• শনিবার, ০৪ মে ২০২৪, ১২:৪০ পূর্বাহ্ন |
  • Bangla Version
নিউজ হেডলাইন :
করোনা শনাক্তের হার ১৫ শতাংশের বেশি, মৃত্যু ১ Отзыв о Pinup Wager в мае 2024 года Where To Find Iranian Wives অভয়নগরে বিলুপ্তির পথে গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী ঢেঁকি অভয়নগরে ছাত্র ছাত্রী প্রদর্শনী ক্লাস সবক ও পাগড়ি প্রদান Plinko 2024: Guía para juegos Plinko gratuitos Vietnamese Vs. Thai Mail Order Brides: A Comparative Analysis যশোরের বায়েজীদ হাসান হত্যা মামলার ২ জন পলাতক আসামীকে ঢাকা ভাটারা থানা এলাকা হতে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব-৬, যশোর ও র‌্যাব-১ গোপালগঞ্জে চাঞ্চল্যকর ৬ বছরের শিশু ধর্ষণ মামলার আসামি সবুজ’কে পটুয়াখালী হতে গ্রেফতার করেছে র‍্যাব-৬ Mostbet App Download For Android Apk And Ios 2023 Mostbet 314 Casino Azərbaycanda Bukmeker Kontoru Mostbet Azerbaycan Yukle Android Os Apk Və Ios App-d Mostbet Az-90 Kazino Azerbaycan ən Yüksək Bukmeyker Rəsmi Sa 0898520760 ফের আগ্রাসনের চেষ্টা করলে ইসরায়েলকে শক্তিশালী জবাবের হুঁশিয়ার ইরানের গাজায় এক গণকবরেই মিলল ৩০০ লাশ ইসরায়েলের গভীরে হামলার দাবি হিজবুল্লাহর

সন্তানকে বুকে আঁকড়ে প্রাণ বাঁচাতে ছোটাছুটি

বিশেষ প্রতিনিধি গুরুতর অসুস্থ ও আশঙ্কাজনক অবস্থায় থাকা সাত শিশু চিকিৎসাধীন ছিল বাংলাদেশ শিশু হাসপাতালের বি-ব্লকের পাঁচতলায় হৃদরোগ বিভাগের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ)। গতকাল শুক্রবার দুপুরে হঠাৎ সেখানে আগুনের সূত্রপাত হয়। অল্প সময়েই আগুন ভয়াবহ আকার ধারণ করে। আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে পুরো হাসপাতালে। নিরাপদ আশ্রয়ের সন্ধানে শুরু হয় ছোটাছুটি। প্রিয় সন্তানকে বুকে আঁকড়ে ধরে পড়িমরি করে হাসপাতালের সামনের খোলা জায়গায় প্রখর রোদের মধ্যে ঠাঁই নেন সবাই।

খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের পাঁচটি ইউনিট গিয়ে এক ঘণ্টার চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। তবে ততক্ষণে পুড়ে যায় কার্ডিয়াক আইসিইউ, কার্ডিয়াক এইচডিইউ ও পোস্ট ক্যাথ আইসিইউ ইউনিট। মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে আশপাশের বেশ কয়েকটি কক্ষ।

রাজধানীর আগারগাঁওয়ের এই হাসপাতালে অগ্নিকাণ্ডে কেউ হতাহত না হলেও চিকিৎসা কার্যক্রম বন্ধ থাকে দীর্ঘ সময়। এতে আগুন আতঙ্কে হাসপাতালের বাইরে অবস্থান নেওয়া রোগীর স্বজন দুশ্চিন্তায় পড়েন। তাদের মধ্যে গুরুতর অসুস্থদের পরে পর্যায়ক্রমে বিভিন্ন ইউনিটে স্থানান্তর করে কর্তৃপক্ষ। তবে বিপর্যস্ত পরিস্থিতিতে সবাইকে উপযুক্ত সেবার আওতায় আনা যায়নি। কার্ডিয়াক আইসিইউতে থাকা শিশুকে পরে আইসিইউতে নেওয়া হলেও লাইফ সাপোর্ট দেওয়া যায়নি।এদিকে, অগ্নিকাণ্ডের কারণ নিশ্চিত না হলেও প্রত্যক্ষদর্শী ও ফায়ার সার্ভিস কর্মীদের ধারণা, আইসিইউর শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্র (এসি) থেকেই আগুনের সূত্রপাত। ঘটনাটি তদন্তের জন্য পাঁচ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করেছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। তিন কার্যদিবসের মধ্যে কমিটিকে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। ঘটনার পর ফায়ার সার্ভিস জানায়, হাসপাতালটিতে আগুন নেভানোর পর্যাপ্ত সরঞ্জাম ছিল না। সেই সঙ্গে আইসিইউতে রোগীদের জন্য অক্সিজেন সরবরাহের ব্যবস্থা থাকায় তা আগুনের তীব্রতা বাড়িয়ে দেয়।

