বিশেষ প্রতিনিধি সাম্প্রতিক সময়ে দেশে চালের বাজার থেকে শুরু করে নিত্যপণ্যের বাজার প্রতিদিনই উত্তাপ ছড়াচ্ছে। দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতিতে নাভিশ্বাস উঠেছে সাধারণ মানুষের মধ্যে। এরই মধ্যে আলোচনায় রয়েছে গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত। ইতোমধ্যে এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিয়ে দুই খাতেরই আলাদা আলাদা গণশুনানি করেছে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি)। আজ বৃহস্পতিবার এক অনুষ্ঠানে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদও ইঙ্গিত দিয়েছেন দাম বাড়ার বিষয়ে। এবার বললেন, বিদ্যুতের দাম বাড়ার ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রীর সঠিক নির্দেশনার অপেক্ষায় রয়েছে বিদ্যুত বিভাগ।
নসরুল হামিদ বলেছেন, আমাদের একটি বৃহৎ জনগোষ্ঠীর বিদ্যুতের মূল্য দেয়ার সক্ষমতা নেই। তাই ভর্তুকি দেয়া হয়। এই মুহূর্তে সারা বিশ্বেই যে অবস্থা, জ্বালানি ও বিদ্যুতের দাম ঠিক রাখা অনেক বেশি কঠিন। এই পরিস্থিতিতে বিভিন্ন দেশ তাদের আয় ও সঙ্গতির ওপর নির্ভর করে সিদ্ধান্ত নিতে হচ্ছে। আমাদের লক্ষ্য নির্ধারিত, কাদের জন্য ভর্তুকি দিতে চাই, কত দর রাখতে চাই। তবে বিদ্যুতের দামের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী এমন কোনও কিছু করবেন না যা বোঝা হয়ে দাঁড়ায়। বিদ্যুতের দাম আমরা বাড়াই না, সমন্বয় করি। সেই সমন্বয়টা সাশ্রয়ী কিনা সেটাই আমাদের দেখতে হবে।আজ বৃহস্পতিবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) আয়োজিত নাগরিক এবং ক্যাব কর্তৃক ‘বাংলাদেশ জ্বালানি রূপান্তর নীতি (প্রস্তাবিত)’ শীর্ষক বইয়ের মোড়ক উন্মোচনের সময় প্রধান অতিথির বক্তব্যকালে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, আমরা গ্যাস দিচ্ছি, চাহিদা আরও বেড়ে যাচ্ছে। নতুন নতুন শিল্প কারখানা হচ্ছে। এখনও ৫৫০ থেকে ৬০০ শিল্প সংযোগের আবেদন পড়ে রয়েছে। আমরা চাই শিল্প হোক, কর্মসংস্থান বাড়ুক। গ্যাস আমদানি করতে খরচ পড়ছে ৫৯ টাকা। গ্যাস বিক্রি করছি ৭ টাকায়। তিনি বলেন, গ্যাস ও বিদ্যুতের চাহিদা মিটাতে এলএনজি আমদানি করা হচ্ছে। যত্রতত্র শিল্প-কারখানা স্থাপন করায় নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুত বা গ্যাস দেয়া কিছুটা সমস্যা হচ্ছে। নিজস্ব গ্যাস অনুসন্ধানও বাড়ানো হয়েছে উল্লেখ করে প্রতিমন্ত্রী বলেন, জআবলানি সাশ্রয়ে আমাদের সচেতন হতে হবে। শিল্পখাতে গ্যাস ব্যবহারে অগ্রাধিকার দেয়া হচ্ছে। এসময় তিনি ক্যঅপটিভ পাওয়ার, ক্যাপাসিটি চার্জ, নবায়ণযোগ্য জ্বালানি, ভর্তুকী বা বিনিয়োগ মূল্য সমন্বয়, সময়োচিত মহাপরিকল্পনা, সঞ্চালন লাইন, গ্যাস পাইপ লাইন ইত্যাদি বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন। প্রতিমন্ত্রী বলেন, অনেকে মনে করেন সমুদ্রে গেলেই কালকে গ্যাস পাওয়া যাবে। এমন ধারণা সঠিক নয়, গ্যাস পেলেও আনতে ১০ বছর সময় লাগবে। সাগরে মাল্টিক্লেইন সার্ভে হচ্ছে, তারপর দেখবো এটা আনা সাশ্রয়ী হবে কিনা।
তিনি আরও বলেন, আমরা স্বল্প, মধ্য এবং দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নিয়েছিলাম। প্রথম পরিকল্পনা ছিল দ্রুত বিদ্যুত দেবো, তেল দিয়ে উৎপাদনে গেছি। সেখানে সফল হয়েছি, শিল্পের উৎপাদন বেড়েছে, মানুষের জীবনমান বেড়েছে। শিল্প মালিকরা গ্রামে যেখানে কম দামে জমি পেয়েছে সেখানে কারখানা করেছে।প্রতিমন্ত্রী বলেন, বৈশ্বিক প্রেক্ষাপট বাংলাদেশের জ্বালানি অর্থনীতিকে চ্যালেঞ্জের মধ্যে ফেলেছে। সারা বিশ্বেই জ্বালানি তেল ও গ্যাসের মূল্য উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে। জ্বালানিতে ভর্তুকি বা সমন্বয়ক যাই হোক সাশ্রয়ী রাখাই আমাদের মূল লক্ষ্য।এসময় ক্যাব সভাপতি গোলাম রহমান বলেন, আমরা প্রত্যাশা করি সরকার সাধারণ জনগণের কল্যাণে কাজ করতে কার্পণ্য করবে না। আমরা যেটুকু দেখি তাতে মনে হয় মিতব্যয়ী হওয়ার ক্ষেত্রে ঘাটতি রয়েছে। ব্যয় যৌক্তিক পর্যায়ে রাখা গেলে অনেক সাশ্রয় হতো। জ্বালানির ক্ষেত্রে আমদানি নির্ভরতা বাড়ানোর প্রবণতা লক্ষণীয়। এখান থেকে বের হয়ে আসতে না পারলে সংকট থেকেই যাবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূ-তত্ত্ব বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক বদরুল ইমাম বলেন, আজকের যে সমস্যা তার কেন্দ্র হলো এলএনজি। এটা আনার পর গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধি হয়েছে। গ্যাসের ঘাটতি পূরণে বড় একটা অংশ স্পট মার্কেট থেকে সংগ্রহ করা হয়। এই স্পট মার্কেটের মূল্য বাড়া কমার মধ্যে থাকে। এই মুহূর্তে বাংলাদেশকে স্পট মার্কেট থেকে বেরিয়ে এসে বিকল্প চিন্তা করতে হবে। আমাদের দীর্ঘ এবং স্বল্প পরিকল্পনা করতে হবে।সভায় ‘মূল্যবৃদ্ধি না করে বিদ্যুত ও গ্যাস খাতের আর্থিক ঘাটতি সমন্বয়ের বিকল্প প্রস্তাব’ সংক্রান্ত প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ক্যাব’র জ্বালানি উপদেষ্টা অধ্যাপক এম শামসুল আলম এবং ‘বাংলাদেশ জ্বালানি রূপান্তর নীতি (প্রস্তাবিত)’ নিয়ে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ তানজিম উদ্দিন খান।ক্যাব’র সভাপতি গোলাম রহমানের সভাপতিত্বে এসময় আরও উপস্থিত ছিলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক এম এম আকাশ, ক্যাবের জ্বালানি রূপান্তর নীতি এবং বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন আইন ও বিইআরসি’র ভূমিকার ওপর গঠিত জাতীয় কমিটি’র আহ্বায়ক স্থপতি মোবাশ্বের হোসেন, ক্যাবের সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট হুমায়ুন কবীর ভূঁইয়া।