বরিশাল প্রতিনিধিঃ বরিশাল সদর উপজেলা পরিষদ কম্পাউন্ডে ব্যানার অপসারণকে কেন্দ্র করে আনসার সদস্যদের ছোঁড়া গুলিতে আমি গুলিবিদ্ধ হয়নি। তবে আমাকে গুলি করা হয়েছে, আর সেগুলো আমার জ্যাকেটের কারণে শরীরের ভেতরে লাগেনি কিন্তু গায়ে প্রচণ্ড ব্যথা পেয়েছি। এ ঘটনায় আমি লজ্জিত, এর বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থাসহ ঘটনার জোড়ালো তদন্ত দাবি করছি। এ ঘটনায় সিটি করপোরেশন স্টাফদের কোন অপরাধ থাকে তাহলে আমি মেয়র হিসেবে মাথা পেতে নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর কাছে পদত্যাগপত্র জমা দেবো।
সংঘর্ষ ও গুলিবিদ্ধের ঘটনা পরিস্থিতি নিয়ে সাংবাদিকের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে এমনটাই বলেছেন বরিশাল সিটি করপোরেশন (বিসিসি) মেয়র ও মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ।
এর আগে মেয়রসহ অর্ধশত নেতাকর্মীরা গুলিবিদ্ধ হন বলে দাবি করেন বরিশাল জেলা ছাত্রলীগের সহ সভাপতি আতিকুল্লাহ মুনিম ও সাজ্জাদ সেরনিয়াবাত।
বুধবার (১৮ আগস্ট) দিবাগত রাত সাড়ে ১০টার দিকে নগরীর সি এন্ড বি রোডে এলাকার থানা কাউন্সিল (উপজেলা পরিষদ) কম্পাউন্ডে এ সংঘর্ষ, ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া, গুলিবর্ষণসহ গুলিবিদ্ধের ঘটনা ঘটে।
পুলিশ প্রশাসন, মাঠ প্রশাসন ও রাজনৈতিক নেতাদের সূত্রে জানা গেছে, মেয়র তার নিজ বাসায় সংবাদ সম্মেলন করে বলেন, নগরীর পরিস্কার করার স্বার্থে পুরোনো ব্যানার বা ভূইফোর সংগঠনের ব্যানারগুলো সরিয়ে ফেলতে স্টেটমেন্ট নিয়েছি। তারই ধারাবাহিকতায় বুধবার রাতে থানা কাউন্সিল (উপজেলা পরিষদ) কম্পাউন্ডে গিয়ে ব্যানার খোলার সময় বাঁধার মুখে পড়ে সিটি করপোরেশন স্টাফরা।
এরপর উপজেলা নিবার্হী অফিসার ( ইউএনও) মুনিবুর রহমানের সাথে সিটি করপোরেশন স্টাফ ও নেতাকর্মীদের বাকবিতন্ডা হয়। এক পর্যায়ে সিটি করপোরেশন স্টাফ ও নেতাকর্মীরা ক্ষিপ্ত হলে ইউএনও তার সরকারি বাসভবনে চলে যান। এসময় তার করোনার আক্রান্ত বাবা মাকে গালিগালাজ করে বাসভবনে হামলা চালানোর উদ্দেশ্যে নেতাকর্মীরা এগিয়ে গেলে ইউএনও’র নিরাপত্তার জন্য সশস্ত্র আনসার বাহিনীর সদস্যরা তাদেরকে গুলি করতে বাধ্য হয় বলে জানান ইউএনও মুনিবুর রহমান।
আর নেতাকর্মী ও সিটি করপোরেশন স্টাফরা বলছেন, তার বাসভবনে হামলার উদ্দেশ্যে নয়, রাতে ব্যানার খোলার জন্য গেলেই ইউএনও’র নির্দেশে আমাদের উপর গুলি ছোঁড়ে আনসার বাহিনীর সদস্যরা। এক পর্যায়ে ইউএনও নিজেই আমাদের উদ্দেশ্য করে গুলি ছোঁড়েন।
খবর শুনে সিটি মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ ঘটনাস্থলে এসে তার পরিচয় দিলেও মেয়রের উপরে গুলি ছোঁড়েন আনসার বাহিনীর সদস্যরা। এতে কমপক্ষে ৩৫/৪০ গুলিবিদ্ধ ও আহত হন বলে জানান নেতাকর্মীরা। পরে সকলকে শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
পরে নেতাকর্মীরা বিক্ষুব্ধ হয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার বাসভবনের দিকে ইট পাটকেল ছোঁড়ে। উত্তপ্ত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে নেতাকর্মীদের ছত্রভঙ্গ করতে লাঠিচার্জ ও ফাঁকা গুলি ছোঁড়ায় ফের সংঘর্ষ হয় হয় পুলিশ ও নেতাকর্মীদের সাথে। এতে উভয় পক্ষের বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন।
সব মিলিয়ে পরিস্থিতি স্বাভাবিক ও সড়কে যানবাহন চলাচল করলেও ঘটনাস্থলে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে৷ এ ঘটনার পর থানা কাউন্সিলসহ আশপাশের এলাকায় আতঙ্ক বিরাজ করছে।
বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার এনামুল হক জানান, বুধবার রাতে ঘটনার পরপরই বরিশাল সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার যতটুকু আমাদেরকে জানিয়েছেন, তার বাসভবন এলাকায় কিছু লোক ব্যানার খুলতে আসে। কিন্তু সংরক্ষিত এলাকা হওয়ায় রাতের বেলা এভাবে ব্যানার খুলতে নিষেধ করেন তিনি। সেসময় আগত লোকদের সঙ্গে বাকবিতন্ডা হয় এবং তারা নির্বাহী কর্মকর্তার নিষেধ অমান্য করে বাসভবনে প্রবেশ করতে উদ্যত হন। এসময় নিরাপত্তার খাতিরে দায়িত্বরত আনসার বাহিনী গুলি ছোঁড়ে।
পরে খবর পেয়ে পুলিশের সদস্যরা ঘটনাস্থলে এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করে। সেসময় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার বাসভবনের দিকে কিছু লোক এগিয়ে গেলে তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেওয়া হয়। এসময় একাধিক পুলিশ সদস্য আহত হয়। এছাড়া ইউএনও দাবি করেছেন তার বাসভবনে দায়িত্বরত কয়েকজন আনসার সদস্যও আহত হয়েছে।