নিজস্ব প্রতিবেদকঃ করোনাকালে জাতীয় চিড়িয়াখানায় প্রায় সব ধরনের বন্যপ্রাণীর প্রজনন বৃদ্ধি পেয়েছে। গত এক বছরে চিত্রা হরিণ, রয়েল বেঙ্গল টাইগার, জিরাফ, ময়ূর, জেব্রা, জলহস্তীসহ বেশ কিছু প্রাণী চিড়িয়াখানার নির্ধারিত ধারণক্ষমতার বাইরে চলে গেছে। ফলে ধারণক্ষমতার বাড়তি প্রাণী বিক্রির পাশাপাশি তা পার্শ্ববর্তী প্রতিবেশী দেশের বিভিন্ন চিড়িয়াখানার সঙ্গে বিনিময়ের কথা ভাবছে ঢাকা চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ।
সূত্রে জানা গেছে, প্রাণীর প্রজনন হার বৃদ্ধির ফলে বেশ কিছু প্রাণী চিড়িয়াখানার ধারণক্ষমতার বাইরে চলে যাওয়ায় ইতোমধ্যে হরিণ ও ময়ূর বিক্রির কার্যক্রম চলছে। চিড়িয়াখানার তথ্যানুযায়ী এ পর্যন্ত প্রায় ১৬ লাখ টাকার ময়ূর ও ৪৬ লাখ টাকার চিত্রা হরিণ বিক্রি করা হয়েছে; যা এখনো চলমান আছে। এই দুই প্রজাতির প্রাণীর বাইরে বাকি বাড়তি প্রাণী বিক্রি করার অনুমোদন নেই। তবে সংখ্যায় বৃদ্ধি পাওয়া অন্য প্রাণীর ক্ষেত্রে বিকল্প ভাবছে চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ।
এ বিষয়ে জাতীয় চিড়িয়াখানা পরিচালক ডা. আবদুল লতীফ বলেন, ‘হরিণ ও ময়ূর ছাড়া অন্য যেসব প্রাণী ধারণক্ষমতার বাইরে আছে সেগুলো প্রতিবেশী বিভিন্ন দেশের সঙ্গে বিনিময়ের কথা ভাবছে চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ। ইতোমধ্যেই ভারতসহ পার্শ্ববর্তী দেশের বেশ কয়েকটি চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে এ বিষয়ে আলোচনাও হয়েছে। এ ক্ষেত্রে আমাদের যেসব প্রাণীর সংখ্যা বেশি আছে সেগুলো তাদের দেব, বিনিময়ে আমাদের যেসব প্রাণী কম আছে সেগুলো আনব। যেমন বর্তমানে আমাদের গন্ডারের সংখ্যা মাত্র একটি। এখন আমরা আমাদের দুটি রয়েল বেঙ্গল টাইগারের বিনিময়ে একটা বা দুইটা গন্ডার আনতে পারি। এমন বিনিময় পদ্ধতি নিয়ে বিভিন্ন দেশের সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলোচনা চলমান আছে। এ ছাড়াও সরকার অনুমদিত দেশের বিভিন্ন স্থানে যেসব চিড়িয়াখানা রয়েছে এবং সাফারি পার্কগুলোতেও কিছু প্রাণী দেওয়ার প্রক্রিয়া চলমান আছে।’
তিনি বলেন, প্রতি সপ্তাহেই প্রায় ৩ থেকে ৪টি হরিণ বাচ্চা দিচ্ছে। অথচ প্রত্যেকটি প্রাণীর জন্যই খাবার ও স্থানের নির্দিষ্ট বরাদ্দ রয়েছে। যদি এর বাইরে বাড়তি প্রাণী থাকে তা তাদের স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। এ ছাড়াও অপর্যাপ্ত জায়গা ও খাবারের প্রতিযোগিতার কারণে এসব প্রাণীর শরীরে বিরূপ প্রভাব ও মৃতু্যহার বাড়ার শঙ্কা রয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চিড়িয়াখানার চিত্রা হারিণের ৩টি শেডে ধারণক্ষমতা রয়েছে প্রায় ১৩০ থেকে ১৫০টি হরিণের, অথচ হরিণের এই সংখ্যা বর্তমানে ৩০০ ছাড়িয়েছে। যদিও গত দশ মাসে ৪৫টিরও বেশি চিত্রা হরিণ বিক্রি করা হয়েছে।
৫ থেকে ৬টি বাঘের ধারণক্ষমতা থাকলেও বর্তমানে রয়েল বেঙ্গল টাইগার সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১০টিতে। এ ছাড়াও জলহস্তী, জেব্রা, জিরাফ, ময়ূর, ইমু পাখিসহ বেশ কিছু প্রাণী ধারণক্ষমতার প্রায় দ্বিগুণ পরিমাণে রয়েছে।
চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ২০ থেকে ৩০টি ময়ূরের ধারণক্ষমতা ও খাবারের বরাদ্দ থাকলেও গত ১০ মাসে প্রায় ১৪০টি ময়ূর বৃদ্ধি পেয়েছে। একইভাবে ৬ থেকে ৭টি জলহস্তীর খাবার ও স্থান থাকলেও বর্তমানে এর সংখ্যা ১৪টি। আর ৪টি জেব্রার ধারণক্ষমতার জায়গায় বর্তমানে জেব্রার সংখ্যা ৭টি। এ ছাড়াও গত এক সপ্তাহে জন্ম নিয়েছে আরও ২টি জেব্রা শাবক। এদিকে জিরাফের ধারণক্ষমতা রয়েছে ৫ থেকে ৬টি। অথচ জিরাফের সংখ্যা এখন ১০টি।
এ বিষয়ে জাতীয় চিড়িয়াখানার পরিচালক ডা. মো. আবদুল লতীফ জানান, গত এক বছর ধরে প্রায় সব ধরনের বন্যপ্রাণীর প্রজনন বৃদ্ধিতে বেশ কিছু পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। পর্যাপ্ত ও মানসম্পন্ন খাবার বিতরণ, প্রাণীদের নিয়মিত মেডিকেল চেকআপ, ভ্যাকসিনেশন ও প্রাণীদের প্রজননের পরিবেশ তৈরি করাসহ সদ্য জন্ম নেওয়া প্রাণীদের নিয়ম মেনে পরিচর্চা করা হয়। এ ছাড়াও করোনায় চিড়িয়াখানায় দর্শনার্থী না থাকায় প্রাণী প্রজননে সহায়ক ভূমিকা পালন করেছে।