উৎপল ঘোষ,ক্রাইম রিপোর্টার :যশোর কোতয়ালী মডেল থানার মামলার সুত্রে জানা যায়, বড়বাজার এলাকায় রফিকুলের চাউলের গোডাউন হতে গত ২৫ মার্চ রাত আনুমানিক ২ টা ৩০ মিনিটের সময় ভিকটিম এস এম বায়েজীদ হাসান (৩৪) নামে এক ব্যক্তির মরদেহ উদ্ধার করে আইনশৃংখলা বাহিনী। ঘটনার পরপরই অত্র এলাকার জনমনে আতঙ্কের সৃষ্টি হয়।তাৎক্ষণিক ঘটনার সংবাদ পেয়ে র্যাব-৬, যশোর ক্যাম্পের আভিযানিক দল ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয় এবং ভিকটিমের মৃত্যুর কারণ উদঘাটনে গোয়েন্দা কার্যক্রম শুরু করে।
ভিকটিমের পরিবার সূত্রে জানা যায়, ভিকটিম খুলনা জেলার সোনাডাঙ্গা থানা এলাকার বাসিন্দা। ভিকটিম একজন সিভিল ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে যশোরের রফিকুল ইসলাম চৌধুরী, মুল্লুক চাঁন ও সঞ্জয় চৌধুরীর ঢাকা বসুন্ধরা আবাসিকের এম ব্লকে বিল্ডিং নির্মাণ প্রকল্পে চাকুরী করতো। গত ইং ২৪ মার্চ দুপুর আনুমানিক ১ টার সময় ভিকটিম নিজ বাড়ি খুলনায় থাকাকালীন রফিকুল ইসলাম চৌধুরী, মুল্লুক চাঁন ও সঞ্জয় চৌধুরী ভিকটিমের নিকট টাকা পাবে অজুহাতে তাদের নির্দেশে কয়েকজন ব্যক্তি ভিকটিমকে জোরপূর্বক খুলনা হতে যশোরে তুলে নিয়ে আসে। ভিকটিমের মা আরো জানায়, ইং ২৫ মার্চ আনুমানিক রাত ৯ টায় রফিকুল ইসলাম চৌধুরী,মুল্লুক চাঁন ভিকটিমের মার মোবাইল ফোনে কল দিয়ে বলেছে যে, ‘‘ঢাকা বসুন্ধরা আবাসিকের কাজ করাকালীন সময় ভিকটিম বায়েজীদ হাসান তাদের ০৫ লক্ষ টাকা চুরি করেছে। সেই টাকা ফেরত দিয়ে আপনার ছেলেকে নিয়ে যান, অন্যথায় যতক্ষণ টাকা না দিবেন ততক্ষণ আপনার ছেলেকে মারধর করা হবে।’এ সময় ভিকটিমের সাথে তার মাকে মোবাইল ফোনে কথা বলতে দেওয়া হয়েছে এবং ভিকটিমকে শারীরিক নির্যাতন করায় ভিকটিমের ডাক চিৎকার মোবাইল ফোনে শুনতে পেয়েছেন। পরবর্তীতে আইনশৃংখলা বাহিনীর মাধ্যমে ভিকটিমের পরিবারকে অবহিত করলে, ভিকটিমের মা বাদী হয়ে যশোর জেলার কোতয়ালী মডেল থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।যার মামলা নং -৯৫, তারিখ- ২৫/০৩/২০২৪।
র্যাব-৬, যশোর কোম্পানি কমান্ডার অধিনায়ক মোঃ সাকিব হোসেন জানান, গোপন সূত্র ও উন্নত তথ্য প্রযুক্তির মাধ্যমে ২৭ মার্চ গভীর রাতে জানতে পারে যে, চাঞ্চল্যকর এই হত্যা মামলার ৪নং আসামী ঝিকরগাছা থানাধীন গদখালী নবীনগর গ্রামের আবুল কাশেমের পুত্র মোঃ রাজু আহম্মেদ (৩৫)এবং ৫নং আসামী কতয়ালী মডেল থানাধীন লেবুতলা খাইরুলের পুত্র মোঃ আব্দুর রহমান ওরফে রাজন (৩৪) এবং ডিএমপি ঢাকার ভাটারা থানাধীন ঢালীবাড়ী এলাকায় আত্মগোপনে আছে।এমন তথ্যোর ভিত্তিতে র্যাব-৬, যশোর ও র্যাব-১, উত্তরার একটি যৌথ আভিযানিক দল ২৮ মার্চ ভোরে উক্ত এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে বায়েজীদ হাসান হত্যা মামলার আসামী মোঃ রাজু আহম্মেদ, মোঃ আব্দুর রহমান গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়। এছাড়াও হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত অন্যান্য পলাতক আসামীদের গ্রেফতারে র্যাব-৬, যশোর এর অভিযান অব্যাহত থাকবে।গ্রেফতারকৃত আসামীদ্বয়কে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, রফিকুল ইসলাম চৌধুরী,মুল্লুক চাঁন ও সঞ্জয় চৌধুরীর নির্দেশে ঢাকা বসুন্ধরা আবাসিকের এম ব্লকে বিল্ডিং নির্মাণ প্রকল্পের কন্ট্রাক্টর মোঃ শহিদুল ইসলাম (৪৫) সহ অত্র মামলার অন্যান্য পলাতক আসামীরা গত ২৪ মার্চ ভিকটিম বায়েজীদ হাসানের নিকট টাকা পাওয়ার অজুহাত দেখিয়ে ভিকটিমকে তার নিজ বাড়ি খুলনা থেকে তুলে নিয়ে আসে এবং যশোর বড়বাজারে অবস্থিত রফিকুল ইসলাম চৌধুরী,মুল্লুক চাঁন এর চাউলের গোডাউনে আটকে রাখে। ভিকটিমকে উক্ত গোডাউনে আটক রেখে প্রধান আসামী রফিকুল ইসলাম চৌধুরী, মুল্লুক চাঁন (৫৬), সঞ্জয় চৌধুরী (৫২) ও শহিদুল ইসলাম (৪৫) এবং গ্রেফতারকৃত আসামীদ্বয় সহ অন্যান্য আসামীরা মিলে শারীরিক নির্যাতন করে হত্যা করে।পরবর্তীতে গ্রেফতারকৃত আসামীদেরকে যশোর জেলার কোতয়ালী মডেল থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।