মহামারী করোনা ভাইরাস অতি সহজে ছড়িয়ে পড়ে মানুষের শরীরে। তাই হ্যান্ডশেক করতে না করা হচ্ছে। মাস্ক পরতে বলা হচ্ছে সবাইকে। কারণ অন্যের হাঁচি-কাশির ড্রপলেটস যেন নিশ্বাসে না মেশে। বাতাসেও ছড়ায় করোনা। তাই বলা হচ্ছে, একে অন্যের থেকে সামাজিক দূরত্ব বাড়ান।
এবার জানা গেল, প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাস পানির মাধ্যমেও ছড়াতে পারে। সম্প্রতি ‘নেচার’ পত্রিকায় প্রকাশিত একটি রিপোর্টে তেমনটাই জানানো হয়েছে। গবেষণায় জানা গেছে, ময়লা বা অন্যের ব্যবহার করা পানিতে বেশ ভালো মতো বেঁচে থাকে সার্স-কভ-২।
নেদারল্যান্ডসের কেডব্লুআর ওয়াটার রিসার্চ ইন্সটিটিউটের পক্ষ থেকে এক গবেষক লিখেছেন, সুইডেন, নেদারল্যান্ডস এবং আমেরিকার মতো দেশে যেখানে প্রায় দশ লক্ষের কাছাকাছি মানুষের বাস, সেই এলাকার পানির স্যাম্পল ফাইল করে গবেষণা চালানো হয়। প্রতিদিনের হাতমুখ ধোয়ার পর ব্যবহৃত পানি, শৌচকাজের পানিতে কভিড-১৯ সংক্রমণের ভয় রয়েছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতো আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোও বলছে, করোনা ভাইরাস বাতাসবাহিত হতে পারে। তাই ছ’ফুট নয়, দরকার ১৩ ফুটের দূরত্ব। কারণ হাঁচির সঙ্গে বের হওয়া ড্রপলেটস বাতাসে ভেসে থাকে বেশ কিছুক্ষণ এবং তারপর মাটিতে পড়ে। ভাইরাস জুতার সঙ্গে ঘরে ঘরে পৌঁছচ্ছে। তাতেই যা ক্ষতি করার করে দিচ্ছে করোনা। এতটাই শক্তি এই করোনার। এমন একটা সময় করোনা ‘পানিবাহিত’ বললে চিন্তাই বাড়ে।
ভারতের ইমিউনোলজি বিভাগের সায়েন্টিস্ট অধ্যাপক ড. শুভজিৎ বিশ্বাসও বললেন, ব্যবহার করা পানির মাধ্যমে কভিড-১৯ সংক্রমিত হতে পারে। ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় গোষ্ঠী সংক্রমণের সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যায় না। তার কথায়, কভিড সংক্রমিত মানুষের মল থেকেও ছড়াতে পারে এই রোগ। যদিও সংক্রমণের শতকরা হার পরীক্ষা সাপেক্ষ।
ই-লাইফের সাম্প্রতিক গবেষণায় জানা গেছে, কভিড পজিটিভ ব্যক্তির এক গ্রাম মলে রয়েছে কভিডের ১০০ মিলিয়ন আরএনএ। সংখ্যাটা কিন্তু কোনো অংশে কম নয়। ড্রেনের পানিতে মিশে থাকা সংক্রমিত রোগীর মল যে কতো জনকে সংক্রমিত করতে পারে, তা কেউ জানেন না। এই ক্ষেত্রে আরো গবেষণার দরকার। শুভজিৎ আরো জানান, জ্বর-সর্দি-গলাব্যথা সঙ্গে পেটখারাপও কিন্তু একটা বড় লক্ষণ কভিড সংক্রমণের।
এমন পরিস্থিতিতে ভারতের খ্যাতনামা প্রবীণ ভাইরোলজিস্ট ডা. অমিতাভ নন্দী বলছেন, নিজের সঙ্গে সঙ্গে বাড়ির আশপাশটা পরিষ্কার রাখুন। ব্যবহার করা পানি জমতে দেবেন না। নোংরা পরিবেশে যেমন থাকতে পারে করোনা ভাইরাস, তেমনই কভিড থাকতে পারে মলদ্বারেও। তাই শৌচকর্মের সময় শুধু হাত সাবান দিয়ে ধুয়ে ছেড়ে দেবেন না। জীবাণুনাশক লিকুইড সোপ দিয়ে পরিষ্কার করুন। নাহলে জামাকাপড় বা বসার জায়গা থেকেও সংক্রমণ ঘটতে পারে।