার করে রুচিটন সিরাপ, দি-টন সিরাপ, এনজয় প্লাস ক্যাপসুল, এনজয়প্লাস সিরাপ, সোলার ফার্মাসিউটিক্যালস (ইউনানী) পাবনার সোলার জিনসিন (শরবত জিনসিন) ১০০ মিঃলিঃ, ফাইটন (আরক লাহসুন), সবুজ ফার্মাসিউটিক্যালস (আয়ু) সবুজ আমলকী প্লাস ৪৫০মিলিঃ, সবুজ জিনসিন ১০০মিঃলিঃ, প্রজ্ঞা ল্যবরেটরীজ (আয়ু) ভিগোরিষ্ট(ভিমরস)১০০মিঃলিঃ সহ অনেক কোম্পানির যৌনশক্তিবর্ধক ওষুধের ব্যবহারিক পরীক্ষায় প্রমাণিত হয় এগুলো ইউনানি-আয়ুর্বেদ ফর্মুলায় তৈরি নয়। কেননা উক্ত ওষুধসমূহের কার্যকারিতা শুরু হয় এক থেকে দুই ঘণ্টার মধ্যে, যা ভেষজ ওষুধের বৈশিষ্ট্য নয়। কিছু কোম্পানির ওষুধ নির্দেশিকায় লেখা রয়েছে প্রয়োজনের এক ঘণ্টা পূর্বে সেবন করতে হবে। উল্লেখিত ওষুধগুলোর বিক্রেতাদের (ফুটপাত ও ওষুধের দোকান) সাথে কথা বললে তারা সেবনের ১ ঘণ্টার মধ্যে কার্যকারিতার নিশ্চয়তা দেন।
অন্যদিকে একাধিক ব্যবহারকারী ১ থেকে ৩ ঘণ্টার মধ্যে কার্যকারিতার কথা স্বীকার করেছেন। তবে উক্ত ওষুধ দীর্ঘ দিন ব্যবহারের ফলে শরীরে বিভিন্ন নেতিবাচক প্রভাবের কথাও বলেছেন তারা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসি বিভাগ সূত্রে জানা যায়, তাদের নিজস্ব উদ্যোগে ল্যাবরেটরিতে ইউনানি-আয়ুর্বেদ ওষুধের কিছু নমুনা ইতঃপূর্বে পরীক্ষা করা হয়েছে। তাতে মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর ফর্মুলারিবহির্ভূত রাসায়নিক উপাদান ব্যবহারের প্রমাণ পাওয়া গেছে।