প্রতিবছর বাংলাদেশ থেকে বহু মানুষ ব্যবসা, চিকিৎসা, ভ্রমণ, অভিবাসী ও শ্রমিক হিসেবে পৃথিবীর নানা দেশে যায়। করোনাভাইরাস মহামারি শুরুর পর থেকে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ তাদের যাতায়াত প্রায় বন্ধ রয়েছে। প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) তথ্য অনুযায়ী, গত চার দশকে এক কোটি বাংলাদেশি চাকরি নিয়ে বিদেশে গেছেন। তারা প্রতি বছর ১৪ থেকে ১৫ বিলিয়ন ডলার প্রবাসী আয় পাঠাচ্ছেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত বছরও দেশে এক হাজার ৫৫৮ কোটি ডলারের প্রবাসী আয় এসেছে। প্রবাসীরা প্রতি বছর যে টাকা পাঠাচ্ছেন, সেটা মোট বিদেশি ঋণ বা বিদেশি বিদেশি বিনিয়োগের চেয়ে সাত আটগুণ বেশি।
আমরা দেখি প্রতিদিন এয়ারপোর্ট দিয়ে বিদেশে যাচ্ছে অনেক লোক, আরেক দিকে কিন্তু প্রতিদিন আট থেকে দশজন প্রবাসীর লাশও আসছে। কফিনে করে কার্গো গেট দিয়ে আসে বলে অনেকেরই সেটা চোখে পড়ে না। এদের কেউ মারা যাচ্ছেন স্ট্রোকে, কেউ বা হার্ট অ্যাটাকে। ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডের তথ্য অনুযায়ী, গত এক যুগে প্রায় ৪০ হাজার হাজার প্রবাসীর লাশ এসেছে। এদের অনেকেই ২৮ কিংবা ৩০ বছরেও মারা গেছেন। এছাড়াও, গত সাত বছরে অন্তত দুই লাখ প্রবাসী ফিরে এসেছেন।
এতোকিছুর পরেও কোটি লোকের বিদেশে কর্মসংস্থানের খবরটা নিশ্চয়ই ইতিবাচক। সরকারি-বেসরকারি তথ্য অনুযায়ী, এখন প্রতিবছর যে প্রবাসী আয় আসছে, সেটি মোট জাতীয় আয়ের প্রায় দশ শতাংশ। বিশ্বব্যাংক বলছে, এই ধারা অব্যাহত থাকলে ২০২১ সালেই মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হবে বাংলাদেশ। কিন্তু করোণা দুর্যোগের কারণে সেটা সম্ভব না হলেও বাংলাদেশ আবারও ঘুরে দাড়ানোর চেষ্টা করে যাচ্ছে। ইতিমধ্যে অনেক শ্রমিক কাজ হারিয়েছে। বৈশ্বিক করোনা দূর্যোগের কারণে কর্মচ্যুত ও কর্ম হারানোদের সংখ্যা জ্যামিতিক আকারে বৃদ্ধিপেতে পারে। ইতিমধ্যে যে সমস্ত শ্রমিক দেশে ফিরে এসেছে তারা এখন তাদের কর্মস্থলে যোগ দিতে পারছে না। আবার অনেকেই তাদের কাজ হারিয়ে দেশেই বিকল্প কর্মসংস্থানের চেষ্টা কর চলেছেন। এই দক্ষ শ্রমিকরা এই কিছুদিন আগেই দেশে এসেছন। ক্যাপশানের ছবির রিফাত ও স্বপন হোসেন দক্ষ ওয়েল্ডার। তারা বিদেশে যেতে না পেরে এখন দৈনিক হাজিরায় দেশেই অস্থায়ীভাবে কাজ খুঁজে নিচ্ছেন।