সন্তান নিয়ে উৎকণ্ঠায় স্বজন

গতকাল সরেজমিন দেখা যায়, কার্ডিয়াক আইসিইউর বিশেষায়িত শয্যাসহ সব সরঞ্জাম পুড়ে গেছে। সেখানকার শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্রটি মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত অবস্থায় এক পাশে হেলে পড়েছে। অক্সিজেন সরবরাহের সরঞ্জামসহ কিছুই অক্ষত নেই। পাশের কক্ষগুলোর চিত্রও একই। অন্যদিকে, প্রচণ্ড গরমের মধ্যে অসুস্থ সন্তান নিয়ে হাসপাতালের সামনের খোলা জায়গায় উৎকণ্ঠায় সময় কাটাচ্ছেন স্বজন। অসুস্থ শিশুদের কেউ কেউ বাবা বা মায়ের কোলে নেতিয়ে পড়ে। স্বজনের কেউ কেউ আতঙ্কে চিৎকার করে কাঁদছিলেন। কেউ আবার চেষ্টা চালাচ্ছিলেন গুরুতর অসুস্থ সন্তানকে অন্য হাসপাতালে নেওয়ার। আইসিইউতে থাকা শিশুকে নিয়ে দুই ঘণ্টা অন্য হাসপাতালে থেকে আবারও ফিরে আসা স্বজনকেও পাওয়া যায়।

শিশু হাসপাতালের বি-ব্লকের কার্ডিয়াক আইসিইউতে চিকিৎসাধীন ছিল তিন বছরের আব্রাহাম হোসেন। তার নানি সালমা বেগম বলেন, আগুন লাগার সময় আমি আইসিইউর ভেতরে ছিলাম। দ্রুত নাতিকে নিয়ে বাইরে বেরিয়ে আসি। তখন এই হাসপাতালে আইসিইউর ব্যবস্থা না হওয়ায় মগবাজারের আদ্-দ্বীন হাসপাতালে যাই। তবে দুই ঘণ্টা পর আবার তাকে এই হাসপাতালের আইসিইউতে নিয়ে আসা হয়েছে। অসুস্থ শিশুকে নিয়ে ছোটাছুটির কারণে নতুন করে শ্বাসকষ্ট দেখা দিয়েছে। আগুন লাগার পরপরই হাসপাতালে বিদ্যুৎ ও অক্সিজেন সরবরাহ বন্ধ করে দেওয়া হয়। বিকেল সাড়ে ৫টা পর্যন্ত তা চালু হয়নি। অক্সিজেন বন্ধ থাকায় অন্য তলার আইসিইউ চালু হয়নি।

একই ব্লকের তিনতলার আইসিইউতে ছিল পাঁচ বছর বয়সী শিশু আরাফ হোসেন। সে ব্লাড ক্যান্সার ও নিউমোনিয়া নিয়ে ১৮ দিন ধরে ভর্তি। শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় তাকে লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়েছিল। আগুনের কারণে তাকে হাসপাতাল থেকে বের করে এক ঘণ্টা বাইরে রাখতে হয়। পরে তাকে এনআইসিইউতে নেওয়া হয়েছে। তবে লাইফ সাপোর্ট সুবিধা দিতে পারেনি হাসপাতালে কর্তৃপক্ষ। হতাশা নিয়ে আরাফের মা দিলরুবা ইয়াসমিন বলেন, লাইফ সাপোর্ট থাকা সন্তানকে এনআইসিইউতে রাখা হয়েছে। তার অবস্থা জটিল, বাঁচাতে পারব কিনা জানি না।

তিন ঘণ্টা পর সেবা চালু

হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানায়, বি-ব্লকে ১৯৪টি শয্যা রয়েছে। আগুন লাগার সময় ১৭৩ জন চিকিৎসাধীন ছিল। পাঁচ তলা ছাড়া সব বিভাগে তিন ঘণ্টা পর সেবা চালু করা হয়েছে। জরুরি বিভাগে অক্সিজেন সরবরাহের মাধ্যমে চিকিৎসা চলছে। ধীরে ধীরে সব রোগীকে আবারও চিকিৎসার আওতায় আনা হয়েছে। কেন্দ্রীয় অক্সিজেন ও বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক করতে কাজ করছেন হাসপাতালের প্রকৌশলী, ডিপিডিসি ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তারা। একটি একটি করে ওয়ার্ডে বিদ্যুৎ ও অক্সিজেন সরবরাহ চালু করা হচ্ছে। 

