বিশেষ প্রতিনিধি ছয় শীর্ষ নেতার পদত্যাগের পর দেশে পরিবেশবাদীদের সবচেয়ে বড় সংগঠন বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) এখন অভিভাবকশূন্য। এ নিয়ে সারাদেশে চলছে নানা গুঞ্জন। সোমবার সমকালে ‘অসন্তোষ-কোন্দলে সংকটে বাপা : পদ ছাড়লেন সুলতানা কামাল, রাশেদা কে চৌধুরীসহ ৬ জন’ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশের পর নানা আলোচনা-সমালোচনা ছড়িয়ে পড়ে। দুই গ্রুপে বিভক্ত নেতাকর্মীরা সংগঠনের এমন অচলাবস্থার জন্য একে অন্যকে দায়ী করছেন। তবে কেউই আনুষ্ঠানিকভাবে গণমাধ্যমে মুখ খোলেননি। এমন পরিস্থিতিতে আজ মঙ্গলবার রাতে কেন্দ্রীয় নির্বাহী কিমিটর সভা আহ্বান করেছেন ছয় সহসভাপতি।এ সভার বিষয়ে বাপার প্যাডে দেওয়া একটি চিঠি সমকালের হাতে এসেছে। ‘বাপা কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির বিশেষ (১৫২তম) সভার বিজ্ঞপ্তি’ শীর্ষক চিঠির আলোচ্যসূচিতে উল্লেখ করা হয়েছে, ‘উদ্ভূত পরিস্থিতিতে সামনে এগিয়ে যাওয়ার জন্য সহসভাপতিদের সভায় গৃহীত সুপারিশ বিবেচনা।আজ রাত ৯টায় জুম মিটিংয়ে অংশ নিতে সদস্যদের আহ্বান জানানো হয়েছে। চিঠির নিচে ছয়জন সহসভাপতির নাম উল্লেখ আছে। তাঁরা হলেন– অধ্যাপক এম ফিরোজ আহমেদ, অধ্যাপক খন্দকার বজলুল হক, ড. নজরুল ইসলাম, অধ্যাপক নূর মোহাম্মদ তালুকদার, ড. আতিউর রহমান ও প্রকৌশলী তাকসিম এ খান। সভায় কার্যনির্বাহী ৫২ সদস্যকেই আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
বাপার এক নেতা সমকালকে বলেন, যারা সভা ডেকেছেন তারাই বাপার মূল লোক। আজকের সভায় সহসভাপতিরা তাদের সুপারিশ তুলে ধরবেন। সবার সম্মতিতে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত আসতে পারে। দীর্ঘদিন অচল হয়ে থাকা বাপা এখন সঠিক পথে এগোচ্ছে। আজকের সভার পর বাপা হারানো গৌরব ফিরে পাবে। সাধারণ সভার আগ পর্যন্ত এক মাসের জন্য ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের নাম ঘোষণা হতে পারে আজ। তবে আরেক নেতা বলেন, বাপা কখনোই অচল ছিল না। গত কয়েক বছরে বাপা দেশজুড়ে আন্দোলন-সংগ্রাম করেছে। অনেকেই বলছেন, সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক শরীফ জামিল বাপাকে ওয়াটার কিপার্স বাংলাদেশের কাজে ব্যবহার করেছেন। এটি সঠিক নয়। শরীফ জামিল ২০১৫ সাল থেকে সংস্থাটির সমন্বয়কের দায়িত্ব পালন করছেন। অথচ ২০১৯ সালে তিনি বাপার সাধারণ সম্পাদক হন। একটি গ্রুপ রাজনৈতিক ও ব্যক্তিস্বার্থে এসব বলছে।দীর্ঘদিনের ক্ষোভ, রেষারেষি ও দ্বন্দ্বের জেরে সম্প্রতি পদত্যাগ করেছেন বাপার সভাপতি সুলতানা কামাল, সাধারণ সম্পাদক শরীফ জামিল, নির্বাহী সহসভাপতি ডা. আব্দুল মতিন, সহসভাপতি রাশেদা কে চৌধুরী, কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য ফরিদা আখতার ও আব্দুল কাদের। তবে তাঁরা পদত্যাগের জন্য ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়েছেন।পরিবেশবাদীরা বলছেন, বিভেদের কারণে পরিবেশ আন্দোলনের সবচেয়ে বড় প্ল্যাটফর্মটি নষ্ট হতে দেওয়া যাবে না। অস্থিরতা নিরসন করে সব পরিবেশপ্রেমিককে দেশের স্বার্থে ঐক্যবদ্ধ হওয়া দরকার। নতুন নেতৃত্বের মাধ্যমে বাপা পরিবেশ রক্ষায় অগ্রণী ভূমিকা পালন করবে বলে আশা তাঁদের।