মার্চ মাস থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ। এর মধ্যে অল্প কিছু প্রতিষ্ঠান অনলাইনে ক্লাস নেয়। বিনিময়ে বিদ্যালয় থেকে মোবাইলে ম্যাসেজের মাধ্যমে অভিভাবকদের কাছে এপ্রিল, মে এবং জুনের পুরো টিউশন ফি আদায়ে তাগাদা দিয়ে চলেছে। বিদ্যালয়গুলো বলেছে, তাদের তহবিলে খুব দ্রুত শেষ হয়ে যাচ্ছে। শিক্ষক ও অন্যান্য কর্মচারীদের বেতন দিতে তাদের অর্থের প্রয়োজন।অন্যদিকে, করোনাভাইরাস মহামারির প্রভাবে অনেক অভিভাবক চাকরি হারিয়েছেন কিংবা চাকরি থাকলেও অনেকের বেতন কাটা হচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে দৈনন্দিন খরচ মেটানোই যেখানে কঠিন হয়ে পরছে সেখানে বাড়তি দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে সন্তানদের টিউশন ফি।
এ বিষয়ে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের (ডিএসএইচই) পরিচালক বেলাল হোসেন মিডিয়াকে বলেন, অনলাইনে ক্লাস না নেওয়া সত্ত্বেও বিদ্যালয়গুলো টিউশন ফি চাইছে, এমন কোনো অভিযোগ তাদের কাছে নেই। তবে, গত শনিবার রাজধানীতে একটি অনলাইন সভায় শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি বলেন, বিদ্যালয় এবং অভিভাবক উভয়কেই মানবিকভাবে কাজ করতে হবে। তিনি বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে কিস্তিতে ফি নিতে এবং সম্ভব হলে টিউশন ফি ছাড় দেওয়ার আহ্বান জানান। অভিভাবকদের তিনি অনুরোধ করেন সম্ভব হলে যেন ফি পরিশোধ করেন যাতে করে শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন দেওয়া সম্ভব হয়। তিনি বলেন, ‘যেসব প্রতিষ্ঠানের আর্থিক অবস্থা ভালো না, তারা ঋণ চাইতে পারে। আমরা এ ক্ষেত্রে তাদের সহায়তা করতে পারি।’
খোজ নিয়ে দেখা যায়, রাজধানীর নামীদামী স্কুলগুলোর মধ্যে সাউথ পয়েন্ট স্কুল অ্যান্ড কলেজ, আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজ, ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজ, শামসুল হক খান স্কুল অ্যান্ড কলেজ কর্তৃপক্ষ এই ফি আদায় করছে। সাউথ পয়েন্ট স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ হামিদা আলী এবং ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ফৌগিয়া বলেন, তাদের শিক্ষক ও কর্মচারীদের বেতন দেওয়ার জন্য তাদের টিউশন ফি প্রয়োজন। দুজনেই বলেন যে বিদ্যালয়ের খরচ মেটাতে তাদের আয়ের একমাত্র উত্স টিউশন ফি। ইষ্ট ওয়েস্ট ইন্টারন্যাশনাল স্কুল এবং ডিপিএস এসপিডি (দিল্লি স্কুল)-এর মতো ইংলিশ মিডিয়াম বিদ্যালয়গুলোও ফি সংগ্রহ করছে।
অভিভাবকদের সংগঠন অভিভাবক ঐক্য ফোরামের সভাপতি জিয়াউল কবির দুলু বলেন, মার্চ থেকে আগস্ট পর্যন্ত টিউশন ফি মওকুফ করার দাবি জানিয়ে তিনি শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনিকে সম্প্রতি একটি চিঠি পাঠিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘মহামারির মধ্যে সকল অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড ব্যাহত হচ্ছে। প্রায় ৮০ শতাংশ অভিভাবক চাকরি হারিয়েছেন বা হারাতে চলেছেন। তারা তাদের পরিবার ও বাড়ির খরচ মেটাতেই হিমশিম খাচ্ছেন। এমন পরিস্থিতিতে টিউশন ফি প্রদান করা তাদের পক্ষে সম্ভব নয়।’
করোনা-কারনে চলমান এই সংকট এটা শুধুমাত্র বাংলাদেশের সংকট নয়; এটা একটা বৈশ্বিক সংকট। শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যত যাতে কোনভাবে ক্ষতিগ্রস্থ না হয় তার জন্য সরকারকেই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে সরকারি প্রনোদনা বা বিশেষ সূদমুক্ত তহবিল সরবরাহ করে এই সমস্যার সমাধান করা যেতে পারে।