বাণিজ্য ডেস্ক রাশিয়া গত বছর ইউক্রেনে আক্রমণ করার পরপরই দেশটির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে পশ্চিমা বিশ্ব। পশ্চিমা বিশ্ব তথা ইউরোপের বিভিন্ন দেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের সরকারি নিষেধাজ্ঞার পাশাপাশি ক্রেতারাও যেন রাশিয়ান সোনাকে এড়িয়ে চলতে শুরু করে। এতে রুশ সোনার বাজার হয়ে ওঠে সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইউএই), হংকং ও তুরস্ক। অর্থাৎ রুশ সোনার রপ্তানি গন্তব্য হয়ে ওঠে এই তিনটি দেশ। আর ক্রেতারাও সোনা কিনতে ইউএই, হংকং ও তুরস্কের বাজারকে বেছে নেন। শিল্পোন্নত সাত দেশের রাজনৈতিক জোট গ্রুপ অব সেভেন (জি–৭) এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) গত বছর রাশিয়ার সোনা আমদানি নিষিদ্ধ করে। একই সঙ্গে এসব দেশে অবস্থিত কোম্পানিগুলোকেও রাশিয়ার সোনা কেনাবেচা করা থেকে বিরত থাকতে বলে। জি-৭ ফোরামের দেশগুলো হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা, ফ্রান্স, জাপান, জার্মানি ও ইতালি। অন্যদিকে ইইউ হচ্ছে ইউরোপের ২৭টি দেশের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক জোট। রাশিয়ায় বছরে ২০ বিলিয়ন বা ২ হাজার কোটি ডলার মূল্যের সোনা উত্তোলিত হয়। কিন্তু দেশটির অভ্যন্তরীণ বাজারে এত সোনা বিক্রি হয় না। ফলে বিদেশি ক্রেতারাই দেশটির বড় ভরসা। জেপিমরগ্যান এবং হংকং অ্যান্ড সাংহাই ব্যাংকিং করপোরেশনের (এইচএসবিসি) মতো প্রতিষ্ঠানগুলো ছিল রুশ সোনার ক্রেতা। কিন্তু ইউক্রেনে রাশিয়া অভিযান শুরু করার কারণে দেশটির ওপর পশ্চিমারা নিষেধাজ্ঞা আরোপ করায় তাদের সোনার বাজারে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। ইমপোর্টজিনিয়াস থেকে কাস্টমস মানে শুল্ক বিভাগের তথ্য-উপাত্ত নিয়ে একটি আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম জানায়, গত বছরের আগস্ট থেকে ছয় মাসে প্রচুর পরিমাণ সোনা রাশিয়ায় ফেরত পাঠানো হয়েছে। এদিকে সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইউএই), হংকং, তুরস্ক প্রভৃতি দেশ থেকে ব্যবসায়ীরা এখনো রাশিয়ান সোনা কেনার অনুমতি পান। কারণ, এসব দেশ পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার আওতায় পড়ে না। এ রকম উদাহরণও এসেছে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে। যেমন হংকংয়ের ভিপাওয়ার ফাইন্যান্স সিকিউরিটি নামের একটি প্রতিষ্ঠান চীনা ব্যাংকের জন্য নগদ অর্থ ও সোনা স্থানান্তর করে থাকে। প্রতিষ্ঠানটি নতুন ক্রেতা হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। তারা ২০২২ সালের মার্চ থেকে আগস্ট পর্যন্ত চীনা ব্যাংকের জন্য ৩০০ মিলিয়ন বা ৩০ কোটি মার্কিন ডলারের বেশি মূল্যের রাশিয়ান সোনা কিনেছে। সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইউএই) ভিত্তিক কিছু ব্যবসায়ী ৫০০ মিলিয়ন বা ৫০ কোটি ডলারের বেশি মূল্যের সোনা কিনেছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য একটি প্রতিষ্ঠান হলো পালোমা প্রেশাস ডিএমসিসি, যারা রাশিয়া থেকে ইউএইতে ১০৯ মিলিয়ন বা ১০ কোটি ৯০ ডলারের সোনা আমদানি করেছে। ইমপোর্টজিনিয়াসের উপাত্ত অনুযায়ী তুরস্কের ইস্তাম্বুল বিমানবন্দর দিয়ে ৬ মাসে প্রায় ৩০৫ মিলিয়ন বা ৩০ কোটি ৫০ লাখ ডলার মূল্যের রাশিয়ান সোনা আমদানি হয়েছে। তবে রাশিয়া এখনো সোনা রপ্তানি বাড়িয়ে ইউক্রেনের সঙ্গে যুদ্ধে জড়ানোর আগের অবস্থায় নিয়ে যাওয়ার লক্ষ্যে চেষ্টা করে যাচ্ছে। যুদ্ধ শুরু হওয়ার আগে জেপিমরগ্যান ২০২২ সালের প্রথম দুই মাসে একাই রাশিয়া থেকে ১২০ কোটি ডলারের সোনা আমদানি করেছিল। যুদ্ধ শুরুর পর জেপিমরগ্যান রাশিয়া থেকে আর সোনা আমদানি করেনি।