• রবিবার, ১৯ মে ২০২৪, ০৫:৫১ পূর্বাহ্ন |
  • Bangla Version
নিউজ হেডলাইন :
করোনা শনাক্তের হার ১৫ শতাংশের বেশি, মৃত্যু ১ সুষ্ঠ ভোটে ডিজিটাল পদ্ধতি দরকার  অভয়নগরে শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তি বাস্তবায়ন ও মনিটরিং সম্পর্কিত প্রশিক্ষণ অভয়নগরে সরকারীভাবে ধান চাল সংগ্রহের উদ্বোধন অভয়নগরে মেধা অন্বেষন ও কুইজ প্রতিযোগীতা অনুষ্ঠিত অভয়নগরে দুদক কর্তৃক সততা স্টোরের অর্থ ও শিক্ষা উপকরণ বিতরণ আশুলিয়া টু চান্দুরা চৌরাস্তা যানজটের দুর্ভোগ,,,  অভয়নগরে মাধ্যমিক পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ প্রতিষ্ঠান প্রধানকে সংবর্ধনা যশোর গোয়েন্দা শাখা (ডিবি)অভিযান চালিয়ে ৪ বোতল বিদেশী মদ উদ্ধার সহ আটক -১ অভয়নগরে পায়রাহাট ইউনাইটেড কলেজ শ্রেষ্ঠ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্বীকৃতি অর্জনে আনন্দ শোভাযাত্রা নড়াইলের ইউপি চেয়ারম্যান  মোস্তফা কামাল’কে গুলি করে হত্যাকান্ডের ঘটনায় আটক -৪ সুষ্ঠ ভোটে ডিজিটাল পদ্ধতি দরকার আশুলিয়ায় ২৪ ঘণ্টায় ছয় জনের মরদেহ উদ্ধার ডিবি কার্যালয় থেকে বেরিয়ে যা বললেন মামুনুল হক যুক্তরাষ্ট্র সিরিজ খেলা হচ্ছে না তাসকিনের, বিকল্প ভাবনায় হাসান দুই সিনেমা নিয়ে ফিরছেন আফরান নিশো

৩৪ জেলায় ছড়িয়েছে নিপাহ ভাইরাস

বিশেষ প্রতিনিধি রাজবাড়ী জেলায় চলতি বছরের মাঝামাঝি সময়ে অন্তঃসত্ত্বা ফরিদা বেগম (ছদ্মনাম) জ্বর, সর্দি ও শ্বাসকষ্ট নিয়ে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ভর্তি হন। পরীক্ষা-নিরীক্ষায় তাঁর দেহে নিপাহ ভাইরাস শনাক্ত হয়। ভূমিষ্ঠ হাওয়ার কিছুদিনের মধ্যেই তাঁর সন্তানের জ্বর ও খিঁচুনি হয়। স্থানীয় সরকারি হাসপাতালে শিশুটিকে ভর্তি করা হলে পরীক্ষার জন্য নমুনা পাঠানো হয় ঢাকায়। পরীক্ষায় তার শরীরেও এই ভাইরাস শনাক্ত হয়।চিকিৎসকরা জানান, খেজুরের কাঁচা রস পানের মাধ্যমে ফরিদার শরীরে এ ভাইরাস প্রবেশ করে। তাঁর মাধ্যমে সন্তান এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয় এবং পরে এ কারণে সন্তানের মৃত্যু হয়েছে। ফরিদা বেঁচে গেলেও তাঁর নানা জটিলতা দেখা দিয়েছে। শুধু ফরিদার সন্তান নয়, এ বছর ১২ নভেম্বর পর্যন্ত এই ভাইরাসে ১০ জনের মৃত্যু হয়েছে।

