জাতীয় পার্টির (জাপা) প্রতিষ্ঠাতা হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের মৃত্যুর বছর পার না হতেই বেহাল দশা দলটির। পারিবারিক নেতৃত্বের কোন্দল আর যোগ্য নেতৃত্বের অভাবে দলটির এখন টিকে থাকা দায়।
নেতাকর্মীরা বলছেন, বর্তমানে দলের ৯০ শতাংশ নেতাকর্মীই নিষ্ক্রিয়। তাদের অনেককেই আর জাতীয় পার্টির রাজনীতিতে দেখা যাবে না। নেতৃত্বের অভাবে বড় একটি অংশ দলছুটও হতে পারেন। এ অবস্থায় বর্তমান নেতৃত্বের মাধ্যমে রাজনীতিতে টিকে থাকা সম্ভব নয়।
গত বছরের ১৪ জুলাই মারা যান জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। তার প্রয়াণের পর থেকেই দলের সাংগঠনিক ভঙ্গুর দশার চিত্র বেরিয়ে আসতে থাকে। এরশাদের ‘চল্লিশা’র আয়োজনের অব্যবস্থাপনা থেকে এর শুরু। কিছুদিন পরই দলের নেতৃত্ব নিয়ে শুরু হয় সংকট। এরশাদের স্ত্রী রওশন এরশাদ আর ছোট ভাই গোলাম মোহাম্মদ (জি এম) কাদেরের মধ্যে দ্বন্দ্বের একপর্যায়ে দলের মধ্যে ভাঙন স্পষ্ট হয়ে ওঠে। শেষ পর্যন্ত রওশন এরশাদ সংসদের বিরোধী দলীয় নেতা আর জি এম কাদের পার্টির চেয়ারম্যান পদ মেনে নিতে সম্মত হলে ভাঙন ঠেকে। তবে সাংগঠনিকভাবে দলটি আর ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি।
দলের একাধিক নেতা জানান, দলের শীর্ষ নেতৃত্বের সঙ্গে মাঠ পর্যায়ের নেতাকর্মীদের কোনো যোগাযোগ নেই। এরশাদ জীবিত থাকাকালে তৃণমূলের নেতাকর্মীদের সঙ্গেও তার নিবিড় যোগাযোগ ছিল। কিন্তু পার্টির বর্তমান চেয়ারম্যানের সঙ্গে তেমন যোগাযোগ কারো নেই। নেতাকর্মীদের নিয়ে চেয়ারম্যান চিন্তাভাবনা করেন না বলেও অভিযোগ অনেকের।
জানা গেছে, দলের ২২ জন এমপি ও চার জন সংরক্ষিত আসনের এমপির কেউ সাংগঠনিক দায়িত্ব নিতে চান না। তাদের সঙ্গেও নেতাকর্মীদের দূরত্ব রয়েছে। তারা বিরোধী দলীয় এমপি হিসেবে সুযোগ-সুবিধা নিয়েই থাকতে পছন্দ করেন। অভিযোগ আছে, আসন ভাগাভাগি আর মনোনয়নের চক্করে নেতাকর্মীদের সঙ্গে পার্টির চেয়ারম্যান-মহাসচিবও যোগাযোগ রাখেন না। তারা দল বা দেশ নিয়েও ভাবেন না। ফলে দেশব্যাপী করোনাভাইরাস মহামারি চললেও জাতীয় পার্টি কোনো ভূমিকাই রাখতে পারছেন না।
এদিকে, রওশন এরশাদ ও জি এম কাদেরের মধ্যে নেতৃত্ব নিয়ে যে দ্বন্দ্ব ছিল, তা পুরোপুরি কাটেনি। দলের নেতাকর্মীরা বলছেন, দলের শীর্ষ এই দুই নেতা দলের মধ্যে নিজ নিজ বলয়ের মধ্যেই থাকেন। তাদের সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন মহাসচিব মশিউর রহমান রাঙ্গাও। তিনিও নিজের মতো করে একটি বলয় নিয়ে চলেন। এতে করে সাধারণ নেতাকর্মীরা নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়ছেন। বর্তমান পরিস্থিতির মতো জাতীয় পার্টি ‘ধুঁকে ধুঁকে’ কতদিন চলবে, তা নিয়েই এখন শঙ্কা অনেকের।