আগুন নেভানোর সরঞ্জাম পর্যাপ্ত ছিল না

ফায়ার সার্ভিস সূত্র জানায়, দুপুর ১টা ৪৭ মিনিটে আগুন লাগার খবর পায় ফায়ার সার্ভিস। পাঁচটি ইউনিটের চেষ্টায় দুপুর ২টা ৩৯ মিনিটে আগুন নেভানো সম্ভব হয়। পরে মোহাম্মদপুর ফায়ার স্টেশনের জ্যেষ্ঠ স্টেশন কর্মকর্তা মোহাম্মদ ফখরুদ্দিন বলেন, হাসপাতালটিতে ফায়ার এক্সটিংগুইশার ছাড়া আগুন নেভানোর তেমন কিছুই ছিল না। ফলে আগুন নেভাতে সময় বেশি লেগেছে। পানির ব্যবস্থা পর্যাপ্ত না থাকায় পাশের জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের রিজার্ভ থেকে পানি আনা হয়। পর্যাপ্ত ফায়ার হাইড্রেন্টও ছিল না। আগুন লাগার পরপরই আইসিইউতে থাকা সবাইকে সরিয়ে নেয় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ও স্বজনরা।

পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি

আগুন নেভানোর পর সংবাদ সম্মেলনে শিশু হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ডা. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, প্রাথমিকভাবে ধারণা করছি, আইসিইউর একটি এসি থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়। তবে আমরা তদন্ত করব। এ জন্য পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। তিন দিনের মধ্যে তারা প্রতিবেদন জমা দেবে।

গত মঙ্গলবারও হাসপাতালে আগুন লেগেছিল। এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি বলেন, পাঁচ নম্বর ওয়ার্ডের আগুন বড় কিছু ছিল না। খাবার গরম করার চুলা থেকে রোগীর স্বজনের কাপড়ে আগুন লেগেছিল। নার্সসহ স্টাফদের চেষ্টায় সঙ্গে সঙ্গে তা নেভানো সম্ভব হয়।

আগুন নেভানোর প্রস্তুতিতে ঘটতি ছিল কিনা– জানতে চাইলে পরিচালক বলেন, হাসপাতালে দুই শতাধিক এসি রয়েছে। শীত শেষে গরম আসার সঙ্গে সঙ্গে প্রতিটি এসি সার্ভিসিং করা হয়। সেদিন আমাদের নার্সরা ফায়ার এক্সটিংগুইশার দিয়ে আগুন নিভিয়েছেন। তবে ধোঁয়া বেশি হওয়ার কারণে কেউ যেতে পারেনি। এ কারণে আমাদের ফায়ার এক্সটিংগুইশারগুলো ব্যবহার করতে পারিনি।

কারও কোনো ক্ষতি হয়নি: স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী

অগ্নিকাণ্ডের পর হাসপাতাল পরিদর্শনে যান স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী রোকেয়া সুলতানা। পরিস্থিতি ঘুরে দেখার পর তিনি সাংবাদিকদের জানান, চিকিৎসাধীন শিশুদের অন্য হাসপাতালে সরিয়ে নেওয়ায় কারও কোনো ক্ষতি হয়নি। ওই সময় কার্ডিয়াক আইসিইউতে থাকা সাত রোগীকে এনআইসিইউতে স্থানান্তর করা হয়। সেখানে সব রোগী ভালো আছে। আগুন লাগার এক ঘণ্টা পর এনআইসিইউতে এক শিশুর মৃত্যু হয়। তবে সেই মৃত্যুর সঙ্গে আগুনের কোনো সম্পর্ক নেই।

এর আগে আগুন নেভানোর কাজে যোগ দেওয়া নৌবাহিনীর ঘাঁটি হাজী মহসিনের লেফটেন্যান্ট কমান্ডার তানবিনুর রহমান সাংবাদিকদের জানান, আইসিইউতে যত রোগী ছিল, তাদের এবং স্বজনের সবাইকে নিরাপদে সরিয়ে নিয়েছেন তারা।

হাসপাতালটির আইসিইউ ইনচার্জ ও নার্সিং সুপারভাইজার চেরি সুপর্ণা বলেন, শুক্রবার জনবল কম থাকায় শিশুদের সরিয়ে নিতে কিছুটা বিলম্ব হয়। তবে বাচ্চাদের ক্ষতি হয়নি, সবাই ভালো আছে।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published.