শিক্ষার্থী-ব্যবসায়ী সংঘর্ষ
নিজস্ব প্রতিবেদক : রাজধানীর নিউমার্কেট এলাকায় ও ঢাকা কলেজের সামনের এলাকায় শিক্ষার্থী ও ব্যবসায়ীদের মধ্যে আবারো সংঘর্ষ চলছে। এ সংঘর্ষে ৩ সাংবাদিকসহ আহত হয়েছে অর্ধশতাধিক। মঙ্গলবার সকালে ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীরা নিউমার্কেট এলাকায় বিক্ষোভ করতে এলে কিছু সময়ের মধ্যে উত্তেজনাকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। শুরু হয় ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া, সংঘর্ষ। এ সংঘর্ষের ফলে মিরপুর রোডে যান চলাচল বন্ধ রয়েছে।
ঘটনাস্থলে অনেককে হেলমেট পরে হাতে লাঠি নিয়ে সংঘর্ষে জড়াতে দেখা গেছে। ঢাকা কলেজের পাশাপাশি সাত কলেজের অনেক শিক্ষার্থীও এ সংঘর্ষে যোগ দিয়েছে। তারা মার্কেটের বন্ধ দোকানগুলো লক্ষ্য করে ইট ছুঁড়তে থাকে। ইটের আঘাতে বেশ কয়েকজনকে আহত হয়েছেন বলে জানা গেছে।
অনেক শিক্ষার্থী লাঠি হাতে মার্কেটে দোকান খুলতে আসা ব্যবসায়ীদের ধাওয়া করছে। বন্ধ নিউমার্কেটের গেটে থেমে থেমে চলছে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া।
এদিকে বিক্ষোভের জেরে নীলক্ষেত-নিউমার্কেট-ধানমন্ডি রোডে ব্যাহত হচ্ছে যান চলাচল। এর আশপাশের এলাকায় দেখা দিয়েছে যানজট।
এর আগে সোমবার রাত ১১টার দিকে রাজধানীতে নিউ মার্কেটের ব্যবসায়ী ও ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীদের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়। এ সংঘর্ষে নিউমার্কেট এলাকা পরিণত হয় রণক্ষেত্রে। প্রায় ৩ ঘন্টা চেষ্টার পর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এসময় পুলিশসহ উভয়পক্ষের অন্তত অর্ধশত লোক আহত হয়।
শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, সকালে বিনা উস্কানিতে ব্যবসায়ীরা রাজধানীর বিভিন্ন জায়গা থেকে ভাড়াটে গু-া টোকাইদের একত্রিত করে নিউমার্কেট এলাকায়। পরে তারা দেশীয় অস্ত্র নিয়ে অতর্কিতভাবে আমাদের ক্যাম্পাসে হামলা করে। তাদের দেশীয় অস্ত্র ইটপাটকেলের আঘাতে একাধিক শিক্ষার্থী আহত হয়। এদের কয়েকজনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
ব্যবসায়ী সমিতি কামরাঙ্গীরচর থেকে আনা টোকাইদের দিয়ে হামলা করাচ্ছে। শিক্ষকরা সমঝোতার জন্য গেলেও তাদের উপর হামলা হয়েছে। সংঘর্ষে পুলিশের ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ। পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ না করে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে মিলে ঢাকা কলেজ শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা করছে। এসব অভিযোগ ছাত্রদের।
নিউমার্কেটের ব্যবসায়ী ও ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনায় দায়ী ব্যক্তিদের আইনের আওতায় আনা হবে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। দ্রুতই পরিস্থিতি শান্ত হয়ে যাবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
দুপুরে আসন্ন ঈদুল ফিতর উপলক্ষে সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি পর্যালোচনা, গার্মেন্টস শ্রমিকদের বেতন-ভাতা পরিশোধ, সড়ক মহাসড়ক নিরাপদ ও যানজটমুক্ত রাখাসহ প্রাসঙ্গিক অন্যান্য বিষয় নিয়ে সভাশেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী একথা বলেন।
ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থী ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে সংঘর্ষের বিষয়ে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেছেন, দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী একটি গোষ্ঠী সাম্প্রদায়িক উস্কানি দিচ্ছে। তবে এটি কোনো অবস্থায় সফল হবে না। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সাম্প্রদায়িকতার কোনো সুযোগ নেই। চাঁদপুর সার্কিট হাউজে উপস্থিত সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন শিক্ষামন্ত্রী।
তিনি আরও বলেন, নানা ইস্যু তৈরি করে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এমন অস্থিতিশীল পরিবেশ করেও যখন সফল হচ্ছে না, তখন আবারো নতুন নতুন পথ তৈরি করছে তারা। এতে সজাগ রয়েছেন দেশের মানুষ এবং শিক্ষক সমাজও।
শিক্ষামন্ত্রী বলেন, দেশে অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরি করে এ সরকার আমলে কেউ সফল হওয়ার স্বপ্ন দেখা দিবাস্বপ্ন ছাড়া আর কিছুই না। তবে ঢাকা কলেজে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ব্যবসায়ীদের মারামারি নিয়ে এ মুহূর্তে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি শিক্ষামন্ত্রী।
ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থী ও নিউ মার্কেটের ব্যবসায়ীদের সংঘর্ষের কারণে শহরজুড়ে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। এতে ভোগান্তিতে পড়েছেন পথচারীরা। মিরপুর, ফার্মগেট, এলিফ্যান্ট রোডে যানবাহন চলাচলে স্থবিরতা দেখা যায়। সকাল থেকেই রাজধানীজুড়ে এই অচলাবস্থা দেখা দেয়।
একাধিক পথচারী জানান, রাস্তায় গাড়ি চলাচল করতে না পারায় পায়ে হেঁটেই গন্তব্যে যেতে হচ্ছে বলে জানান তারা।
নিউমার্কেট এলাকায় ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থী ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে সংঘর্ষের ঘটনায় ৩৫ শিক্ষার্থী আহত হয়েছে। ঢাকা কলেজ শিক্ষক পরিষদের সম্পাদক ড. মো. আবদুল কুদ্দুস সিকদার এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
তিনি বলেন, সোমবার থেকে এ পর্যন্ত সংঘর্ষের ঘটনায় কলেজের অন্তত ৩৫ শিক্ষার্থী আহত হয়েছে। ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে নিউমার্কেটের ব্যবসায়ীদের সংষর্ষে আহত হয়েছেন ঢাকা কলেজ ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের শিক্ষক নূরুন নাহার। দুপুর ১২টার দিকে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে গিয়ে আহত হন তিনি। পরে তাকে হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
জানা গেছে, সোমবার থেকে চলমান পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করতে ঢাকা কলেজের শিক্ষকদের একটি প্রতিনিধি দল নিউ মার্কেটের দিকে রওয়ানা দেন। কিন্তু নিউমার্কেট এলাকায় প্রবেশ করার আগেই তাদের দেখে উত্তেজিত হয়ে ওঠেন ব্যবসায়ীরা। তারা শিক্ষকদের ওপর ইটপাটকেল নিক্ষেপ করতে থাকেন, নিউমার্কেটের বিভিন্ন ভবন ও রাস্তা থেকে। এতে ঢাকা কলেজ ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের শিক্ষক নূরুন নাহারসহ অনেক শিক্ষক আহত হয়েছেন বলে অভিযোগ করেন শিক্ষার্থীরা।
ব্যবসায়ী ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষের মধ্যে দুপুরে নূরজাহান মার্কেট ও চন্দ্রিমা সুপার মার্কেটে আগুন দিয়েছে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা। আগুন লাগার খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে ফায়ার সার্ভিসের দুটি ইউনিট কাজ করে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।
এদিকে নূরজাহান ও চন্দ্রিমা সুপার মার্কেটে আগুন দেওয়ার খবরে ব্যবসায়ীরা ফের বিক্ষুব্ধ হয়ে ইটপাটকেল নিক্ষেপ শুরু করে। পুলিশও শিক্ষার্থীদের ছত্রভঙ্গ করতে কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ করে। ঢাকা কলেজ, নূরজাহান মার্কেটের অংশ টিয়ার শেল ও কাঁদানে গ্যাসে বিক্ষোভকারীদের সরিয়ে দেয় পুলিশ। টিয়ার শেল ও কাঁদানে গ্যাসে টিকতে না পেরে দৌড়ে সরে যেতে দেখা যায় শিক্ষার্থীদের।
নিউমার্কেট ব্যবসায়ী ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে সংঘর্ষের খবর সংগ্রহ করতে আসা সাংবাদিকদের পিটিয়েছে মার্কেটের দোকান কর্মচারীরা। তাদের অভিযোগ, ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ব্যবসায়ীদের সংঘর্ষ নিয়ে সত্য তথ্য প্রকাশ করছেন না সাংবাদিকেরা। বিভিন্ন ইলেকট্রনিক গণমাধ্যমের অন্তত তিনজন সাংবাদিক ও ক্যামেরাপারসনকে মারপিট করে দোকানকর্মীরা। এদের মধ্যে বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল সময় টিভি ও এসএ টিভির দুই সাংবাদিক রয়েছেন।
সময় টিভির সাংবাদিককে নিউমার্কেট থেকে নীলক্ষেত মোড়ে এনে মারধর করেন দোকানকর্মীরা। এসএ টিভির ওই ক্যামেরাপারসনের মাথা ফেটে গেছে। দোকানকর্মীদের বিরুদ্ধে হামলার অভিযোগ করায় তাকে ‘ভুয়া ভুয়া’ বলে তাড়িয়ে দেন দোকানকর্মীরা।
দুই পক্ষ ইট-দেশীয় অস্ত্র নিয়ে মুখোমুখি : সকালে ফের সংঘর্ষে জড়িয়েছে নিউ মার্কেটের ব্যবসায়ীরা এবং ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীরা। এতে ওই এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, উভয়পক্ষের মধ্যে ইটপাটকেল ছোড়াছুড়ি চলছে। তারা লাঠিসোঁটা ও দেশীয় অস্ত্র নিয়ে মুখোমুখি অবস্থান করছে। কিছুক্ষণ পর পর ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে।
ব্যবসায়ীদের একটি অংশ রাস্তায় নেমে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে চলা সংঘর্ষে অংশে নিচ্ছে। আরেকটি অংশ ইট, পাথর সরবরাহ করছে। তবে এখন পর্যন্ত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশের পক্ষ থেকে কোনও ব্যবস্থা নিতে দেখা যায়নি।
এর আগে ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীরা মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে লাঠি, রড হাতে সড়কে নেমে এসে ঢিল ছুড়তে শুরু করে। এ সময় ব্যবসায়ীরাও বেরিয়ে এলে সংঘর্ষ শুরু হয়।
তার আগে রাতের সংঘর্ষের জেরে এদিন সকাল থেকেই সায়েন্সল্যাব থেকে নীলক্ষেত পর্যন্ত রাস্তা অবরোধ করে রাখে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। এর ফলে ওই রোডে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।