বিশেষ প্রতিনিধি পাকিস্তানি শোষণ-জুলুম ও অত্যাচার থেকে মুক্ত হয়ে সাম্য, মানবিক মর্যাদা এবং সামাজিক সুবিচারের ভিত্তিতে একটি স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন নিয়ে যে স্বাধীনতা যুদ্ধ ও বিজয় অর্জিত হয়েছিল আওয়ামী লীগ তার সকল অর্জনকে ধ্বংস করেছে বলে অভিযোগ ‘এবি পার্টি’। পার্টির নেতারা বলেন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও অঙ্গীকার ভূলুণ্ঠিত করে আওয়ামী লীগ জাতির সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে। ফলে এখনও বাংলার মানুষ প্রকৃত অর্থে পরাধীন ও শোষণ-বৈষম্যের শিকার।
আজ মঙ্গলবার মহান স্বাধীনতা দিবস উদযাপন উপলক্ষে এবি পার্টি আয়োজিত আলোচনা সভায় বক্তারা এসব কথা বলেন। বিকেল ৪টায় রাজধানীর বিজয় নগরস্থ দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয় সংলগ্ন বিজয়-৭১ চত্বরে এ আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন দলের আহ্বায়ক এএফএম সোলায়মান চৌধুরি। প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দলের সভাপতি, বীর মুক্তিযোদ্ধা ইশতিয়াক আজিজ উলফাৎ। আরও বক্তব্য রাখেন এবি পার্টির সদস্যসচিব মজিবুর রহমান মঞ্জু, যুগ্ম সদস্যসচিব ব্যারিস্টার আসাদুজ্জামান ফুয়াদ, প্রচার সম্পাদক আনোয়ার সাদাত টুটুল, মহানগর উত্তরের আহ্বায়ক আলতাফ হোসাইন ও কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য রিপন মাহমুদ।
এর আগে সকাল ১১টায় এবি পার্টির নেতারা জাতীয় স্মৃতিসৌধে ফুলেল শ্রদ্ধা জানান। দলের যুগ্ম আহ্বায়ক বিএম নাজমুল হক ও সরকারি সদস্যসচিব আলতাফ হোসেইনের নেতৃত্বে দলের নেতা কর্মীরা পুস্পস্তবক নিয়ে জাতীয় স্মৃতিসৌধের পুষ্পবেদীতে দলের পক্ষ থেকে শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে ইশতিয়াক আজিজ উলফাৎ বলেন, ১৯৭১ সালের ২৫ শে মার্চ কালো রাতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ঢাকার সর্বত্র নিরস্ত্র মানুষ মেরে আমাদের ওপর যুদ্ধ চাপিয়ে দিয়েছিল। ২৬ মার্চে আমরা বের হয়ে যখন রাস্তায় নারী-শিশুর রক্ত দেখেছি তখন বুঝেছি- পাকিস্তানকে আর মেনে নেওয়া যাবে না।
তিনি বলেন, আমার আপন বড় ভাই মুক্তিযুদ্ধে শহীদ হন। আজ এই ৫৩ বছর পরও আমার ভাইয়ের রক্ত শুকায়নি। ১৬ ডিসেম্বর যেদিন পাকিস্তান বাহিনী আত্মসমর্পণ করল সেদিনও ষড়যন্ত্র করে মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক জেনারেল ওসমানীকে সেখানে উপস্থিত রাখা হয়নি। সেদিন তাকে সিলেটে পাঠিয়ে তার হেলিকপ্টারে গুলি করা হয়। সেদিনই আমরা বুঝতে পেরেছি, নতুন ষড়যন্ত্রের শিকার হয়েছি। আমি একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে বলতে চাই, যত ষড়যন্ত্রই করুন না কেন এটা সিকিম নয় ভুটান নয়, এটা বাংলাদেশ। কোনো ষড়যন্ত্র মেনে নেওয়া হবে না। প্রয়োজনে আবার যুদ্ধ হবে, সেই যুদ্ধে প্রথম আমরা রক্ত দেব, বাংলাদেশকে আবার মুক্ত করব ইনশাআল্লাহ। এ সময় তিনি গণ-ইফতারের উদ্যোগের জন্য এবি পার্টিকে ধন্যবাদ জানান। সভাপতির বক্তব্যে এএফএম সোলায়মান চৌধুরী বলেন, ৬২, ৬৯ ও ৭১ সালে মুক্তিযোদ্ধারা বৈষম্যের বিরুদ্ধে যে স্লোগান ও দাবি তুলেছিল, দুঃখজনকভাবে এখন আমাদেরকে আওয়ামী স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে একই দাবি তুলতে হচ্ছে।
মজিবুর রহমান মঞ্জু বলেন, দেশের বহু মানুষ আজ কষ্টে আছে। নানা সমস্যা নিয়ে দুঃখে জীবন যাপন করছে। একেক মানুষের সমস্যা একেক রকম। এই দেশ স্বাধীন হয়েছিলো মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য, যা আজও প্রতিষ্ঠা হয়নি। শেখ মুজিব স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন মানুষের মুক্তির জন্য। কিন্তু তিনি ক্ষমতায় এসে সকল রাজনৈতিক দল বন্ধ করে দিয়েছিলেন, সকল পত্রিকা বন্ধ করে দিয়েছিলেন। তেমনি আজও আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোকে দমন করে মানুষের সকল অধিকার হরণ করেছে।ব্যারিস্টার ফুয়াদ বলেন, গত ৫৩ বছর আগে আমাদের মুক্তিযোদ্ধারা যে অঙ্গীকারের ভিত্তিতে রক্ত দিয়েছিলেন তা আজ প্রহসনে পরিণত হয়েছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর রিপোর্ট অনুযায়ী, দেশের ৪ কোটি মানুষ ঋণ করে খাবার কিনছে। অথচ বাংলাদেশের সরকারের লোকজন আর আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা ইউরোপ-আমেরিকায় বসতি গড়ে তুলেছে। আলোচনা সভায় আরো উপস্থিত ছিলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা রফিকুল ইসলাম চুন্নু, বীর মুক্তিযোদ্ধা জহিরুল আলম, বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল হাকিম, জাগপার প্রেসিডিয়াম সদস্য আসাদুর রহমান খান, এবি পার্টির যুগ্ম আহ্বায়ক বিএম নাজমুল হক, সহকারী সদস্যসচিব শাহ আব্দুর রহমান, গাজীপুরের আহ্বায়ক ইঞ্জিনিয়ার আলমগীর হোসেন, মহানগর দক্ষিণের যুগ্ম আহ্বায়ক আনোয়ার ফারুক, আব্দুল হালিম খোকন, উত্তরের সদস্য সচিব সেলিম খান, যুবপার্টির গাজীপুর শাখার আহ্বায়ক মাসুদ জমাদ্দার রানা, সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুল হালিম নান্নু, ছাত্রপক্ষের আহ্বায়ক মোহাম্মদ প্রিন্স, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য শাহজাহান ব্যাপারী, এনামুল হক, শাহীনুর আক্তার শীলা, ফেরদৌসী আক্তার অপি, রুনা হোসাইনসহ কেন্দ্রীয় ও মহানগরীর বিভিন্ন পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ।