বিএনপির নিষ্ক্রিয়তাসহ নানা কারণে জোট নয়, একলা পথে হাটতে চায় জামায়াতে ইসলামী। দলের সিনিয়র থেকে তৃণমূল পর্যায়ের নেতাদের দাবি, শুধুমাত্র ভোটের অঙ্কে বিএনপি তাদের কাছ থেকে সুবিধা নেয়। কিন্তু দুঃসময়ে জামায়াতের জন্য কোনো কিছু না করায় দিন দিন বিএনপির সঙ্গে দূরত্ব বাড়ছে তাদের। এখন একে অন্যকে বিশ্বাস করছে না বিএনপি-জামায়াত।
জোট ছেড়ে একলা চলো নীতিতে হাটতে তৃণমূল থেকে কেন্দ্রের উপর চাপ বাড়ছে উল্লেখ করে দলটির একাধিক নীতিনির্ধারক পর্যায়ের নেতা ডেইলি বাংলাদেশকে বলেন, এরইমধ্যে এ নিয়ে জোট প্রধানদের সঙ্গে চরম টানাপোড়েন চলছে।
সম্প্রতি কিছু ঘটনার (সর্বশেষ অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদ নির্বাচন, নির্বাচনে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের ভূমিকা ও জামায়াত প্রসঙ্গে ড. কামাল হোসেনের বক্তব্য) পর্যালোচনায় জামায়াতের নেতারা মনে করছেন, রাজনৈতিক কৌশলগত কারণ কিংবা দলীয় স্বার্থ রক্ষায় বিএনপি যেকোনো উদ্যোগ নেয়ার এখতিয়ার রাখে। সেক্ষেত্রে যেকোনো সময়ে তাদের মিত্রতা ভেঙে যেতে পারে। তাই এই পরিস্থিতিতে শুধু জোট প্রধানদের উপর নির্ভরশীলতা নয়, জামায়াতের উচিত একলা চলো নীতি গ্রহণ করা বা পারলে সমমনা ইসলামিক দলগুলোকে নিয়ে একটি পৃথক জোট গঠন করা।
দলটির একাধিক তৃণমূল নেতা ডেইলি বাংলাদেশকে বলেন, জামায়াত ও ছাত্রশিবির দলীয় কর্মসূচিতে যতটা সরব থাকে, জোটের কর্মসূচিতে ততটাই নিষ্ক্রিয় থাকে। তার অন্যতম কারণ বিএনপির নিষ্ক্রিয়তা। বিএনপি রাজপথে নামতে না পারায় জামায়াতও এককভাবে নামতে পারছে না।
দলটির নেতারা বলেন, দীর্ঘদিন ধরে বিএনপির সঙ্গে জোটে থাকায় শুধু সাংগঠনিক ভাবেই নয়, অর্থনৈতিকভাবে তাদের মেরুদণ্ড ভেঙে ফেলা হয়েছে।
তবে নিজ থেকে জামায়াত জোট ভাঙবে না দাবি করে দলের একটি পক্ষ জানায়, বিএনপি যদি জামায়াতকে বাদ দিয়ে চলতে চায় তাহলে চলবে। আমরা তাদের সেই সিদ্ধান্তকে স্বাগতম জানাবো। তবে আমরা আগ বাড়িয়ে এখনই কিছু বলতে যাব না।
জামায়াতে ইসলামী নিষিদ্ধ করা হলে তারা এমনিতেই জোট থেকে ছিটকে পড়বে এমন ভাবনায় বিএনপি তাদেরকে ঝেড়ে ফেলছে না এমন খবরও রয়েছে জামায়াতের কাছে। পরিস্থিতি বিবেচনা করে সময়, সুযোগ বুঝে একটা সময় এমনিতেই একটা সিদ্ধান্ত আসবে বলেও মন্তব্য করেন তারা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জামায়াতের ঢাকা মহানগর উত্তরের এক সিনিয়র নেতা বলেন, আমরা আগে থেকে বিএনপিকে কিছু বলবো না। তবে বিএনপি যদি আমাদেরকে ছেড়ে দিতে চায় তাহলে আমরা তাদের স্বাগত জানাবো। আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি জোট ছেড়ে দেয়াই উত্তম।
এক প্রশ্নের জবাবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জামায়াতের এক কেন্দ্রীয় নির্বাহী সদস্যবলেন, বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে, এই মুহূর্তে জামায়াতের উচিত জোট থেকে বের হওয়া। মানুষের মধ্যে কাজ করে জনসমর্থন বৃদ্ধির চেষ্টা করা। জনসম্পর্কিত বিষয়গুলো নিয়ে মিছিল-মিটিং করা। পারলে সমমনা ইসলামিক দলগুলোকে নিয়ে একটি পৃথক জোট গঠন করা।
এদিকে,স্বাধীনতা বিরোধী অপরাধে জামায়াত নেতৃত্ব দেশি-বিদেশি চাপে থাকায় এ নিয়ে বিএনপি বিব্রতকর অবস্থায় পড়েছে। ভোট ও জোটের চিন্তায় বিএনপি যেমন জামায়াতকে বের করে দিতে পারছেনা, তেমনি সহযোগীতাও করতে পারছে না। তাছাড়া বিভিন্ন বিষয়ে বিএনপি-জামায়াত একে অন্যকে আর তেমন একটা বিশ্বাস করতে পারছে না।