মিটফোর্ডের পাইকারি কয়েকটি মার্কেটে অনুসন্ধান চালিয়ে দেখা গেছে, সুপরিচিত কোম্পানির নকল ওষুধ এবং অখ্যাত কোম্পানির ওষুধে সয়লাব বাজার। মোড়ক দেখে যা চেনার উপায় নেই। বিশেষ করে জরুরি প্রয়োজনের জীবন রক্ষাকারী ওষুধ নকল হচ্ছে বেশি। উদারন সরূপ কয়েকজন ব্যবসায়ী জানান, বড় কোম্পানির ওমিপ্রাজল গ্রুপের এক বাক্স ক্যাপসুলের দাম ৪০০ টাকা। অথচ নকল করে ওই ওষুধ পাইকারি পর্যায়ে বিক্রি হয় মাত্র ৭২ টাকায়। তবে খুচরা পর্যায়ে ৪শ’ টাকাতেই বিক্রি হয় এসব ওষুধ। জীবন রক্ষাকারী প্রাথমিক স্তরের প্যারসিটামল, ব্যথানাশক ডাইক্লোফেনাক, অ্যান্টিবায়োটিক এজিথ্রেমাইসিন, ফ্লুক্লোসাসিনসহ সব গ্রুপের ওষুধই নকল ও ভেজাল হচ্ছে। পাইকারি ব্যবসায়ীরা এসব ওষুধ কম দামে পেলেও সাধারণ ক্রেতারা তা প্রতিষ্ঠিত কোম্পানির ওষুধের সমান দামে কিনছেন। পাইকারি দাম কম হওয়ায় অসাধু ফার্মেসি মালিক বা খুচরা বিক্রেতারা এসব নিম্নমানের ওষুধ বিক্রি করতে বেশি আগ্রহী। নকল কোম্পানি তাদের ওষুধ সারাদেশে ছোট ছোট ফার্মেসিতে ছড়িয়ে দিতে না পারায় রাজধানীর মিটফোর্ড, মিরপুর, নারায়ণগঞ্জ, খুলনার হেরাজ মার্কেট, চট্টগ্রামের হাজারী লেন, কুমিল্লার শাসনগাছা, রাজশাহীর সাহেব বাজারের মতো ওষুধের বড় বড় পাইকারি মার্কেটের মাধ্যমে তা সারাদেশে ছড়িয়ে যাচ্ছে।
জানা গেছে, নকল-ভেজাল ও মানহীন ওষুধ উৎপাদনের মূলে রয়েছে মিটফোর্ডে খোলা বাজারে বিক্রি হওয়া কাঁচামাল। ঔষধ প্রশাসনের অনুমোদন পাওয়া কোম্পানিই কেবল বিদেশ থেকে ওষুধ তৈরির কাঁচামাল আমদানি করতে পারে। ওই কাঁচামাল খোলা বাজারে বিক্রির সুযোগ নেই। কিন্তু অনেক ওষুধ কোম্পানি চাহিদার তুলনায় অধিক পরিমাণে কাঁচামাল আমদানি করে। নিজেদের চাহিদা মিটিয়ে অতিরিক্ত কাঁচামাল খোলাবাজারে বিক্রি করে থাকে। এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী ও নকল ওষুধ বিক্রির সঙ্গে জড়িত সিন্ডিকেট খোলাবাজার থেকে ওই কাঁচামাল কিনে নকল ওষুধ উৎপাদন করে। রাজধানীর মিটফোর্ডে সহস্রাধিক দোকানে উন্মুক্ত পদ্ধতিতে কাঁচামাল বিক্রি করা হয়। কেমিক্যাল অ্যান্ড পারফিউম মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশন নামে তাদের একটি সংগঠনও রয়েছে। এই সংগঠনের নেতা হাজী বেলায়েত হোসেন বলেন, যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমোদন নিয়েই তারা ব্যবসা করছেন। তবে কে এই যথাযথ কর্তৃপক্ষ সে বিষয়ে বিস্তারিত বলতে রাজি হননি তিনি।
গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ও জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. জাফরুল্লাহ্ চৌধুরী বলেন, ওষুধ তৈরির কাঁচামাল খোলাবাজারে কোনো ভাবেই বিক্রি হতে পারে না। যারা এ ধরনের কাঁচামাল বিক্রির সঙ্গে জড়িত তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। তাহলেই ছোট ছোট কোম্পানির মাধ্যমে তৈরি হওয়া মানহীন ওষুধের উৎপাদন ও বিক্রি বন্ধ হবে।