স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের প্রতিষ্ঠান রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) তথ্য অনুযায়ী, এ বছর ১৪ জন নিপাহ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। গত সাত বছরের মধ্যে তা সর্বোচ্চ। এ বছর মৃত্যু আট বছরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি। ২০০১ সালে দেশে প্রথম নিপাহ ভাইরাস সংক্রমণের প্রমাণ মেলে। এখন পর্যন্ত মোট ৩৩৯ জন আক্রান্ত হয়েছেন। এ পর্যন্ত ২৪০ জনের মৃত্যু হয়েছে। দেশের ৩৪টি জেলায় এই ভাইরাস আক্রান্ত ব্যক্তি শনাক্ত হয়েছে। ২২ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ রোগী শনাক্ত ও মৃত্যু হয় ২০০৪ সালে। সে বছর ৬৭ রোগী শনাক্ত হয়েছেন এবং মারা গেছেন ৫০ জন। সে বছর ফরিদপুরে নিপাহ ভাইরাসে ৩৫ জন আক্রান্ত হন, তার মধ্যে ২৭ জনের মৃত্যু হয়। শতকরা হিসাবে যা মোট রোগীর ৭১ শতাংশ।গতকাল রোববার আইইডিসিআরের আয়োজনে ‘নিপাহ ভাইরাসের বিস্তার এবং ঝুঁকিবিষয়ক অবহিতকরণ’ শীর্ষক আলোচনার সভা হয়। সভায় এক জরিপের তথ্য তুলে ধরে আইইডিসিআরের পরিচালক অধ্যাপক ডা. তাহমিনা শিরিন বলেন, চলতি বছর প্রথমবারের মতো নরসিংদী জেলায় সংক্রমণের প্রমাণ পাওয়া গেছে। এতদিন শুধু উত্তরাঞ্চলে সংক্রমণ ঘটছে ধারণা করা হলেও এখন নিপাহ ভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তি দেশের মধ্যাঞ্চলে পাওয়া যাচ্ছে। নিপাহ সংক্রমণকে বৈশ্বিক মহামারির ১০টি হুমকির একটি হিসেবে ঘোষণা করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।তিনি বলেন, মূলত খেজুরের কাঁচা রস পান করেই এ ভাইরাসে আক্রান্ত ও মৃত্যুর ঘটনা ঘটে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে অনলাইনে ব্যাপকহারে খেজুরের কাঁচা রস বিক্রি বেড়ে যাওয়া সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ার অন্যতম কারণ। খেজুরের রসে বাদুড় মুখ দেয়। সেখান থেকেই মানবদেহে ছড়ায় এ ভাইরাস। এ ছাড়া বাদুড়ের মুখের লালা, মল, মূত্র তালের রস বা তাড়ি এবং আংশিক খাওয়া ফল খেলে ভাইরাস মানুষের দেহে সংক্রমিত হয়।  নিপাহ ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার পর যারা বেঁচে যান, তাদের কেউ কেউ স্মৃতি হারিয়ে ফেলতে পারেন এবং পঙ্গু হয়ে যেতে পারেন চিরতরে। তিনি বলেন, বাংলাদেশে আর কোনো সংক্রামক ব্যাধিতে মৃত্যুর হার এত বেশি বলে জানা যায়নি। মৃত্যুর আশঙ্কা থাকার পরও নিপাহ ভাইরাস নিয়ে জনসচেতনতা প্রায় নেই বললেই চলে। এ জন্য একযোগে প্রচার-প্রচারণা বাড়াতে হবে। স্কুল পর্যায়ে এই ভাইরাসে বিষয়ে সচেতনতা তৈরি করা জরুরি।

সভায় আইসিডিডিআর,বি উপদেষ্টা ডা. মুশতাক হোসেন বলেন, নিপাহ ভাইরাসের এখনও কোনো টিকা আবিষ্কার হয়নি। কোনো সুনির্দিষ্ট চিকিৎসা নেই। একমাত্র সচেতনতায় এ থেকে মুক্তি মিলতে পারে। নিপাহ ভাইরাসে আক্রান্ত হলে প্রাথমিকভাবে মাথাব্যথা, খিঁচুনি, গা ব্যথা, ঘাড় ও পিঠ শক্ত হয়ে যাওয়া, বমিবমি ভাব এবং গলাব্যথা হতে পারে। এরপর আক্রান্ত ব্যক্তি প্রলাপ বকা শুরু করতে পারেন। প্রাথমিক পর্যায়ে শনাক্ত হলে এ থেকে মুক্তি মেলে।স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হাসপাতাল ও ক্লিনিক শাখার পরিচালক ডা. আবুল হোসেন মঈনুল হোসেন বলেন, ২২ বছর আগে এ ভাইরাস শনাক্ত হলেও  মৃত্যুর হার কমছে না। খেজুরের কাঁচা রস পানে নিষেধাজ্ঞা দিয়ে আইন বা বিধি করা যেতে পারে। একই সঙ্গে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, কৃষি ও শিক্ষা বিভাগকে যুক্ত করে একযোগে উদ্যোগ নিতে হবে।স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেমের (এমআইএস) পরিচালক অধ্যাপক শাহদাত হোসেন বলেন, শনাক্ত ও মৃত্যুর তথ্য নিয়ে যদি করোনার সময়ের মতো একটা তথ্যভান্ডার তৈরি করা যায়, তাহলে জরুরি পদক্ষেপ নেওয়া আরও সহজ হবে।জাতীয় প্রতিষেধক ও সামাজিক চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানের (নিপসম) পরিচালক অধ্যাপক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা বলেন, খেজুরের কাঁচা রস খাওয়া ছাড়া অন্য কোনো কারণে এই ভাইরাসে আক্রান্ত হচ্ছে কিনা, তা নিয়ে গবেষণা প্রয়োজন। সংক্রমণ রোধে সীমান্ত এলাকায় স্ক্রিনিং জোরদার করা প্রয়োজন। সচেতনতা বৃদ্ধিতে সামাজিক পর্যায়ে পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি। অনেক সময়ে শনাক্ত রোগী হাসপাতালে রাখতে চান না চিকিৎসকরা। সব হাসপাতালে এই রোগের চিকিৎসার জন্য আলাদা শয্যা নির্ধারণ করে রাখতে চিঠি দেওয়া প্রয়োজন।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published.