সুনামগঞ্জের ছাতকে উত্তর খুরমা ইউনিয়নের নাদামপুর গ্রামে বাবা-মায়ের কবরের পাশে চিরনিদ্রায় শায়িত হলেন ‘গরিবের ডাক্তার’ খ্যাত করোনাযুদ্ধে প্রথম মারা যাওয়া চিকিৎসক ডা. মঈন উদ্দিন।
বুধবার (১৫ এপ্রিল) রাত সাড়ে আটটায় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বিধিমালা অনুসরণ করে জানাজা শেষে তার দাফন সম্পন্ন হয়। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ইউএনও গোলাম কবির।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন, সহকারী কমিশনার (ভূমি) তাপশ শীল, ওসি মোস্তফা কামাল, খছরুজ্জামান, ইউপি চেয়ারম্যান বিল্লাল আহমদ, ইবনে সিনা কামরুল ইসলাম প্রমুখ।
কঠোর নিরাপত্তার সাথে কবরস্থানের পাশেই তার জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। করোনাযুদ্ধে প্রথম মৃত্যুবরণকারী চিকিৎসকের জানাজার নামাজে ইমামতি করেছেন পোষ্টার মাস্টার ইসরাইল আহমদ। জানাজায়; একটু দূর থেকে ২০/২৫ জন স্বজন উপস্থিত হন।
এছাড়া ১৪ দিন হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকার শর্তে পিপিই পরিয়ে তার ছয় স্বজনকে দাফন কার্যক্রমে অংশ নেওয়ার সুযোগ দেওয়া হয় বলে জানা গেছে।
এর আগে রাত সাড়ে ৭টার দিকে অ্যাম্বুলেন্সযোগে রাজধানীর কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল থেকে তার মরদেহ গ্রামে নেওয়া হয়।
করোনায় মৃত চিকিৎসকের ভগ্নীপতি জানান, প্রথমে ঢাকায় দাফন করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হলে পরিবারের ইচ্ছায় সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে অবশেষে তার গ্রামের বাড়িতে লাশ দাফন করা হয়।
তিনি আরো জানান, ঢাকার লাশ দাফনকারী প্রতিষ্ঠান আঞ্জুমান মুফিদুল ইসলামের পক্ষ থেকে ডাক্তার মঈন উদ্দিনকে গোসল দেয়া এবং মরদেহে কাফন পরানো হয়েছে।
সিলেটে করোনা আক্রান্ত প্রথম রোগী ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডাক্তার মঈন উদ্দিন বুধবার (১৫ এপ্রিল) ভোর সাড়ে ৪টার দিকে রাজধানীর কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। এর আগে গত ৫ এপ্রিল তার করোনা পজিটিভ শনাক্ত হয়। এরপর তিনি বাসায় কোয়ারেন্টাইনে থেকে চিকিৎসা নিচ্ছিলেন।
তবে ৭ এপ্রিল তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে নগরীর শহীদ শামসুদ্দিন আহমদ হাসপাতালেv করোনা আইসোলেশন সেন্টারে নেওয়া হয়। সেখানে প্রথমে তাকে আইসিইউতে রাখা হয়েছিল। পরদিন ৮ এপ্রিল অবস্থার অবনতি হলে পরিবারের সিদ্ধান্তে তাকে ঢাকায় স্থানান্তর করা হয়। শারীরিক অবস্থার আরো অবনতি হলে সোমবার (১৩ এপ্রিল) হাসপাতালে তাকে লাইফ সাপোর্টে রাখা। লাইফ সাপোর্টে থাকাকালীন বুধবার ভোড়ে মারা যান।
ডাক্তার মঈন উদ্দিন সিলেটের ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসক ছিলেন। সিলেটে করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ টিমের সদস্য ডা. মো. মঈন উদ্দিন ছিলেন একজন মেধাবী চিকিৎসক। তিনি মেডিসিনের পাশাপাশি কার্ডিলজিরও চিকিৎসক ছিলেন।
ছাতক উপজেলার উত্তর খুরমা ইউনিয়নের নাদাম পুর গ্রামে মৃত মুন্সি সিদ্দিক আলীর পুত্র ডাক্তার মইন উদ্দিন । ১৯৭৩ সালে ১ মার্চ তার জন্ম। প্রথম তার গ্রামে পাঠশালা থেকে লেখাপড়া শুরু করেন। পরে নতুনবাজার (ধারন) উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাশ করার পর সিলেটের সেরাবিদ্যাপিট এমসি কলেজ থেকে এইচ এস সি পাশ করেন। পরে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ থেকে এমবিবিএস (ডিএমসি) বিসিএস (স্বাস্থ্য) এফসিপিপিএস (মেডিসিন) এমডি ( কার্ডিওলজি) পাশ করেছেন। প্রথম ডাক্তার হিসেবে তার নিজ উপজেলার সদর হাসপাতালে মেডিক্যাল অফিসার পদে যোগদান করেছেন ২০০১ সালে। এরপর প্রথম চেম্বার শুরু করেন গোবিন্দগঞ্জ জননী ফার্মেন্সিতে। এখানে শ’শ’রোগীদের দেখতেন বিনা টাকায়। কখনো এলাকার লোকজনদের কাছ থেকে ভিজিট নিতে না।
দুই সন্তানের জনক ডা. মঈনের স্ত্রী ডা. রিফাত জাহান সিলেটের পার্ক ভিউ মেডিকেল কলেজের ফিজিওলজি বিভাগের চেয়ারম্যান।