ডেস্ক রিপোটঃ জাতীয় সংসদে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য ‘অনভিপ্রেত ও রাজনৈতিক শালীনতা বিবর্জিত’ বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। রোববার রাজধানীর উত্তরার বাসা থেকে এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি মহাসচিব এ মন্তব্য করেন।
শনিবার সংসদে বাজেট অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেয়া সমাপনী বক্তব্যে মরহুম রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান ও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে নিয়ে মন্তব্যের প্রতিক্রিয়া জানাতে ও দলের স্থায়ী কমিটির বৈঠকের সিদ্ধান্ত জানাতে এ সংবাদ সম্মেলন করেন বিএনপি মহাসচিব। শনিবার দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সভাপতিত্বে বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সভায় কিছু গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
সংবাদ সম্মেলন মির্জা ফখরুল বলেন, শনিবার সংসদে সংসদ নেতা হিসেবে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য ‘অনভিপ্রেত ও রাজনৈতিক শালীনতা বিবর্জিত।’ তিনি বলেন, ‘দুর্ভাগ্যজনকভাবে এটা রুচিহীন ও কল্পকাহিনী ছাড়া আর কিছুই নয়। সংসদ নেতা তার মনগড়া কল্পকাহিনীর মধ্য দিয়ে একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা, গণতন্ত্রের আপসহীন নেত্রী ও জনগণের আস্থাভাজন প্রিয় নেতাকে হেয় প্রতিপন্ন করতে চেয়েছেন। এই ধরনের বক্তব্য সংসদ নেতার কাছ থেকে জাতি আশা করে না। এটা সমস্ত জাতিকে হতাশ ও ক্ষুব্ধ করেছে। এই ধরনের বক্তব্যের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। আমরা মনে করি, সংসদ নেতার এই ধরনের মন্তব্য খারাপ নজির স্থাপন করেছে।’
সংসদে আইনমন্ত্রীর বক্তব্য প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘বেগম খালেদা জিয়ার বিদেশে চিকিৎসা প্রসঙ্গে সংসদে আইনমন্ত্রীর ঊদ্ধাত্যপূর্ণ শালীনতা বিবর্জিত বক্তব্যে বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সভায় তীব্র নিন্দা ও ক্ষোভ জানানো হয়। সভা মনে করে, শুধুমাত্র রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে বেগম জিয়াকে সাজানো মিথ্যা মামলায় সাজা দেয়া হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে সাংবিধানিক ও প্রচলিত আইনের ব্যতিক্রম ঘটিয়ে রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করে সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও সবচেয়ে জনপ্রিয় নেত্রীকে তার নাগরিক অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে। রাজনৈতিক প্রতিহিংসার বশবর্তী হয়ে তার প্রাপ্য জামিন পর্যন্ত তাকে দেয়া হয়নি। অথচ একই ধরনের মামলায় অন্যান্য প্রায় সকল অভিযুক্তের জামিন দেয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, বেগম জিয়ার পরিবারের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে তার বাসভবনে সাময়িকভাবে স্থানান্তরের যে নির্দেশ দেয়া হয়েছে তা প্রশাসনিক নির্দেশ। আইনের কোথাও একথা বলা হয়নি যে সরকার তাকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে যেতে দিতে পারবেন না। যেখানে খুনের মামলায়, ফাঁসির সাজাপ্রাপ্ত আসামি অথবা আজীবন দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি মুক্তি নিয়ে বিদেশে যেতে পারে, সেখানে এদেশের স্বাধীনতা ও গণতন্ত্রেরর জন্য যিনি আজীবন সংগ্রাম করেছেন, জনগণের ভোটে অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনে নির্বাচিত তিনবার প্রধানমন্ত্রী ও দু’বার বিরোধী দলীয় নেতা ছিলেন, তাকে মানবিক কারণে চিকিৎসার জন্য দেশের বাইরে উন্নত চিকিৎসার সুযোগ দেয়া যাবে না- এটা কোনো মতেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না।
এক প্রশ্নের জবাবে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘সরকারের যে নির্দেশ ও যে আইনের বলে নির্দেশ দিয়েছে, ওই নির্দেশে আবার তাকে নতুন নির্দেশে বিদেশে পাঠানোর ব্যবস্থা করতে পারে। আসলে তারা (সরকার) নিজেদের ক্ষমতা নিজেরাই খর্ব করছে। এর একমাত্র উদ্দেশ্যে বেগম খালেদা জিয়ার সাথে একটা বৈরী মনোভাব প্রদর্শন করা। তার সাথে প্রতিহিংসামূলকভাবে এই ব্যবস্থাটা তারা করেছে।
ফখরুল বলেন, বিএনপির স্থায়ী কমিটির মনে করে, সরকার নেতিবাচক মনোভাব পরিহার করে দেশের জনগণের প্রিয়নেতা ও সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে দেশের বাইরে উন্নত চিকিৎসার সকল ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সরকার উদ্যোগ নেবে।