আন্তর্জাতিক ডেস্ক গত দুই দিনে নীতি-নির্ধারণী শিবিরে নৈশভোজের সময় রাহুল গান্ধী বিভিন্ন টেবিলে ঘুরে ঘুরে দলের নেতানেত্রীদের সঙ্গে কথা বলেছেন। অনেকেই রাহুলকে অনুরোধ করেছেন, আবার কংগ্রেস সভাপতির দায়িত্ব নেওয়ার জন্য।
গতকাল রবিবার নীতি-নির্ধারণী শিবিরের শেষে রাহুল গান্ধী দলের নেতানেত্রীদের বলেছেন, আপনাদের সঙ্গে আমি লড়াইয়ে নামতে চলেছি। বিজেপি, আরএসএসের মতাদর্শকে আমরা হারিয়ে দেখাব।কিন্তু তিনি আবারো কংগ্রেসের সভাপতির দায়িত্ব নিতে তৈরি কি না, তা নিজের মুখে স্পষ্ট করেননি। তবে তাঁর ঘনিষ্ঠ শিবিরের বক্তব্য, নীতি-নির্ধারণী শিবিরে রাহুলের কংগ্রেস সভাপতি পদে ফেরার প্রেক্ষাপট তৈরি হয়ে গেছে।কী সেই প্রেক্ষাপট? দীর্ঘদিন ধরেই রাহুল কংগ্রেসের সংগঠনে তরুণ মুখ তুলে আনতে চাইছিলেন। ২০১৭ সালে কংগ্রেসের সভাপতি হলেও তার ইচ্ছে মতো দলের নেতারা চলেননি— এই ক্ষোভ থেকেই ২০১৯ সালের লোকসভা ভোটের পরে সভাপতির পদ থেকে রাহুল সরে দাঁড়িয়েছিলেন।এবার নীতি-নির্ধারণী শিবিরে তার ইচ্ছানুসারে কংগ্রেসের ওয়ার্কিং কমিটি থেকে নিচু তলা পর্যন্ত সব স্তরে ৫০ শতাংশ পদে ৫০ বছরের কমবয়সিদের তুলে আনার সিদ্ধান্ত হয়েছে। বৃদ্ধদের সিংহভাগকেই বিদায় নিতে হবে। কংগ্রেসের নেতৃত্বে কার্যত নতুন প্রজন্ম উঠে আসবে। ‘টিম সোনিয়া’-র বদলে ‘টিম রাহুল’ তৈরি হবে। ফলে রাহুলের সভাপতি হয়ে নিজের মতো দল চালাতেও কোনো সমস্যা হবে না।রাহুল গান্ধী নিজে বলেছেন, আমি বলছি না কোনো বয়স্ক থাকবেন না। কিন্তু ব্লক, প্রদেশ কমিটি থেকে শীর্ষ নেতৃত্বে নবীন-প্রবীণের সংমিশ্রণ থাকা উচিত।
আগামী আগস্ট-সেপ্টেম্বরে কংগ্রেসের সভাপতি পদে নির্বাচন। তার পরে অক্টোবর হতে কাশ্মীর থেকে কন্যাকুমারী পর্যন্ত কংগ্রেসের ‘ভারত জোড়ো যাত্রা’ শুরু হবে। রাহুল-ঘনিষ্ঠ কংগ্রেস নেতাদের ব্যাখ্যা, তিনি নিজে ভারতজুড়ে এই জনসংযোগ কর্মসূচিতে রাস্তায় নামবেন বলে রাহুল বুঝিয়ে দিয়েছেন, তিনি ফের হাল ধরতে তৈরি।উদয়পুরে এসে কংগ্রেসের দুই সবেধন নীলমণি মুখ্যমন্ত্রী অশোক গহলৌত, ভূপেশ বাঘেলের মতো অনেকেই রাহুলকে ফের সভাপতি পদে ফেরার অনুরোধ করেছেন। আবার তেমনই রাহুল অনিচ্ছুক হলে প্রিয়াঙ্কা গান্ধী বঢরাকে কংগ্রেস সভানেত্রী করার দাবিও উঠেছে।উত্তর প্রদেশের কংগ্রেস নেতা আচার্য প্রমোদ কৃষ্ণন শনিবার নীতি-নির্ধারণী শিবিরে রাজনৈতিক বিষয়ে আলোচনার সময়ে সোনিয়া গান্ধীর সামনেই দাবি তোলেন, রাহুলকে তো দুই বছর ধরে রাজি করানোর চেষ্টা হচ্ছে। রাহুল রাজি না হলে প্রিয়াঙ্কাকে সভানেত্রী করা হোক। কারণ তিনিই দলের সবচেয়ে জনপ্রিয় মুখ।কৃষ্ণনের ওই মন্তব্যের সময়ে সোনিয়ার সঙ্গে প্রিয়াঙ্কাও হাজির ছিলেন। তবে রাহুল ছিলেন না। সোনিয়া-প্রিয়াঙ্কা কেউই প্রতিক্রিয়া জানাননি। তবে প্রিয়াঙ্কা গম্ভীর হয়ে যান।রাজনৈতিক বিষয়ক কমিটির আহ্বায়ক মল্লিকার্জুন খড়গে অবশ্য কৃষ্ণনকে থামানোর চেষ্টা করে বলেন, নীতি-নির্ধারণী শিবিরে সভাপতি কে হবেন, তা নিয়ে আলোচনা হচ্ছে না। তার ফয়সালা সাংগঠনিক নির্বাচনে হবে।
নীতি-নির্ধারণী শিবিরের শেষে রাহুল কংগ্রেসের নেতা-কর্মীদের বলেছেন, আমার দিক থেকে বলতে পারি, আমি আপনার পরিবারের সদস্য, আপনারা আমার পরিবার।দলের প্রবীণ নেতারা অনেক সময় মনোবল হারিয়ে ফেললেও, ভয় পাওয়ার কোনো কারণ নেই জানিয়ে রাহুল বলেন, বিজেপি-আরএসএসের মতাদর্শের বিরুদ্ধে আমার সারা জীবনের লড়াই। আমি ভয় পাই না। আমার কিছু এসে যায় না। আমি কোনোদিন দুর্নীতি করিনি। এক পয়সাও নিইনি। সত্যি কথা বলতে তাই ভয় পাই না।রাহুল সভাপতি হলেও, কংগ্রেসের অনেকের মত, প্রিয়াঙ্কাকে আরও বড় দায়িত্ব দেওয়া উচিত। হরিয়ানার কংগ্রেস নেতা দীপেন্দ্র হুডা নীতি-নির্ধারণী শিবিরে বলেছেন, প্রিয়াঙ্কাকে শুধু উত্তর প্রদেশের গণ্ডিতে বেঁধে না রেখে জাতীয় স্তরে দায়িত্ব দেওয়া হোক। বিহারের কংগ্রেস নেত্রী রঞ্জিতা রঞ্জনেরও মত, প্রিয়াঙ্কাকে একটি রাজ্যে আটকে রাখা উচিত নয়।